বারান্দায় ঘামে ভেজা জ্ঞানার্জন

নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২২, ০৬: ৪৫
আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২২, ১৩: ৪১

শেরপুরের নকলা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের গড়েরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কক্ষসংকটের কারণে পাঠদান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে সমস্যায় পড়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ প্রায় ১২০ শিক্ষার্থী। প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষ না থাকায় শিক্ষকদের পাঠ দান করতে হচ্ছে বিদ্যালয়ের বারান্দায়।

জানা গেছে, গড়েরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এর আগে কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। ছিল ২ কক্ষের একটি পাকা দালান। পরে ২০১৩ সালে সরকার এটিকে জাতীয়করণ করার পর ২০১২-১৩ অর্থবছরে আরও দুই কক্ষের আরেকটি পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। ইতিমধ্যে পুরোনো ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ এবং পাঠদানে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় তা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীদের নিয়ে বেকায়দায় পড়েন শিক্ষকেরা। বাধ্য হয়েই এখন তাদের পাঠদান করতে হচ্ছে বারান্দায় বসিয়ে।

গড়েরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ও এক ছাত্রের অভিভাবক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার সন্তান গড়েরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। কিন্তু শ্রেণি সংকটের কারণে এখানে পড়ালেখার মান খুব নিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। আশপাশে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় তাঁকে অন্য কোনো বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে পারছি না।’

বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী তাওহীদ মিয়া বলে, ‘বারান্দায় ক্লাশ করলে অনেক রোদ লাগে। গরমে স্কুল ড্রেস ভিজে যায়। প্রায়ই ঠান্ডাকাশিতে কষ্ট পাই।’

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইশা আক্তার কণিকা বলে, ‘বিদ্যুৎ চমকাইলে অনেক ডর লাগে। দৌঁড়ে অন্য ক্লাসরুমের ভিতরে চইলা যাই। বাতাসে বৃষ্টির পানি আইসা শরীল ভিজাইয়া দেয়। মশা আইসা অনেক কামুড় দেয়।’

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মোস্তফা কামাল বলেন, বিদ্যালয়ের পুরোনো ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করার পর থেকে দুই কক্ষের নতুন ভবনে পাঠদান চলছে। ভবনের সিঁড়িতে চলে অফিশিয়াল কাজকর্ম। প্রথম শিফটে চলে প্রাক প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠদান। দ্বিতীয় শিফটে পাঠদান চলে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির। কিন্তু শ্রেণিকক্ষের সংকুলান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে ২ শিফটেই আমাদের বিদ্যালয়ের বারান্দায় পাঠদান করতে হচ্ছে। এতে শব্দদূষণ ও প্রচণ্ড রোদে শিক্ষার্থীদের বেশ কষ্ট হয়। এ ছাড়া ঝড়বৃষ্টির সময় পাঠদান ব্যাহত হয়। প্রতিবছর অনলাইনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিদ্যালয়ের এসব সমস্যার তথ্য জানানো হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমি সম্প্রতি সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছি।’

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফজিলাতুন নেছা বলেন, ‘প্রতিবছর অনলাইনে বিদ্যালয়ের ভবন থেকে শুরু করে যাবতীয় তথ্য মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তাঁরা সমস্যা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। স্থানীয়ভাবে আমাদের তেমন কিছু করার নেই।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বুলবুল আহমেদ বলেন, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। তবে বিষয়টি শুনে খুব খারাপ লেগেছে। একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমন অস্বস্থিকর পরিস্থিতি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বিকাশে ইতিবাচক নয়। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নিয়ে অচিরেই বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত