Ajker Patrika

আবেদন করেই চিকিৎসাসেবা

মামুনুর রহমান, টাঙ্গাইল
আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২২, ১৩: ৪৩
আবেদন করেই চিকিৎসাসেবা

টাঙ্গাইলে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। এগুলোর অধিকাংশেরই নেই অনুমোদন। অনেক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক শুধু আবেদন করেই চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসা। দক্ষ জনবল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ছাড়া চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাওয়ায় অনেক সময় ঘটছে দুর্ঘটনা।

সর্বশেষ চলতি মাসেই জেলার ঘাটাইল উপজেলার মেডিকেয়ার ক্লিনিকের অবহেলায় প্রসূতির মৃত বাচ্চা প্রসবের অভিযোগ উঠেছে। জেলাবাসীর অভিযোগ কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই পার পেয়ে যাচ্ছে অভিযুক্তরা। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছেন তাঁরা প্রতিনিয়তই তদারকি করে যাচ্ছে।

জেলা সিভিল সার্জনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় ৮৭টি অনুমোদিত বেসরকারি ক্লিনিক ও ১১৬টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। আর ৯৫টি ক্লিনিক অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে।

তবে এ পরিসংখ্যানের বাইরেও জেলায় আরও শতাধিক অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে বলে জানিয়েছে টাঙ্গাইল বেসরকারি ক্লিনিক মালিক সমিতি।

সদর হাসপাতালের সন্নিকটেও রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রাইভেট ক্লিনিক। কিছু ক্লিনিকের ঠিক থাকলেও বেশির ভাগের চিকিৎসাসেবার মান প্রশ্নবিদ্ধ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই চলছে জেলার বৃহৎ সংখ্যক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশ মোতাবেক ক্লিনিকে আধুনিক যন্ত্রপাতি, দক্ষ টেকনোলজিস্ট ও সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও স্বাস্থ্য বিভাগের নজরদারির অভাবে অধিকাংশ ক্লিনিকেই এসব শর্ত মানা হচ্ছে না।

এদিকে বেশকিছু ক্লিনিকের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় রোগী ও নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে। ৪ মার্চ টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে মেডিকেয়ার ক্লিনিকের অবহেলায় সিজারিয়ান অপারেশনের সময় এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন রোগীর স্বজনেরা।

রোগীর স্বামী মো. শাহআলম জানান, তিনি তাঁর স্ত্রীকে বেলা ১১টায় ক্লিনিকে ভর্তি করান। এরপর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য টাকাও দেন। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই রোগীকে প্রথমে স্যালাইন দেন চিকিৎসক। এরপর তাঁকে জানানো হয় রোগীর সিজার করতে ১৭ হাজার টাকা লাগবে। তিনি রাজি হলেও চিকিৎসক সিজার করতে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। সন্ধ্যার পর সিজার করা চিকিৎসকেরা তাঁকে জানান তিন দিন আগেই মায়ের গর্ভে সন্তান মারা গেছে। পরে এ নিয়ে রোগীর স্বজনেরা ক্ষিপ্ত হলে মালিক ও চিকিৎসকেরা তাঁদের ভুল স্বীকার করেন।

এর আগেও মির্জাপুরের দেওয়ান হাসপাতাল সখীপুরের মডার্ন ডক্টরস হাসপাতালে টাঙ্গাইলের ফাতেমা, মডার্ন হাসপাতালে স্বর্ণা আক্তার ও নুরুল আমীন খান মাল্টিপারপাস মেডিকেল সেন্টারে রিনা বেগম নামের রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সে সময় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে হামলার ঘটনাও ঘটে। পরে বিভিন্নভাবে সেগুলো ম্যানেজ হয়ে যায়।

জেলার সচেতন বাসিন্দাদের অভিযোগ—জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের যথাযথ তদারকির অভাবে মানহীন এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে।

টাঙ্গাইল জেলা সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক তরুন ইউসুফ বলেন, ‘জেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ক্লিনিকে সেবার মান নিয়ে আমরা অসন্তুষ্ট। অসহায় রোগীরা প্রতিনিয়তই ক্ষতিগ্রস্ত হন।’

তিনি আরও জানান, এসব ক্লিনিকে মোটা অঙ্কের টেস্ট ধরিয়ে দেওয়া হয়, তারপর ব্যবস্থাপত্র দেন—এমন অভিযোগ তাঁরা প্রতিনিয়তই শুনে থাকেন। এ বিষয়ে প্রশাসনের আরও দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করেন তাঁরা।

জেলা ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি এম শিবলী সাদিক বলেন, ‘আমরা জেলা ক্লিনিক মালিক সমিতি কর্তৃক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করিয়েছি। এর আগে কয়েকটি ক্লিনিক সিলগালা করিয়েছিলাম। ফাঁকফোকরে কাগজ প্রস্তুত করে পুনরায় ক্লিনিক চালু করেছে।’

টাঙ্গাইল জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘বহু ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেবার মান যতটুকু দরকার, ততটুকু নেই। অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি বন্ধ করেছি। এ ছাড়া জরিমানা করা হয়েছে কয়েকটিতে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত