Ajker Patrika

‘তার আগে আমরা বাঙালি’

‘তার আগে আমরা বাঙালি’

একসময় বাংলা একাডেমিতে কাজ করেছিলেন সন্জীদা খাতুন। ছোট্ট একটা খুপরিতে বসে সকাল ৯টা ৩০ থেকে বিকেল ৪টা ৩০ পর্যন্ত চলত কাজ। ঊনবিংশ শতাব্দীতে যে বাংলা বইগুলো বের হয়েছিল, সেগুলো থেকে কিছু বই বেছে নিয়ে তাতে আরবি-ফারসি শব্দ খুঁজে বের করে নমুনা আর রেফারেন্সসুদ্ধ কার্ডে লিখে সংগ্রহ করতে হতো। এ কাজটা দীর্ঘ সময়ের নয়। এক বেলা কাজ করে আরেক বেলায় লাইব্রেরিতে বই পড়ে কাটিয়ে দেওয়া যেত; কিংবা অফিসের লাইব্রেরি থেকে বই এনেও তা পড়া যেত। এখানে বসেই অনেক বই পড়েছেন তিনি।

যে অভিধানটি নিয়ে কাজ হচ্ছিল, তার প্রধান সম্পাদক ছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্। তিনি হঠাৎ একদিন এসে এমন এক কথা বললেন, যা সন্জীদা খাতুনের কাছে উদ্ভট বলে মনে হলো। বাংলা একাডেমির নিয়মে ‘ঙ’ বাদ গেছে। সুতরাং এখন যদি ‘বাঙালী’ লিখতে হয়, তাহলে কীভাবে লেখা হবে? তিনি বের করেছেন, বাঙালি না লিখে লিখতে হবে ‘বাংআলী’। এ কথা শুনে তো সন্জীদা খাতুনের চক্ষু চড়কগাছ! এ বানান কী করে লেখা যায়! সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে তিনি গেলেন বাংলা একাডেমির পরিচালক সৈয়দ আলী আহসানের কাছে। ‘আমি তাহলে এবার কী করব? কীভাবে লিখব?’ জানতে চাইলেন সন্জীদা খাতুন।

 ‘অভিধানের বানান হবে প্রচলিত বানান। এখানে তো বানান বদল হতে পারে না।’—বললেন পরিচালক।

আবার এই সৈয়দ আলী আহসানের একটি প্রশ্নও হতবিহ্বল করে তুলেছিল সন্জীদা খাতুনকে। বাংলা একাডেমির পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে সন্জীদা খাতুনকে গান করতে বলা হয়েছিল। সন্জীদা খাতুন মহানন্দে গাইলেন, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...’।

সৈয়দ আলী আহসান বললেন, ‘ও গান গাইলে কেন? আইবি থেকে আপত্তি করেছে।’

সন্জীদা বললেন, ‘আমরা বাংলাকে ডিজওউন করব কেন?’

আলী আহসান বললেন, ‘আমরা তো পাকিস্তানি।’

সন্জীদা খাতুন বললেন, ‘তার আগে আমরা বাঙালি।’ 

সূত্র: সন্জীদা খাতুন, জীবনবৃত্ত, পৃষ্ঠা ৩৯-৪০

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত