যশোরের কেশবপুরের জাহিদ হাসান ও মাহফুজুর রহমান। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে খেলছেন বাংলাদেশ ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড জাতীয় ক্রিকেট দলে। লাল-সবুজের জার্সি পরে দেশকে বিভিন্ন শিরোপা এনে দিতে রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শেষ সাতটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পাঁচটিতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তাঁদের দল। সম্প্রতি শেষ হওয়া ‘বঙ্গবন্ধু চার জাতি ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট টুর্নামেন্ট-২০২২’ এ তাঁরা ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।

জানা গেছে, কেশবপুর পৌরসভার আলতাপোল কলেজপাড়া এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে জাহিদ হাসান ডান পায়ে সমস্যা নিয়েই বেড়ে ওঠেন। ২০১২ সালে কেশবপুর পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও ২০১৪ সালে কেশবপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছেন। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল।

জাহিদ হাসান কেশবপুর ক্রিকেট একাডেমিতে খেলাধুলা করতেন। পরে ২০১৫ সালে বিকেএসপিতে ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট দলে সুযোগ পান। তাঁর অভিষেক হয় ২০১৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সেই থেকে দীর্ঘ ৮ বছর খেলছেন জাতীয় দলে। তিনি ডান হাতি স্পিন বোলার। বর্তমানে জাতীয় দলে খেলাধুলার পাশাপাশি জাহিদ হাসান কেশবপুর ক্রিকেট একাডেমির সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করছেন।

অপরদিকে কেশবপুর পৌরসভার আলতাপোল কলেজপাড়ার আতিয়ার রহমানের ছেলে মাহফুজুর রহমান জন্মের ৩ মাস পরে ডান হাত পুড়ে যায়। সেই থেকে তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন। তবে প্রতিবন্ধকতাকে দূরে ঠেলে দিয়ে ২০১৭ সালে বিকেএসপিতে ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট দলে জায়গা করে নেন।

মাহফুজুর রহমান ২০১৮ সালে কেশবপুর পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও ২০২০ সালে কেশবপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। তিনি এই ক্রিকেট দলে অলরাউন্ডার হিসেবে খেলছেন। মাহফুজুর রহমান বাম হাতি স্পিন বোলার এবং ডানহাতি ব্যাটার। ২০১৭ সালে ভারতের বিপক্ষে তাঁর দলে অভিষেক হয়।

ক্রিকেটার জাহিদ হাসান বলেন, ‘খেলাধুলা করার শুরু থেকেই আমি পরিবার ও স্থানীয় কলেজ পাড়ার বড় ভাইদের অনুপ্রেরণা পেয়েছি। সমাজের কিছু মানুষ প্রথমে বিভিন্ন রকম কথা বললেও সকল প্রতিবন্ধকতা দূরে ঠেলে দিয়ে খেলার মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করতে সফল হয়েছি।’

ক্রিকেটার মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘নানা প্রতিবন্ধকতার ভেতর দিয়ে আজ এ পর্যায়ে আসতে পেরেছি। অনেকে এখন বাহবা দিয়ে অনুপ্রাণিত করছেন। মাঠে খেলার সময় নিজেদের সেরাটা দিয়ে দেশের নামটা উজ্জ্বল করাই থাকে আমাদের লক্ষ্য।’

কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, ‘ক্রিকেটার জাহিদ হাসান ও মাহফুজুর রহমানকে ক্রীড়া দিবসে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা খেলার মাধ্যমে দেশের সুনাম বয়ে আনছেন।’