বিএসটিআইয়ের নজরদারির বাইরে ৮৭ শতাংশ খাদ্যপণ্য

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২২, ০৮: ২১
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২২, ০৮: ২৪

পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার। রাস্তার পাশে ভ্যান ও দোকানে চানাচুর, বিস্কুট, চিপস, চকলেট, শিশুখাদ্যসহ নানা ধরনের পণ্যের ছড়াছড়ি। দাম একটু কম হওয়ায় এসব খাদ্যপণ্যের চাহিদাও বেশি। যদিও এখানকার অধিকাংশ খাদ্যপণ্যেরই নেই কোনো প্যাকেট। আবার প্যাকেট থাকলেও উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, উৎপাদকের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা, সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য—এসবের বালাই নেই। ক্রেতারা জানেনই না এসব পণ্যের মান ঠিক আছে কি না।

শুধু পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার নয়, সোয়ারীঘাট, ছোট কাটারা, বড় কাটারায়ও একই চিত্র। রাজধানীসহ দেশজুড়ে এভাবে মানহীন পণ্য বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আজ শুক্রবার পালন করা হবে বিশ্ব মান দিবস।

দেশে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। তারা ৬৩২টি খাদ্যপণ্যের মান প্রণয়ন বা স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করেছে। কিন্তু এসবের মধ্যে মাত্র ৮০টি খাদ্যপণ্য বাধ্যতামূলক নজরদারি তালিকায় আছে। অর্থাৎ ৫৫২ বা ৮৭ শতাংশের বেশি খাদ্যপণ্য বিএসটিআইয়ের নজরদারির বাইরে। যেসব পণ্য বাধ্যতামূলক তালিকায় রয়েছে, সেগুলোরও সঠিক তদারকি করা হচ্ছে না। ফলে মানহীন ও ভেজাল খাদ্যপণ্যে ছেয়ে গেছে বাজার।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, তারা বাজারে অভিযান চালাতে গিয়ে দেখে অনেক পণ্যের সঠিক নজরদারি হচ্ছে না। বিশেষ করে বাজারে অসংখ্য ফুড সাপ্লিমেন্ট রয়েছে। কিন্তু এসব ফুড সাপ্লিমেন্টের দায়িত্ব বিএসটিআই কিংবা ঔষধ প্রশাসন কেউই নিচ্ছে না। এ ছাড়া রং ফরসাকারী ক্রিম ও নানা ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামও রয়েছে বিএসটিআইয়ের নজরদারির বাইরে।

জানতে চাইলে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ড. বিল্লাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, দক্ষ লোকবলের কারণে বিএসটিআই তৈরিকৃত মান নজরদারি করতে পারছে না। তবে বিএসটিআইতে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে সঠিক লোক সঠিক স্থানে পদায়ন করতে হবে। খাদ্য বিশেষজ্ঞকে কেমিক্যালে পদায়ন করা যাবে না। যেসব পণ্যের মান প্রণয়ন করা হয়েছে, সবগুলোই তাদের নজরদারিতে থাকা উচিত।

তবে বিএসটিআই বলছে, লোকবল-সংকট থাকলেও তারা নিয়মিত ভেজালবিরোধী অভিযান চালিয়ে আসছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিএসটিআই ১ হাজার ৬৬০টি ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৯৮১টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এতে ১২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা জরিমানা আদায় এবং ২১ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আর চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে ৫১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযান চালিয়ে ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা জরিমানা আদায় এবং দুজনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মান প্রণয়ন করলেও নজরদারি কম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসটিআইয়ের পরিচালক (মান) নীলুফা হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা তো চাই সবগুলো মানের তদারকি করতে। কিন্তু আমাদের লোকবল ততটা নাই। যেগুলো সুপারিশ আসছে, সেগুলোই বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জনেন্দ্র নাথ সরকার জানান, তাঁরা ৪ হাজার ৯৫টি পণ্যের মান প্রণয়ন করেছেন। এগুলোর মধ্যে ২২৯টি তাঁদের বাধ্যতামূলক তালিকায় রয়েছে। সেগুলোতে যেকোনো অনিয়ম হলে তাঁরা ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তবে পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল হলে সবগুলো মানই নজরদারিতে আনা সম্ভব। এটি বাস্তবায়নে সময় লাগবে।

আজ বিশ্ব মান দিবস হলেও আগামী রোববার দুপুরে দিবসটি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএসটিআই। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘সমন্বিত উদ্যোগ টেকসই উন্নত বিশ্ব বিনির্মাণে—মান’।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত