Ajker Patrika

ইটভাটায় পুড়ছে সোনালি শৈশব

আশরাফুল আলম আপন, বদরগঞ্জ
আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২২, ১১: ২১
ইটভাটায় পুড়ছে সোনালি শৈশব

গত বুধবার বেলা আনুমানিক ১টা। রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার চেংমারী এলাকায় বিবিএম নামের একটি ইটভাটায় কাজে ব্যস্ত বেশ কয়েকজন শিশু। এ সময় হাতে ক্যামেরা দেখে ছুটে আসেন এক ব্যক্তি। তাঁর নাম ওয়াজেদ আলী। এসেই শিশুদের ভাটা থেকে পালাতে বলেন তিনি। আদেশ শুনে শিশুরাও দেয় দৌড়। তবু চার শিশুর ছবি ক্যামেরাবন্দী করা যায়। এই চারজনের একজন গোবরবাড়ী গ্রামের শাহিনুরের ছেলে আরিফুল ইসলাম।

১৩ বছর বয়সী আরিফুল দুই বছর আগেও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিল। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় সে। পরিবারে অভাব-অনটন থাকায় এখন ইটভাটায় কাজ করছে। সারা দিন কাজ করে মজুরি পায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।

আরিফুলে সঙ্গে একই ইটভাটায় কাজ করে শিশু তুহিন, শাহাবুল ও নাঈম। তিনজনই বেশির ভাগ সময়ে ইটভাটায় কাজ করে, আর মাঝেমধ্যে স্কুলে যায়।

শুধু এই চারজনই নয়, রংপুরের বদরগঞ্জে এমন অনেক শিশু স্কুল ছেড়ে ইটভাটায় কাজ করছে।

গত বুধবার মধুপুর ইউনিয়নের রাজরামপুর এলাকার এমবিএম এবং এমএমবিসহ ১০টি ইটভাটা ঘুরে অনেক শিশুকে কাজ করতে দেখা গেছে। বেলা ২টায় এমবিএম ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কাঁচা ইট ওল্টানোর কাজ করছে সাত বছর বয়সী দুই শিশু। 

একজনের নাম ওমর ফারুক ও অন্যজন মোস্তাকিম। দুজনই দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১ হাজার কাঁচা ইট ওল্টানোর জন্য তারা পায় মাত্র ১০ টাকা। প্রতিদিন ৩-৪ হাজার ইট ওল্টায় তারা। মূলত কম মজুরিতে শ্রম দেওয়ায় এখানকার ইটভাটার মালিকেরা শিশুদের দিয়ে কাজ করাতে অনেক উৎসাহী।

শিশুদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন কেন –এমন প্রশ্নের উত্তরে বিবিএম ইটভাটার দায়িত্বে থাকা ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘আমরা কাউকে বাড়ি থেকে ডেকে আনি না। তা ছাড়া বিনা পয়সায় কাজও করাই না।’

ওয়াজেদ আলীর মুখে এমন কথা শোনার পর যোগাযোগ করা হয় ভাটার মালিক মোকছেদুল হকের সঙ্গে। তবে তিনি শিশুদের কাজে নেওয়ার কথা প্রথমে অস্বীকার করেন। বলেন, ‘কখনো শিশুকে দিয়ে ভাটায় কাজ করাই না। এটা আপনার (সাংবাদিক) মুখে প্রথম শুনলাম।’ কাজ করার কিছু তথ্যপ্রমাণ তাঁর সামনে তুলে ধরা হলে এই ইটভাটার মালিক কিছুটা হতভম্ব হয়ে বলেন, ‘আমি কয়েক দিন ধরে তেমন ভাটায় আসতে পারিনি। হয়তো এই সুযোগে কিছু শিশু কাজ করেছে। তবে কথা দিচ্ছি আজ থেকে আর একটি শিশুও ভাটায় কাজ করবে না।’

দোষ শুধু ইটভাটার মালিকের নয়। নগদ টাকার লোভে মা-বাবারা এসব শিশুকে ইটভাটায় কাজের অনুমতি দিচ্ছেন। আর এ কাজ করতে গিয়ে অনেকের লেখাপড়ার সমাপ্তি ঘটছে। প্রাথমিকেই ঝরে পড়ছে অনেক শিশু।

বদরগঞ্জ চেংমারী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাছিনুজ্জামান বলেন, ‘ইটভাটায় ইট পোড়ানোর সময়ে অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসে না। এখন ইট তৈরি ও ইট পোড়ানোর মৌসুম। বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র বিদ্যালয়ে আসছে না। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, তারা বিভিন্ন ইটভাটায় কাজ করছে। ভাটার মালিকেরা শিশুদের কাজে না নিলে তারা বিদ্যালয়ে আসত।’

আফতাবগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারী শাহ্ আলম বলেন, ‘শিশুরা ভাটায় কাজ করে নগদ টাকা পায়। এ কারণে অনেকেই বিদ্যালয়ে আসে না। কাজ করে নগদ টাকা হাতে পেয়ে অনেকই বাবা-মায়ের কথাও শোনে না। তারা কম বয়সে আসক্ত হয়ে পড়ছে বিভিন্ন নেশায়।’

বদরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, এখানে ইটভাটার সংখ্যা ৬৪টি। এসব ইটভাটার মধ্যে ১০-১২টির কাগজপত্র ঠিক থাকলেও অন্যগুলো চলছে অবৈধভাবে। এ ছাড়া শিশুশ্রম তো আছেই।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু সাঈদ বলেন, ‘আমি সম্প্রতি এ উপজেলায় যোগদান করেছি। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ। শিশুশ্রমিক দিয়ে যেকোনো কাজ করা দণ্ডনীয় অপরাধ। অচিরেই ইটভাটাগুলোয় অভিযান চালানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জাতীয় নির্বাচন: ভোট কমিটির নেতৃত্বে ডিসি–ইউএনওকে না রাখার চিন্তা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিলুপ্তের সিদ্ধান্ত হয়নি, নাহিদের মন্তব্যের জবাবে উমামা

আ.লীগ নেতার গ্রেপ্তার নিয়ে রাজশাহীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ

মাগুরার শিশুটি এখনো অচেতন, চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

ঈদে পুলিশের সহযোগী ফোর্স হবে বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী, পাবে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত