শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বুক ও পেট পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। ময়নাতদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরাও সে কথা বলেছেন। কিন্তু এ ঘটনা নিয়ে থানায় করা মামলায় গুলিতে নিহত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ নেই। শুধু সাঈদের ঘটনা নয়, কোটা আন্দোলনে সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা নিয়ে এ পর্যন্ত যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশের এজাহারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত হওয়ার কথাটি উল্লেখ করা হয়নি। পুলিশ সদস্যরা বাদী হয়ে এসব মামলা করেছেন। এদিকে অভিযোগ উঠছে, এই আন্দোলনের সহিংসতার ঘটনায় ভুক্তভোগীরা কোনো মামলাই করতে পারছেন না।
মামলার এজাহারে কেন গুলির কথা উল্লেখ করা হচ্ছে না—জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, এজাহারে কী লেখা হচ্ছে, তা ঊর্ধ্বতনদের যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে; যেন কেউ ভুয়া মামলা করার সুযোগ না পান। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল সচিবালয়ে বলেন, পুলিশ অতি উৎসাহী হয়ে কখনোই গুলি করেনি। অনেক ধৈর্য ধরে পরে গুলি করতে বাধ্য হয়েছে।
কোটা আন্দোলনের হতাহতের সংখ্যা নিয়ে শুরু থেকেই নানা তথ্য শোনা যাচ্ছিল। তবে গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, সহিংসতার ঘটনায় সরকার এ পর্যন্ত ১৪৭ জনের মৃত্যুর তথ্য জানতে পেরেছে। যদিও গত শনিবার নিহত ২৬৬ জনের তালিকা প্রকাশ করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মোর্চা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা প্রত্যেকের নাম, পরিচয়, পেশা ও বয়সের পাশাপাশি কে কখন কোথায় নিহত হয়েছেন, সেসব তথ্যও দিয়েছে সংবাদ সম্মেলন করে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলন শুরু হয় ১ জুলাই। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা করার পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে প্রায় সারা দেশে। এর পরদিন থেকে এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, সংঘর্ষ, সহিংসতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ সূত্র বলছে, সহিংসতায় হতাহত ও ভাঙচুর-আগুনের ঘটনায় শুধু ঢাকা মহানগর পুলিশে মামলা হয়েছে ২২৯টি। সারা দেশে সব মিলিয়ে মামলা হয়েছে ছয় শতাধিক। এসব মামলায় প্রায় ছয় হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
একাধিক মামলার এজাহারগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এসব মামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত হওয়ার কোনো কথা সেভাবে এজাহারে উল্লেখ করা হচ্ছে না। তবে কোনো কোনো মামলায় সহিংস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কখনো কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেডের কথা বলা হয়েছে। দু-একটি মামলায় শটগান থেকে ফাঁকা গুলির কথা বললেও সেই গুলিতে কারও মারা যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এজাহার বিশ্লেষণ করে আরও দেখা যায়, অধিকাংশ এজাহারে আন্দোলন চলাকালে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নেতা-কর্মী এবং অছাত্র অনেকে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে বলা হয়েছে। অথচ গণমাধ্যমে ধারণ করা ফুটেজ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া শত শত ভিডিও এবং ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, আন্দোলনকারীদের ওপর বেশির ভাগ জায়গাতেই গুলি চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে অনেকে মারা গেছেন। আবার গুলিবিদ্ধ হয়ে হাজারখানেক মানুষ এখনো বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
পুলিশের গুলিতে শিক্ষার্থীদের নিহত হওয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যু। ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বুক ও পেট পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। তাঁর গলা থেকে ঊরু পর্যন্ত ছিল ছররা গুলির আঘাত। ঘটনার একাধিক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে পুলিশ আবু সাঈদকে খুব কাছ থেকে গুলি করে। আবু সাঈদ এক হাতে লাঠি নিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি লুটিয়ে পড়েন।
অথচ পুলিশের করা মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) বলা হয়, আন্দোলনকারীদের ছোড়া গুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের একপর্যায়ে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়।
আবার ২১ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে বগুড়ার সেউজগাড়িতে পুলিশের গুলিতে সিয়াম (১৬) নামের এক কিশোর নিহত হয়। পরে রেলস্টেশনে গিয়ে ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। এ ঘটনায় সদর থানার এসআই জাকির আহসান বাদী হয়ে মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়, বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা নিজেদের বানানো ককটেল পুলিশের ওপর নিক্ষেপ করলে সেটা তাদের সামনে বিস্ফোরিত না হয়ে ওই কিশোরের সামনে বিস্ফোরিত হয়। ককটেলের স্প্লিন্টারের আঘাতে সিয়ামের মৃত্যু হয়। এরপর বিক্ষুব্ধদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড মেরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। কিন্তু নিহত সিয়ামের বাবা গাড়িচালক আশিক ও মা শাপলা বেগম অভিযোগ করেন, পুলিশের গুলিতেই তাঁদের ছেলের মৃত্যু হয়েছে।
মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকারি দলের যাঁরা পুলিশ বাহিনীতে চাকরি পেয়েছেন, তাঁরা আইনের শাসনের তোয়াক্কা করেন না। প্রকাশ্যে গুলি চালালেও এজাহারে তা অস্বীকার করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, পুলিশ বাদী হয়ে করা মামলাগুলোতে আরও সতর্ক থাকা উচিত। যে ঘটনাগুলো চোখের সামনে ঘটেছে, তথ্যপ্রমাণ আছে, তা বিকৃত করার দরকার নেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি করে থাকলে গুলি করার কথা বলতে পারত।
ক্ষতিগ্রস্তদের মামলা নিচ্ছে না পুলিশ
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতা চলাকালীন রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন এক যুবক। দুই হাত উঁচু করে রাস্তার পাশ দিয়েই হাঁটছিলেন তিনি। অথচ আন্দোলনকারী সন্দেহে কয়েক হাত দূর থেকে পা বরাবর ছররা গুলি চালায় পুলিশ। ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার আশঙ্কায় এক দিন পর বাড্ডা থানায় মামলা করতে যান। অভিযোগ লিখেও জমা দেন। কিন্তু মামলা নিতে গড়িমসি করে ডিএমপির গুলশান বিভাগের বাড্ডা থানা। নানা প্রশ্ন আর জিজ্ঞাসাবাদের দুই দিন পর এজাহার জমা দিতে বলে দায়িত্বরত পুলিশ। কিন্তু গত চার দিনেও সেই অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়নি। ডিএমপির আরও কয়েকটি থানা ঘুরে একই অভিযোগ পাওয়া যায়।
এই অভিযোগের বিষয়ে ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার রিফাত রহমান শামীম আজকের পত্রিকাকে বলেন, সহিসংতার ঘটনায় মামলাগুলো ডিএমপির একটি কমিটিতে যাচাই-বাছাই হয়। চাইলে কারও মামলা নেওয়া যায় না।
ডিএমপি সদর দপ্তর সূত্র বলছে, ডিএমপি সদরের ক্রাইম বিভাগ থেকে অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসার পর অভিযোগগুলো মামলা হিসেবে নেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রটি বলছে, মূলত মামলা বা এজাহারে পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়; সেটা নিশ্চিত করতেই এই প্রক্রিয়া। এমনকি এখান থেকে এজাহার কাটছাঁটও করা হচ্ছে।
যদিও পুলিশ প্রবিধান অনুযায়ী মামলা নেওয়ার সম্পূর্ণ এখতিয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার। কিন্তু এভাবে সদর দপ্তরের এজাহার যাচাই-বাছাই বা কাটছাঁট করার কোনো সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘থানার কাজ মামলা নেওয়া, তারপর যাচাই-বাছাই করা। যদি কেউ মিথ্যা মামলা করে, তখন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে পারে পুলিশ। তা না করে একমুখী হয়ে শুধু নিজেরা মামলা করবে আর নিজেদের মতো এজাহার দায়ের করবে, তা আসলে হয় না।’
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বুক ও পেট পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। ময়নাতদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরাও সে কথা বলেছেন। কিন্তু এ ঘটনা নিয়ে থানায় করা মামলায় গুলিতে নিহত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ নেই। শুধু সাঈদের ঘটনা নয়, কোটা আন্দোলনে সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা নিয়ে এ পর্যন্ত যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশের এজাহারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত হওয়ার কথাটি উল্লেখ করা হয়নি। পুলিশ সদস্যরা বাদী হয়ে এসব মামলা করেছেন। এদিকে অভিযোগ উঠছে, এই আন্দোলনের সহিংসতার ঘটনায় ভুক্তভোগীরা কোনো মামলাই করতে পারছেন না।
মামলার এজাহারে কেন গুলির কথা উল্লেখ করা হচ্ছে না—জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, এজাহারে কী লেখা হচ্ছে, তা ঊর্ধ্বতনদের যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে; যেন কেউ ভুয়া মামলা করার সুযোগ না পান। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল সচিবালয়ে বলেন, পুলিশ অতি উৎসাহী হয়ে কখনোই গুলি করেনি। অনেক ধৈর্য ধরে পরে গুলি করতে বাধ্য হয়েছে।
কোটা আন্দোলনের হতাহতের সংখ্যা নিয়ে শুরু থেকেই নানা তথ্য শোনা যাচ্ছিল। তবে গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, সহিংসতার ঘটনায় সরকার এ পর্যন্ত ১৪৭ জনের মৃত্যুর তথ্য জানতে পেরেছে। যদিও গত শনিবার নিহত ২৬৬ জনের তালিকা প্রকাশ করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মোর্চা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা প্রত্যেকের নাম, পরিচয়, পেশা ও বয়সের পাশাপাশি কে কখন কোথায় নিহত হয়েছেন, সেসব তথ্যও দিয়েছে সংবাদ সম্মেলন করে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলন শুরু হয় ১ জুলাই। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা করার পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে প্রায় সারা দেশে। এর পরদিন থেকে এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, সংঘর্ষ, সহিংসতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ সূত্র বলছে, সহিংসতায় হতাহত ও ভাঙচুর-আগুনের ঘটনায় শুধু ঢাকা মহানগর পুলিশে মামলা হয়েছে ২২৯টি। সারা দেশে সব মিলিয়ে মামলা হয়েছে ছয় শতাধিক। এসব মামলায় প্রায় ছয় হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
একাধিক মামলার এজাহারগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এসব মামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত হওয়ার কোনো কথা সেভাবে এজাহারে উল্লেখ করা হচ্ছে না। তবে কোনো কোনো মামলায় সহিংস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কখনো কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেডের কথা বলা হয়েছে। দু-একটি মামলায় শটগান থেকে ফাঁকা গুলির কথা বললেও সেই গুলিতে কারও মারা যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এজাহার বিশ্লেষণ করে আরও দেখা যায়, অধিকাংশ এজাহারে আন্দোলন চলাকালে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নেতা-কর্মী এবং অছাত্র অনেকে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে বলা হয়েছে। অথচ গণমাধ্যমে ধারণ করা ফুটেজ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া শত শত ভিডিও এবং ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, আন্দোলনকারীদের ওপর বেশির ভাগ জায়গাতেই গুলি চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে অনেকে মারা গেছেন। আবার গুলিবিদ্ধ হয়ে হাজারখানেক মানুষ এখনো বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
পুলিশের গুলিতে শিক্ষার্থীদের নিহত হওয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যু। ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বুক ও পেট পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। তাঁর গলা থেকে ঊরু পর্যন্ত ছিল ছররা গুলির আঘাত। ঘটনার একাধিক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে পুলিশ আবু সাঈদকে খুব কাছ থেকে গুলি করে। আবু সাঈদ এক হাতে লাঠি নিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি লুটিয়ে পড়েন।
অথচ পুলিশের করা মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) বলা হয়, আন্দোলনকারীদের ছোড়া গুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের একপর্যায়ে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়।
আবার ২১ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে বগুড়ার সেউজগাড়িতে পুলিশের গুলিতে সিয়াম (১৬) নামের এক কিশোর নিহত হয়। পরে রেলস্টেশনে গিয়ে ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। এ ঘটনায় সদর থানার এসআই জাকির আহসান বাদী হয়ে মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়, বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা নিজেদের বানানো ককটেল পুলিশের ওপর নিক্ষেপ করলে সেটা তাদের সামনে বিস্ফোরিত না হয়ে ওই কিশোরের সামনে বিস্ফোরিত হয়। ককটেলের স্প্লিন্টারের আঘাতে সিয়ামের মৃত্যু হয়। এরপর বিক্ষুব্ধদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড মেরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। কিন্তু নিহত সিয়ামের বাবা গাড়িচালক আশিক ও মা শাপলা বেগম অভিযোগ করেন, পুলিশের গুলিতেই তাঁদের ছেলের মৃত্যু হয়েছে।
মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকারি দলের যাঁরা পুলিশ বাহিনীতে চাকরি পেয়েছেন, তাঁরা আইনের শাসনের তোয়াক্কা করেন না। প্রকাশ্যে গুলি চালালেও এজাহারে তা অস্বীকার করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, পুলিশ বাদী হয়ে করা মামলাগুলোতে আরও সতর্ক থাকা উচিত। যে ঘটনাগুলো চোখের সামনে ঘটেছে, তথ্যপ্রমাণ আছে, তা বিকৃত করার দরকার নেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি করে থাকলে গুলি করার কথা বলতে পারত।
ক্ষতিগ্রস্তদের মামলা নিচ্ছে না পুলিশ
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতা চলাকালীন রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন এক যুবক। দুই হাত উঁচু করে রাস্তার পাশ দিয়েই হাঁটছিলেন তিনি। অথচ আন্দোলনকারী সন্দেহে কয়েক হাত দূর থেকে পা বরাবর ছররা গুলি চালায় পুলিশ। ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার আশঙ্কায় এক দিন পর বাড্ডা থানায় মামলা করতে যান। অভিযোগ লিখেও জমা দেন। কিন্তু মামলা নিতে গড়িমসি করে ডিএমপির গুলশান বিভাগের বাড্ডা থানা। নানা প্রশ্ন আর জিজ্ঞাসাবাদের দুই দিন পর এজাহার জমা দিতে বলে দায়িত্বরত পুলিশ। কিন্তু গত চার দিনেও সেই অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়নি। ডিএমপির আরও কয়েকটি থানা ঘুরে একই অভিযোগ পাওয়া যায়।
এই অভিযোগের বিষয়ে ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার রিফাত রহমান শামীম আজকের পত্রিকাকে বলেন, সহিসংতার ঘটনায় মামলাগুলো ডিএমপির একটি কমিটিতে যাচাই-বাছাই হয়। চাইলে কারও মামলা নেওয়া যায় না।
ডিএমপি সদর দপ্তর সূত্র বলছে, ডিএমপি সদরের ক্রাইম বিভাগ থেকে অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসার পর অভিযোগগুলো মামলা হিসেবে নেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রটি বলছে, মূলত মামলা বা এজাহারে পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়; সেটা নিশ্চিত করতেই এই প্রক্রিয়া। এমনকি এখান থেকে এজাহার কাটছাঁটও করা হচ্ছে।
যদিও পুলিশ প্রবিধান অনুযায়ী মামলা নেওয়ার সম্পূর্ণ এখতিয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার। কিন্তু এভাবে সদর দপ্তরের এজাহার যাচাই-বাছাই বা কাটছাঁট করার কোনো সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘থানার কাজ মামলা নেওয়া, তারপর যাচাই-বাছাই করা। যদি কেউ মিথ্যা মামলা করে, তখন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে পারে পুলিশ। তা না করে একমুখী হয়ে শুধু নিজেরা মামলা করবে আর নিজেদের মতো এজাহার দায়ের করবে, তা আসলে হয় না।’
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে