ইউরিয়ার বেশি দামে ক্ষুব্ধ কৃষক

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২২, ১৫: ০৯

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মনিরামকাজী গ্রামের বাসিন্দা আঙ্গুর মিয়া (৪২)। তিনি সাড়ে চার বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন। এ জন্য এক বস্তা ইউরিয়া সার কিনতে তিনি গত বৃহস্পতিবার ভোরে স্থানীয় চাঁদের বাজারে যান। সেখানে ইউরিয়া সার পেলেও দাম বেশি। এ জন্য তিনি পার্শ্ববর্তী সোনারায় বাজার, স্কুলের বাজার ও ছাইতানতোলা বাজার গেলে একই অবস্থা দেখেন। এসব বাজারে প্রতি বস্তা ইউরিয়া ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ন্যায্যমূল্যে তিনি কোথাও সার পাননি। পরে বেলা ১১টার দিকে এক ডিলারের কাছে গিয়েও ন্যায্যমূল্যে সার না পেয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সরকারনির্ধারিত ১ হাজার ১০০ টাকায় ইউরিয়া সার না পাওয়ার ক্ষোভ আঙ্গুর মিয়ার একার নয়। তাঁর সঙ্গে একমত হয়ে উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের কৃষক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘স্থানীয় মীরগঞ্জ হাটে ডিলারের কাছে গিয়েছিলাম ইউরিয়া আনতে। অন্য সার না নিলে ইউরিয়া বিক্রি করবেন বলে জানান। কিন্তু ওই সব সারের তো দরকার নেই। পরে সোনারায় বাজারে এসে পাঁচ কেজি ইউরিয়া ১৫০ টাকা ও পাঁচ কেজি পটাশ ১৫০ টাকা দিয়ে কিনি।’

কৃষকদের অভিযোগ, অধিকাংশ ডিলার সাধারণ কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করতে নারাজ। নানা অজুহাত দেখিয়ে তাঁদের ফিরিয়ে দেন। গেলেই বলেন সার নেই, সপ্তাহখানেক পরে আসেন। পরে গেলে আবার বলেন, সার শেষ হয়ে গেছে। থাকলেও বলেন, শুধু ইউরিয়া বিক্রি করবেন না।

প্রতি বস্তা ইউরিয়া ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ন্যায্যমূল্যে আঙ্গুর মিয়া কোথাও সার পাননি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক খুচরা সার বিক্রেতা বলেন, ‘ডিলারদের কাছ থেকে বেশি দামে ইউরিয়া সার কিনতে হচ্ছে। আর ডিলাররা কাজটি করছেন খুব কৌশলে। ধরার কোনো উপায় নেই। শুধু আমরা আর ডিলাররা বিষয়টি জানি। আবার বলাও যাবে না আপনাদের। বললে আমাদের আর সার দেবেন না তাঁরা। আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পেটে লাথি দিয়েন না। পারলে রাঘব বোয়ালদের ধরেন।’

বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সারের ডিলার জহুরুল ইসলামের পক্ষে তাঁর ছোট ভাই মো. নজরুল ইসলাম ইউরিয়া সার বিক্রির ক্ষেত্রে খুচরা ব্যবসায়ীদের বেশি প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘কৃষকেরা আর কয় দিন আসে আমাদের ঘরে? বছরজুড়ে যারা আমাদের ঘরে ব্যবসা করেন, তাঁদের সুবিধাটা আমাদের দেখতে হয়।’

কৃষক সেজে সোনারায় ইউনিয়নের বিসিআইসির সারের ডিলার ননী গোপাল সরকারকে মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি বলেন, ‘সার নেই। সপ্তাহখানেক পরে যোগাযোগ করেন।’

তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাশিদুল কবির বলেন, ‘পর্যাপ্ত সার রয়েছে। কোনো সংকট নেই। ডিলার বা খুচরা বিক্রেতা যে-ই হোন, অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদারক করা হচ্ছে।’

উপজেলা কৃষি কার্যালয় জানায়, ১৫ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় ডিলার আছেন ৩৪ জন। খুচরা বিক্রেতা আছেন প্রায় ৩৮০ জন। আগস্ট মাসে ইউরিয়া সার বরাদ্দ হয়েছে ১ হাজার ২১০ মেট্রিক টন। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১ হাজার ১০০ মেট্রিক টন সার উত্তোলন করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ-আল-মারুফ বলেন, ‘সার অতিরিক্ত দামে কেউ বিক্রি করতে পারবে না। প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত