মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
২৫ মে গাজীপুর, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের জন্য এটি হবে সবচেয়ে বড় এবং কঠিন দায়িত্ব পালন। এই দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশন তার সক্ষমতার প্রমাণ রাখার মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করার আস্থা অর্জন করতে কতটা সক্ষম, সেটি দেশবাসী প্রত্যক্ষ করতে পারবে।
নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এরই মধ্যে উপনির্বাচন, দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং বেশ কিছু স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছে। এক-দুটি নির্বাচনের ব্যাপারে কমিশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন থাকলেও বাকি সব কটি নির্বাচনই কমিশন অনেকটা প্রভাবমুক্তভাবেই সম্পন্ন করতে পেরেছে। যদিও কোনো কোনো আসনে ভোটার উপস্থিতি কম নিয়ে অনেকের মধ্যে একধরনের বিতর্ক রয়েছে। তার পরও নির্বাচনগুলো নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দিক থেকে বড় ধরনের কোনো ত্রুটি পরিদৃষ্ট হয়নি।
নির্বাচনগুলোতে যেহেতু বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি, তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও উত্তেজনা যেভাবে আমাদের ভোটাররা দেখে অভ্যস্ত হচ্ছেন, সে রকমটি এসব ক্ষেত্রে উপস্থিত ছিল না। তবে এসব নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পূর্ববর্তী কমিশনের চেয়ে বর্তমান কমিশনের আন্তরিকতা, উদ্যোগ ও সক্ষমতার প্রমাণ মেলে ধরার সম্ভাবনা বোঝা গেছে। পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি দলগতভাবে অংশ না নিলেও সব সিটি করপোরেশনেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকছে। সুতরাং পাঁচ সিটি নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতা, উত্তেজনা এবং বিপুল ভোটারের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে—এমনটি আগাম ধারণা করা যায়। শুধু তা-ই নয়, কোনো কোনো সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফলে সেই সব সিটি করপোরেশনে উত্তেজনা বেশি থাকবে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার ১১৮ ধারা ছয়টি উপধারাসহ ২০২২ সালে জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছে। আগেকার সব কমিশনই ক্ষমতাসীন সরকার নিয়োগ দিত, যা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা ছিল না। অনেক কমিশন রিমোট কন্ট্রোলে পরিচালিত হওয়ার অভিযোগও রয়েছে। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে পরাজিতদের তথ্য-প্রমাণহীন অভিযোগ থাকলেও কমিশনের ভূমিকা নিয়ে ভোটার, পর্যবেক্ষক ও আন্তর্জাতিক কোনো মহলের অভিযোগ ছিল না।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন যেহেতু সংবিধানের ১১৮ (৪) ‘নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবেন’ ধারা সংরক্ষণ করে, তাই তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিজেদের পরিকল্পনা ও সক্ষমতা বাস্তবায়নের রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা সম্পূর্ণরূপে প্রয়োগ করতে পারে। এ ছাড়া নির্বাচনী আচরণবিধি প্রয়োগের ক্ষেত্রেও কমিশনের রয়েছে স্বাধীনভাবে বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা। নির্বাচন কমিশনকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কোন নির্বাচনে রাষ্ট্রের কোন কোন বাহিনী, প্রশাসন, সরকারি, বেসরকারি ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে কীভাবে কাজে লাগানো হবে, সেটি নির্ধারণের।
নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু থেকেই কমিশনকে আইন, বিধিবিধান সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর জন্য সমানভাবে প্রয়োগ করার বিষয়টির প্রতি মনোযোগী হতে হবে। নির্বাচনের দিন ভোটারদের ভোটদানে কোনো ধরনের বাধাদানের চেষ্টা কেউ করলে তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে প্রতিহত করে ভোটের পরিবেশ সবার জন্য ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে সমানভাবে শান্তিপূর্ণ রাখতে হবে। গণনা ও ফলাফল প্রকাশে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, কোনো ধরনের অনিয়মকে প্রশ্রয় না দিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত অনেকগুলো নির্বাচন ও উপনির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি কম হলেও আচরণবিধি ও অন্যান্য আইন বাস্তবায়নে কমিশনের তৎপরতা লক্ষণীয় ছিল।
কমিশন যত বেশি আইনের প্রতি দৃঢ়তা প্রদর্শন করবে, তত বেশি তাদের প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি হবে এবং প্রার্থী ও তাঁদের উচ্ছৃঙ্খল সমর্থকেরা ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ নষ্ট করতে সাহস পাবে না। কমিশনের সামান্যতম দুর্বলতা ও পক্ষপাতিত্ব গোটা পরিবেশকেই নষ্ট করে দিতে পারে। আমাদের দেশে এমনিতেই নির্বাচনে প্রার্থী এবং প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে অনেকেই আইনশৃঙ্খলা মেনে চলতে চান না। কিন্তু আইন যখন কঠোরভাবে প্রতিপালিত হয়, তখন ভয় পাওয়ারও অভ্যাস রয়েছে। সে কারণে নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সম্পন্ন করা মোটেও সহজ কাজ নয়।
পাঁচ সিটি করপোরেশনে এবার ইভিএমের মাধ্যমে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ইভিএমের অনেক সুবিধা যেমন আছে, দুই-একটি অসুবিধাও রয়েছে। বিশেষ করে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে কর্মজীবী, বয়স্ক পুরুষ ও নারীদের ছাপ মেলানোতে কোথাও কোথাও জটিলতা দেখা যায়, কোথাও কোথাও দেরি হয়। এর ফলে ভোট গ্রহণের স্বাভাবিক গতিতে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে, এতে অনেকের মনেই বিরক্তির উদ্রেক হয়। তবে আগে থেকেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ভোটদান পদ্ধতি ভোটারদের হাতে-কলমে শেখালে কিংবা ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রের লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদের ডামি ইভিএমে ভোট দেওয়ার নিয়ম বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ভোটদানে কোনো সমস্যা দেখা না-ও দিতে পারে। আমরা জানি না নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতিকাজ কতটা গুছিয়ে আনতে পেরেছে। তবে ওই পাঁচ সিটি করপোরেশনে এখন থেকেই নজরদারি বৃদ্ধি করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল এবং অন্যান্য প্রস্তুতিমূলক কাজকে নির্বাচনের নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী প্রস্তুত করার কোনো বিকল্প নির্বাচন কমিশনের হাতে নেই।
বর্তমান সরকার যেহেতু সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ সংযোজনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করেছে, তাই কমিশনকে তাদের ওপর মানুষের যে প্রত্যাশা, তা পূরণে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হতে হবে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবে—এমনটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বেশ কিছু বক্তব্যেও উচ্চারিত হয়েছে। এর প্রতিফলন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঘটবে বলে সবাই আশা করছে। পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কমিশন নতুন কোনো বিতর্কের জন্ম দেবে না, এটাও জনপ্রত্যাশা। পাঁচ সিটি নির্বাচন বর্তমান ইসির জন্য একটি টেস্ট কেস। এই পরীক্ষায় কমিশনকে উত্তীর্ণ হতে হবে। সরকারের আচরণও মানুষের গভীর পর্যবেক্ষণে থাকবে। এ বিষয়ে মনে হয় না সরকার বা ইসিকে অধিক কোনো পরামর্শ দেওয়ার প্রয়োজন আছে। পাঁচ সিটি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। বিদেশিদের কাছেও যাঁরা প্রতিনিয়ত নানা রকম অভিযোগ করছেন, তাঁরাও আর অভিযোগ জানানোর ভিত্তি খুঁজে পাবেন না।
অতীতের অনেক নির্বাচনেরই গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। সেই অভিজ্ঞতা কারও জন্যই সুখকর নয়। সামনের দিনগুলোতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সব অংশীজনেরই প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। বর্তমানে সংবিধানে যে ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের রয়েছে, তা যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে দেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাত্রাপথে শুভ সূচনা করবে, এমনটি আশা করা যেতে পারে। নির্বাচন শুধু গ্রহণযোগ্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও অংশগ্রহণমূলক হলেই চলবে না, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের কোনো ব্যত্যয়ই কারোরই প্রশ্রয় দেওয়া উচিত হবে না। কারণ, এসবের মাধ্যমেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার আদর্শিক ভিত্তি খুঁজে পাবে।
লেখক: অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট
২৫ মে গাজীপুর, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের জন্য এটি হবে সবচেয়ে বড় এবং কঠিন দায়িত্ব পালন। এই দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশন তার সক্ষমতার প্রমাণ রাখার মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করার আস্থা অর্জন করতে কতটা সক্ষম, সেটি দেশবাসী প্রত্যক্ষ করতে পারবে।
নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এরই মধ্যে উপনির্বাচন, দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং বেশ কিছু স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছে। এক-দুটি নির্বাচনের ব্যাপারে কমিশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন থাকলেও বাকি সব কটি নির্বাচনই কমিশন অনেকটা প্রভাবমুক্তভাবেই সম্পন্ন করতে পেরেছে। যদিও কোনো কোনো আসনে ভোটার উপস্থিতি কম নিয়ে অনেকের মধ্যে একধরনের বিতর্ক রয়েছে। তার পরও নির্বাচনগুলো নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দিক থেকে বড় ধরনের কোনো ত্রুটি পরিদৃষ্ট হয়নি।
নির্বাচনগুলোতে যেহেতু বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি, তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও উত্তেজনা যেভাবে আমাদের ভোটাররা দেখে অভ্যস্ত হচ্ছেন, সে রকমটি এসব ক্ষেত্রে উপস্থিত ছিল না। তবে এসব নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পূর্ববর্তী কমিশনের চেয়ে বর্তমান কমিশনের আন্তরিকতা, উদ্যোগ ও সক্ষমতার প্রমাণ মেলে ধরার সম্ভাবনা বোঝা গেছে। পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি দলগতভাবে অংশ না নিলেও সব সিটি করপোরেশনেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকছে। সুতরাং পাঁচ সিটি নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতা, উত্তেজনা এবং বিপুল ভোটারের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে—এমনটি আগাম ধারণা করা যায়। শুধু তা-ই নয়, কোনো কোনো সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফলে সেই সব সিটি করপোরেশনে উত্তেজনা বেশি থাকবে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার ১১৮ ধারা ছয়টি উপধারাসহ ২০২২ সালে জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছে। আগেকার সব কমিশনই ক্ষমতাসীন সরকার নিয়োগ দিত, যা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা ছিল না। অনেক কমিশন রিমোট কন্ট্রোলে পরিচালিত হওয়ার অভিযোগও রয়েছে। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে পরাজিতদের তথ্য-প্রমাণহীন অভিযোগ থাকলেও কমিশনের ভূমিকা নিয়ে ভোটার, পর্যবেক্ষক ও আন্তর্জাতিক কোনো মহলের অভিযোগ ছিল না।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন যেহেতু সংবিধানের ১১৮ (৪) ‘নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবেন’ ধারা সংরক্ষণ করে, তাই তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিজেদের পরিকল্পনা ও সক্ষমতা বাস্তবায়নের রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা সম্পূর্ণরূপে প্রয়োগ করতে পারে। এ ছাড়া নির্বাচনী আচরণবিধি প্রয়োগের ক্ষেত্রেও কমিশনের রয়েছে স্বাধীনভাবে বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা। নির্বাচন কমিশনকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কোন নির্বাচনে রাষ্ট্রের কোন কোন বাহিনী, প্রশাসন, সরকারি, বেসরকারি ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে কীভাবে কাজে লাগানো হবে, সেটি নির্ধারণের।
নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু থেকেই কমিশনকে আইন, বিধিবিধান সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর জন্য সমানভাবে প্রয়োগ করার বিষয়টির প্রতি মনোযোগী হতে হবে। নির্বাচনের দিন ভোটারদের ভোটদানে কোনো ধরনের বাধাদানের চেষ্টা কেউ করলে তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে প্রতিহত করে ভোটের পরিবেশ সবার জন্য ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে সমানভাবে শান্তিপূর্ণ রাখতে হবে। গণনা ও ফলাফল প্রকাশে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, কোনো ধরনের অনিয়মকে প্রশ্রয় না দিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত অনেকগুলো নির্বাচন ও উপনির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি কম হলেও আচরণবিধি ও অন্যান্য আইন বাস্তবায়নে কমিশনের তৎপরতা লক্ষণীয় ছিল।
কমিশন যত বেশি আইনের প্রতি দৃঢ়তা প্রদর্শন করবে, তত বেশি তাদের প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি হবে এবং প্রার্থী ও তাঁদের উচ্ছৃঙ্খল সমর্থকেরা ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ নষ্ট করতে সাহস পাবে না। কমিশনের সামান্যতম দুর্বলতা ও পক্ষপাতিত্ব গোটা পরিবেশকেই নষ্ট করে দিতে পারে। আমাদের দেশে এমনিতেই নির্বাচনে প্রার্থী এবং প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে অনেকেই আইনশৃঙ্খলা মেনে চলতে চান না। কিন্তু আইন যখন কঠোরভাবে প্রতিপালিত হয়, তখন ভয় পাওয়ারও অভ্যাস রয়েছে। সে কারণে নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সম্পন্ন করা মোটেও সহজ কাজ নয়।
পাঁচ সিটি করপোরেশনে এবার ইভিএমের মাধ্যমে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ইভিএমের অনেক সুবিধা যেমন আছে, দুই-একটি অসুবিধাও রয়েছে। বিশেষ করে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে কর্মজীবী, বয়স্ক পুরুষ ও নারীদের ছাপ মেলানোতে কোথাও কোথাও জটিলতা দেখা যায়, কোথাও কোথাও দেরি হয়। এর ফলে ভোট গ্রহণের স্বাভাবিক গতিতে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে, এতে অনেকের মনেই বিরক্তির উদ্রেক হয়। তবে আগে থেকেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ভোটদান পদ্ধতি ভোটারদের হাতে-কলমে শেখালে কিংবা ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রের লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদের ডামি ইভিএমে ভোট দেওয়ার নিয়ম বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ভোটদানে কোনো সমস্যা দেখা না-ও দিতে পারে। আমরা জানি না নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতিকাজ কতটা গুছিয়ে আনতে পেরেছে। তবে ওই পাঁচ সিটি করপোরেশনে এখন থেকেই নজরদারি বৃদ্ধি করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল এবং অন্যান্য প্রস্তুতিমূলক কাজকে নির্বাচনের নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী প্রস্তুত করার কোনো বিকল্প নির্বাচন কমিশনের হাতে নেই।
বর্তমান সরকার যেহেতু সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ সংযোজনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করেছে, তাই কমিশনকে তাদের ওপর মানুষের যে প্রত্যাশা, তা পূরণে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হতে হবে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবে—এমনটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বেশ কিছু বক্তব্যেও উচ্চারিত হয়েছে। এর প্রতিফলন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঘটবে বলে সবাই আশা করছে। পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কমিশন নতুন কোনো বিতর্কের জন্ম দেবে না, এটাও জনপ্রত্যাশা। পাঁচ সিটি নির্বাচন বর্তমান ইসির জন্য একটি টেস্ট কেস। এই পরীক্ষায় কমিশনকে উত্তীর্ণ হতে হবে। সরকারের আচরণও মানুষের গভীর পর্যবেক্ষণে থাকবে। এ বিষয়ে মনে হয় না সরকার বা ইসিকে অধিক কোনো পরামর্শ দেওয়ার প্রয়োজন আছে। পাঁচ সিটি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। বিদেশিদের কাছেও যাঁরা প্রতিনিয়ত নানা রকম অভিযোগ করছেন, তাঁরাও আর অভিযোগ জানানোর ভিত্তি খুঁজে পাবেন না।
অতীতের অনেক নির্বাচনেরই গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। সেই অভিজ্ঞতা কারও জন্যই সুখকর নয়। সামনের দিনগুলোতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সব অংশীজনেরই প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। বর্তমানে সংবিধানে যে ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের রয়েছে, তা যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে দেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাত্রাপথে শুভ সূচনা করবে, এমনটি আশা করা যেতে পারে। নির্বাচন শুধু গ্রহণযোগ্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও অংশগ্রহণমূলক হলেই চলবে না, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের কোনো ব্যত্যয়ই কারোরই প্রশ্রয় দেওয়া উচিত হবে না। কারণ, এসবের মাধ্যমেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার আদর্শিক ভিত্তি খুঁজে পাবে।
লেখক: অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে