গলাচিপায় বয়স্ক ও বিধবা ভাতার টাকা আত্মসাৎ

গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২২, ০৬: ১২
আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২২, ১০: ২৯

পটুয়াখালীর গলাচিপায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক ও বিধবা ভাতার সুবিধাভোগীদের স্বাক্ষর জাল করে, মোবাইল অ্যাকাউন্টের সিম পরিবর্তন করে ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। উপজেলার রতনদীতালতলী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের এ অভিযোগ করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে ছয়জনের নাম পরিবর্তন করে টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. অলিউল ইসলাম।

গলাচিপা উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রতনদীতালতলী ইউনিয়নের রতনদী গ্রামের মুকুল কৃষ্ণ সেন তাঁর মা শোভা রাণীর বয়স্ক ভাতার টাকা না পেয়ে সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নেন। অফিস থেকে জানানো হয়, তাঁর মায়ের স্বাক্ষর জাল করে ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান কাগজ সত্যয়ন করে মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করা হয়েছে। পরিবর্তিত মোবাইল নম্বরেই শোভা রাণীর বয়স্ক ভাতা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ঘটনা জানার পরই শোভা রাণীর ছেলে মুকুল কৃষ্ণ সেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেন। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়। চলমান তদন্তে প্রাথমিকভাবে শোভা রাণীসহ ছয়জনের স্বাক্ষর জাল ও টাকা আত্মসাতের সত্যতা পেয়েছেন সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমাজসেবা অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শোভা রাণীর ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার পরই সবাই নড়েচড়ে বসেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, অন্তত ২১ থেকে ৪০ জনের নাম এভাবে পরিবর্তন করা হতে পারে। তবে তদন্ত শেষ হলেই সবকিছু স্পষ্ট করে বলা সম্ভব হবে।’

রতনদীতালতলী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নিজহাওলা গ্রামের ভাতাভোগী জয়নব বিবির ছেলে নূর ইসলাম বলেন, ‘আমার মায়ের ভাতার টাকা অনেক দিন ধরে আসে না। পরে অফিসে খবর নিয়ে জানতে পারি মোবাইল নম্বর কে বা কারা যেন পরিবর্তন করে দিয়েছে। গত রোববার সকালে ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান ফোন দিয়ে জানান মোবাইলে ৩ হাজার টাকা বিকাশ আসছে কি না। পরে বিকাশ নম্বর চেক করে দেখে স্থানীয় কাটাখালী বাজারের বিকাশ এজেন্ট নূর হোসেনের নম্বর থেকে ৩ হাজার টাকা পাঠানো হয়েছে।’

রতনদীতালতলী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বয়স্ক ও বিধবা ভাতার প্রায় ৩৯ জনের মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করা হয়েছে। এটা একটা ভুল ছিল। যেহেতু সবাই আমার ওয়ার্ডের ভোটার তাই আপাতত আমি টাকা ফেরত দিয়েছি। আমার কাছে আমার আত্মীয়স্বজনের ১২টি সিম রয়েছে। তাঁদের ভাতার টাকাও ফেরত দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে রতনদীতালতলী ইউনিয়নের কাটাখালী বাজারের নূর হোসেন ও উলানিয়া বাজারের আরেকটি বিকাশ নম্বর থেকে ১০ জনকে ৩ হাজার টাকা করে ফেরত দেওয়া হয়েছে। বাকিদের টাকাও ফেরত দেওয়া হবে। আমার জানামতে, ৩৯ জনের মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করা হয়েছে।’

গলাচিপা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. অলিউল ইসলাম বলেন, ‘রতনদীতালতলী ইউনিয়নের রতনদী গ্রামের শোভা রাণীর ছেলে মুকুল কৃষ্ণ সেনের অভিযোগ পাওয়ার পরই আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত শুরু করি। তদন্ত চলমান আছে। প্রাথমিক তদন্তে ছয়জন ভাতাভোগীর স্বাক্ষর জাল করে মোবাইলের সিম নম্বর পরিবর্তন করার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।’

গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশিষ কুমার বলেন, ‘এ ঘটনার তদন্ত চলমান আছে। অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত