৪০ দিনের কাজ ১২ দিনেই শেষ, ফেরত যাচ্ছে গরিবের ২ কোটি টাকা

গাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডুমুরিয়া
প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২২, ০৬: ৩৮
আপডেট : ১৯ জুন ২০২২, ১২: ৫৯

ডুমুরিয়ায় অতিদরিদ্রদের কর্মসৃজন প্রকল্পের ৪০ দিনের কাজ এবার ১২ দিনেই শেষ হয়েছে। এ কারণে অতি দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ ১ কোটি ৯২ লাখ ৪১ হাজার ৪০০ টাকা ফেরত যাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রামের অবকাঠামো উন্নয়ন। আর আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অতিদরিদ্ররা।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ অধিদপ্তর থেকে সময়মতো নির্দেশনা না আসা ও উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন থেকে প্রকল্পের নাম দিতে বেশি দেরি করায় কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে বলে দাবি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা দপ্তরের। তবে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা উপজেলা প্রশাসনের গাফিলতিকেই দায়ী করছেন। আর এ কারণেই এবার গরিবের সব চেয়ে বেশি টাকা ফেরত যাচ্ছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে চলতি অর্থবছরে ডুমুরিয়ার ১৪টি ইউনিয়নে ১৭১৮ জন শ্রমিক দিয়ে ৪০ দিনের কাজ শুরু হয়। এতে বরাদ্দ হয় ২ কোটি ৭৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। গত ৫ মে ইজিপিপি অর্থাৎ ৪০ দিনের কর্মসৃজনের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করার চিঠি দেওয়া হয়।

ওই দিনই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে ১০ মে’র মধ্যে প্রকল্প গ্রহণ করে তালিকা পাঠানোর জন্য উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেওয়া হয় বলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান। উপজেলা কমিটির সভায় ৬৪টি প্রকল্প অনুমোদন করে কাজ শুরু করার প্রস্তাব গত ১৭ মে পাঠানো হয় জেলায়। সে অনুযায়ী ২৪ মে থেকে কাজ শুরু করা হয়।

এদিকে অধিদপ্তর থেকে চিঠি দেওয়া হয় ৮ জুনের মধ্যে ৪০ দিনের কর্মসৃজনের কাজ শেষ করতে হবে। ২৪ মে থেকে ৮ জুন (বৃহস্পতি ও শুক্রবার বাদে) মাত্র ১২ দিন কাজ হয়েছে। এতে অতিদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ২ কোটি ৭৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকার মধ্যে মাত্র ৮২ লাখ ৪৬ হাজার ৪০০ টাকা পান শ্রমিকেরা। আর ফেরত যাচ্ছে ১ কোটি ৯২ লাখ ৪১ হাজার ৬০০ টাকা।

তবে একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তরের সব অফিসার ৪০ দিনের কর্মসূচির কাজের আগে থেকেই বেশ অনীহা দেখায়। তারা কাবিখা-টিআর আর ব্রিজ নির্মাণের কাজে বেশি তদারকি করেন। এ ছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে সর্বদা ব্যস্ত থাকেন। যে কারণে গরিবের এ প্রকল্প বাস্তবায়নে তাদের তেমন কোন আগ্রহ নেই। তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আশরাফ হোসেন বলেন, ইউনিয়ন থেকে রেজুলেশনসহ প্রকল্পের নামের তালিকা কোন বারই সময়মতো পাওয়া যায় না। যে কারণে কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন অধিকাংশ চেয়ারম্যানরা। তারা বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর শুধু না যে কোন দপ্তর থেকে সময় মতো কাজ করার তাগিদ দেওয়া হয় না।

মাত্র ১২ দিন কাজ হয়েছে কিন্তু চেয়ারম্যানদের ১৫ দিনের বিল করার কথা বলা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে এ কাজের তদারকিতে নিয়োজিত সহকারী প্রকৌশলী মো. রাসেল আহম্মেদ বলেন, ৩ দিন বেশি কাজ করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে ১২৬টি ওয়ার্ডের সিংহভাগ জায়গায় বাড়তি ৩ দিনের কাজ হয়নি। ইউপি সদস্য মোক্তার হোসেন ও দেবব্রত সরদার বলেন, অফিস থেকে মেইল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা কাজ শুরু করি।

কিন্তু কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে কোন বারই ৪০ দিন কাজ করা সম্ভব হয় না বলে তারা দাবি করেন। তবে এবার মাত্র ১২ দিন কাজ হওয়ায় শ্রমিকসহ সবাই হতাশ বলে তিনি জানান। তবে সহকারী প্রকৌশলী রাসেল আহম্মেদ বলেন, তাদের কোন গাফিলতি নেই। বরং ইউপি চেয়ারম্যানেরা দেরি করে প্রকল্প দেওয়ায় সময়মতো কাজ করা সম্ভব হয় না।

গুটুদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ তুহিনুল ইসলাম তুহিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমরাই তালিকা করতে দেরি করেছি। এ জন্য কাজ হয়নি ২৮ দিন যে কারণে ১ কোটি ৯২ লাখ ৪১ হাজার ৬০০ টাকা ফেরত যাচ্ছে। উল্লেখ গত বছরও ৫ দিন কাজ কম হওয়ায় ২৬ লাখ টাকা ফেরত যায়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত