Ajker Patrika

কার অবহেলায় এই বিপুল ক্ষয়ক্ষতি

জসিম উদ্দিন, নীলফামারী
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ৩৮
কার অবহেলায় এই বিপুল ক্ষয়ক্ষতি

তিস্তা ব্যারাজের পানি বাড়লে তা দ্রুত বের করে দেওয়ার জন্য ৪৪টি গেট আছে। গত ১৯ অক্টোবর রাতে পানি বাড়লেও ৪০টি গেট খুলতে ভুলে গেছেন ব্যারাজে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে অস্বাভাবিক স্রোতে ব্যারাজসংলগ্ন ফ্লাড বাইপাস সড়ক লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। হাজার হাজার ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ফসলি জমি। আর পলি পড়ে নষ্ট হয়েছে অন্তত দুই হাজার একর জমির ফসল। খোদ পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব বলছে, এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পদ।

এই ক্ষয়ক্ষতির জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের দায়ী করে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন স্থানীয় সাংসদ মো. মোতাহার হোসেন। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় তিন সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি আজ শনিবার সরেজমিন

তদন্ত শুরু করতে চলেছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) ড. মো. মিজানুর রহমানকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুই সফরসঙ্গীসহ তদন্ত কমিটি গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিন নীলফামারী পৌঁছেছে।

ওই দিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় জনগণ, জনপ্রতিনিধি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মীরা আজ কমিটির কাছে উপস্থিত থাকতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

তিস্তা ব্যারাজের ধারণক্ষমতা সাড়ে চার লাখ কিউসেক পানিপ্রবাহ। আর ফ্লাড বাইপাসের রয়েছে দুই লাখ কিউসেক পানিপ্রবাহের সক্ষমতা। কিন্তু গত ২০ অক্টোবর তিস্তা নদীতে পানির প্রবাহ ছিল ছয় লাখ কিউসেক। এত বিপুল পরিমাণ পানি দ্রুত অপসারণের জন্য দরকার ছিল ৪৪টি গেট একসঙ্গে খুলে দেওয়া। কিন্তু বাস্তবে খোলা ছিল মাত্র চারটি। ফলে প্রচণ্ড পানির চাপে লন্ডভন্ড হয় ফ্লাড বাইপাস সড়ক।

সূত্রমতে, গত ১৯ অক্টোবর উজানে ভারী বর্ষণের কারণে ভারত গজলডোবা ব্যারাজের গেট খুলে দেয়। এর ফলে তিস্তা নদীতে পানি বাড়তে থাকে, যা রাত ১২টায় তিস্তা ব্যারাজে নদীর পানিপ্রবাহ বিপৎসীমা অতিক্রম করে। পানির চাপ সামলাতে না-পেরে পরদিন সকাল ১০টার দিকে ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাস সড়কটি ভেঙে যায়।

তিস্তা ব্যারাজসংলগ্ন লালমনিরহাট উপজেলার হাতীবান্ধা উপজেলার গুড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) নজরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, বন্যা না-থাকায় আগে থেকে ব্যারাজের সব গেট বন্ধ ছিল। ওই দিন সন্ধ্যার পর থেকে আকস্মিকভাবে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উজানে বন্যা দেখা দেয়। সে সময় স্থানীয় লোকজন ব্যারাজে উপস্থিত হয়ে কর্তৃপক্ষকে গেট খুলে দেওয়ার কথা বলেন। রাত আনুমানিক ২টার দিকে গেট খোলার ব্যবস্থা হয়। কিন্তু তার আগেই অতিরিক্ত পানিপ্রবাহে লন্ডভন্ড হয় ফ্লাড বাইপাস।

এই রাতের ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দিয়ে ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান বলেন, ব্যারাজের উজানে ও ভাটির দিকে প্রায় ১০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে দুই শত পরিবারের ভিটেমাটি। বালু পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে দুই হাজার একর ভুট্টা, মরিচ, চীনাবাদাম ও আমন ধানের ফসল।

এত বিপুল ক্ষয়ক্ষতির জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকে দায়ী করেন স্থানীয় সাংসদ মো. মোতাহার হোসেন। তবে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদৌলা প্রিন্সের দাবি, সাংসদের অভিযোগ সঠিক নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

৬ জ্যান্ত হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত