মামলা-গ্রেপ্তারের মুখে মেয়র অনুসারীরা

খান রফিক, বরিশাল
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ৩৪
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২২, ১৫: ২০

বরিশালে পরিবহন শ্রমিকদের দুপক্ষের দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে। গত সোমবার সন্ধ্যায় পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা সুমন মোল্লাসহ দুজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়। এ ঘটনায় সিটি মেয়র অনুসারী আওয়ামী লীগের ২৫ জনকে আসামি করে হত্যাচেষ্টা মামলা করা হয়েছে। এদের মধ্যে মঙ্গলবার মেয়র অনুসারী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান মাসুমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এক দিন আগে প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি সুলতান আহমেদকেও বেধড়ক পেটানোসহ তাঁর কার্যালয় তছনছ করা হয়।

রুপাতলী বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজির লাখ লাখ টাকা নিয়ে গত মাস থেকে প্রতিমন্ত্রী ও মেয়র অনুসারীরা সংঘাতে লিপ্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবারও থমথমে অবস্থা বিরাজ করে বাস টার্মিনালে।

জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যায় পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিমের অনুসারী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুমন মোল্লা ও আল আমিনকে কুপিয়ে জখম করে সন্ত্রাসীরা। ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্তে বরিশাল-ঝালকাঠি মহাসড়কের রুপাতলী বসুন্ধরা হাউজিং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

গুরুতর আহত সুমন মোল্লাকে (৪০) শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাতেই সুমনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল করিম বলেন, ধারণা করা হচ্ছে পূর্ববিরোধের জেরে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

আহত সুমন মোল্লার মা সেতারা বেগম বলেন, বাসায় ইফতার করতে আসে সুমন। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা হঠাৎ করেই সুমনের ওপর হামলা করে। তারা সুমন ও প্রতিবেশী আল আমিনকে কুপিয়ে জখম করে।

সুমনের স্ত্রী আইরীন আক্তার অভিযোগ করেন, রুপাতলী বাস টার্মিনাল দখল নিয়ে বিরোধে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সুমন মোল্লাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে জখম করেছে। তারা সুমন ও তার মায়ের বসতঘর এবং অপর এক প্রতিবেশীসহ তিনটি ঘরে হামলা-ভাঙচুর করেছে।

এদিকে শ্রমিক নেতা সুমন মোল্লাকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান মাসুমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার সকালে নগরীর রুপাতলী থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করা হয়।

থানার পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসাইন বলেন, ভুক্তভোগীর মা সেতারা বেগম হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন। মামলায় ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইদুর রহমান জাকির মোল্লা, তাঁর ভাই মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুর রহমান মনির মোল্লা, ২৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান মাসুম, ২৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর শহিদুল ইসলাম রনি, সোহেল মোল্লাসহ আরও ১৫ জনকে আসামি করা হয়। ওসি লোকমান বলেন, যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ। রুপাতলী বাস টার্মিনালে পুলিশ মোতায়েন আছে।

তবে মেয়র অনুসারী ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইদুর রহমান জাকির মোল্লা ফোন দিয়ে আজকের পত্রিকাকে জানান, তিনি মারামারির খবর শুনে সুমনের বাসার সামনে গিয়েছিলেন। ওই ঘটনার আগে সুমন ও তার অনুসারীরা ২৫ নম্বর ওয়ার্ড সাংগঠনিক সম্পাদকের ওপর হামলা করেছে বলে দাবি করেন কাউন্সিলর জাকির।

জানা যায়, নগরের রুপাতলী বাস টার্মিনালে শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন প্রতিমন্ত্রী অনুসারী সুলতান আহমেদ। তাঁকে হটাতে নতুন একটি কমিটি করেন সিটি মেয়র অনুসারীরা। এর সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান শাহরিয়ার বাবু এবং সাধারণ সম্পাদক লঞ্চঘাট শ্রমিক নেতা পরিমল চন্দ্র দাস। তাঁরা মধ্য মার্চ থেকে টার্মিনালে অবস্থান নিয়ে প্রতিদিন বিক্ষোভ সমাবেশ করে আসছিলেন।

সেখানকার সাধারণ শ্রমিকেরা জানান, টার্মিনালের বাস এবং কাউন্টারসহ ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলেন শ্রমিক নেতারা। চাঁদার ওই লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেই দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়।

প্রতিমন্ত্রী অনুসারী শ্রমিক নেতা সুলতান মাহমুদ বলেন, বাবু-পরিমলের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিক নেই। লঞ্চঘাটের কুলি দিয়ে রাজনীতি করেন তাঁরা। নতুন করে ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, আওয়ামী লীগের ক্যাডার দিয়ে হত্যার রাজনীতিতে নেমেছে মেয়রের লোকজন।

তবে মেয়র অনুসারী ইউপি চেয়ারম্যান শাহরিয়ার বাবু জানান, তাঁরা সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ প্রতিরোধ করতে চান রুপাতলী বাস টার্মিনালে। সুলতান দীর্ঘদিন ধরে বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত