ক্রিকেট থেকে দূরে থাকার আকুতি!

রানা আব্বাস, দুবাই থেকে
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪: ১৬

‘আমাদের একটা দিন ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে দিন’—সংবাদমাধ্যমকে গতকাল শুক্রবার কাতর কণ্ঠে অনুরোধ করলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। গত কদিনে বাংলাদেশ টিম ডিরেক্টর হিসেবে নিয়মিত কথা বলেছেন। শুধু কথাই বলেননি, শ্রীলঙ্কাকে জবাব দেওয়া তাঁর এক মন্তব্য বেশ আলোড়নও তুলেছে। এশিয়া কাপ থেকে দল বিদায় নেওয়ার পর তিনি ভাষাশূন্য, আপাতত কিছুই বলার নেই।

গতকাল টিম হোটেলে দলের প্রায় সবাই সংবাদমাধ্যম থেকে ‘নিরাপদ দূরত্ব’ বজায় রাখার চেষ্টা করলেন। প্রায় সবাই অনুভূতিশূন্য, চোখেমুখে রাজ্যের হতাশা। সবাই যেন বলতে চাইছেন, ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’। সাকিব আল হাসান অবশ্য সব সময়ই নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণে দক্ষ। গতকাল হোটেল লবিতে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি অধিনায়ককে দেখে ব্যতিক্রম কিছু মনে হয়নি। কিছু বিদেশি দর্শক যখন তাঁকে সান্ত্বনা দিতে এলেন, সাকিব তাঁদের জানালেন, ক্রিকেটে এমনটা হতেই পারে। আজ দলের সঙ্গে দেশে ফেরার কথা সাকিবের। ঢাকা থেকে যাবেন ক্যারিবীয় লিগ খেলতে। সিপিএলের পর তাঁর গন্তব্য নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ।

লবিতে ফাস্ট বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড অপেক্ষা করছিলেন বন্ধু জোনাথান ট্রটের জন্য। সাবেক এই ইংলিশ ক্রিকেটার এখন কাজ করছেন আফগানিস্তান দলের প্রধান কোচ হিসেবে। ট্রটের আফগানিস্তান সবার আগে এশিয়া কাপের সুপার ফোর নিশ্চিত করেছে। আর ডোনাল্ডের বাংলাদেশ টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে সবার আগে। এমনকি হংকংয়েরও আগে। সূচির কারণেই হয়তো হংকংয়ের অপেক্ষা ছিল গতকাল পর্যন্ত। কিন্তু এটা তো অস্বীকার করা যাচ্ছে না, এশিয়া কাপে দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে সবার আগে আরব আমিরাত ছাড়তে হচ্ছে।

বাংলাদেশ এশিয়া কাপে খুব বড় কোনো আশা নিয়ে আসেনি, সে জানাই ছিল। কিন্তু এভাবে জেতার আশা জাগিয়ে স্নায়ুক্ষয়ী মুহূর্তে চাপে ভেঙে পড়ে হেরে যাওয়ার অর্থ কী? গত পরশু দুবাইয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচটা হয়ে রইল আরেকটি হৃদয়ভাঙার গল্প।

হৃদয় ভাঙার পর দলের অনেকেই কাঠগড়ায় উঠছেন। কখনো সাকিবের অধিনায়কত্ব, কখনো মুশফিকুর রহিমের ব্যর্থতা সামনে আসছে। তবে বেশি আলোচিত বাংলাদেশের বিশৃঙ্খল বোলিং। বাংলাদেশ দল ‘এক্সট্রা’ দিয়েছে ১২টি। অর্থাৎ অতিরিক্ত শুধু দুই ওভারই করেনি, অতিরিক্ত ১২টা রানও দিয়েছে। ২০ ওভারের ক্রিকেটে অতিরিক্ত দুই ওভার, ভাবা যায়! 

এর মধ্যে প্রতিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটার কুশল ম্যান্ডিস আউট হয়েও বেঁচে গেছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে নিয়মিত ভালো খেলা কুশলের কাছে গতকাল যখন জানতে চাওয়া হলো, বাংলাদেশ কি তবে আপনার ‘প্রিয়’ প্রতিপক্ষ? প্রশ্নটা শুনে এমন এক হাসি দিলেন, সেটি তির হয়ে বিঁধতে পারে মেহেদী হাসান কিংবা ইবাদত হোসেনের বুকে।

অথচ ইবাদতের সুযোগ ছিল নায়ক হওয়ার। নিজের প্রথম ২ ওভারে ১৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে রীতিমতো কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। পরে লঙ্কান টেল অর্ডারের সামনে তালগোল পাকিয়ে খেলাটাই মুঠো থেকে ফেলে দিলেন। বাংলাদেশ ফাস্ট বোলিং কোচ ডোনাল্ডের ভাষায় এটি ছিল ইবাদতের ‘ক্রিটিক্যাল মিসটেক’। আজকের পত্রিকাকে তিনি বললেন, ‘ভুল হতেই পারে। তবে এটা ক্রিটিক্যাল মিসটেক। এটার বড় মূল্য দিতে হয়েছে। কিন্তু এও মনে রাখতে হবে সে (ইবাদত) তার প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলেছে। শুরুটাও দারুণ করেছিল। পরে ওই পরিস্থিতিতে… যাই হোক।’

শুধু ইবাদতকেই যদি দায়ী করা হয়, তাতে দেশের ভঙ্গুর ক্রিকেট-ব্যবস্থা আড়াল হয়। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশই একমাত্র দল, যাদের সঙ্গে ছায়াসঙ্গী হয়ে ছিলেন তাদের বোর্ডের শীর্ষ কর্তারা। এ নিয়ে ভিনদেশি সাংবাদিকদের যে কী কৌতূহল আর প্রশ্ন। ভালো গেম প্ল্যান, ভালো সুযোগ-সুবিধা, কোটি কোটি টাকা দিয়ে হাই প্রোফাইল কোচ অবশ্যই দরকার আছে। তবে ভালো ফল পেতে আরও অনেক কিছুর পরিবর্তন জরুরি। জাতীয় দলের মতো যদি সমান আলো ফেলা হতো দেশের ক্রিকেটের প্রতিটি স্তরে, তবে ইবাদতরা জানতেন, অভ্যস্ত থাকতেন তীব্র চাপ সামলে কীভাবে ঠান্ডা মাথায় ম্যাচ নিজেদের করে নিতে হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত