শীতেও ঘামেন চরের কৃষক

আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা 
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৫: ৫২

‘শীত তো অনেক। চরের চারপাশ দিয়ে নদী। যখন পশ্চিমা বাতাস ছাড়ে তখন গা কাঁপে কিন্তু উপায় নাই। শস্য ফলানোর সময় তো এখনই। খেত যত আগে লাগাব তত তাড়াতাড়ি ঘরে ফসল উঠবে। দেরি হলে বৈশাখ মাসে পানির নিচে সব তলিয়ে যাবে। কষ্ট তো আমাদের জীবনের সঙ্গী।’

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার খাটিয়া মারি চরে কথাগুলো বলছিলেন ইসমাইল হোসেন। উত্তরাঞ্চলসহ সারা দেশের জনজীবন যখন শীতে বিপর্যস্ত তখন ঠান্ডার কাঁপুনি উপেক্ষা করেই ইসমাইলের মতো অনেক কিষান-কিষানি চরে আবাদে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। এ সময়ে চরে মরিচ, ভুট্টা, বাদাম, কুমড়া, গম, তিলসহ নানা ফসলের বীজ বপন করা হয়।

মিষ্টিকুমড়া চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সারা বছর প্রকৃত দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করেই বেঁচে থাকতে হয়। এখন ফসল না ফলালে সারা বছর খামু কী? শীতের তিন-চার মাস চরাঞ্চলের সব মানুষই ব্যস্ত থাকি। তাই শীত একটু কম লাগে। আমাদের জীবনটা এভাবেই আল্লাহ মনে হয় তৈরি করছে। আর শীতে নদীভাঙনের ভয় থাকে না। গরমে সামান্য বৃষ্টি হলেই ভয় লাগে, কখন যে বসতবাড়ি নদীর মধ্য পড়ে যায়!’

গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনা নদীর দুর্গম চরগুলোতে ২ লক্ষাধিক লোকের বসবাস। গেল বন্যায় নদী ভাঙনের কবলে পড়ে হাজারখানেক পরিবার সব হারিয়েছে। অনেকে আশপাশের জেলার চরে ঠাঁই নিয়েছেন।

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের একজন আলমাস। তিনি জীবনে অনেক ভাঙন দেখেছেন। নদীর সঙ্গে যুদ্ধ করে সারাটা জীবন কেটে গেছে তাঁর। ক্ষুব্ধ আলমাস বলেন, ‘চরের মানুষ সবাই পরিশ্রমী, অন্যর ওপর নির্ভরশীল নয়। তবে চরাঞ্চলের মানুষদের জীবনের উন্নয়নের কথা বলে অনেকেই রাতারাতি কোটিপতি হয়ে গেছে। কয়েকটি সংস্থা আমাদের দেখিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। রাজনৈতিক নেতারাও আমাদের ব্যবহার করে তাঁদের উন্নতি করে, কিন্তু চরের মানুষের উন্নয়নে তাঁরা কাজ করেন না।’

স্থানীয় এড়েন্ডাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, ‘চরের মানুষ খুবই পরিশ্রমী। চর হচ্ছে শস্য উৎপাদনের ভান্ডার। আমাদের এখানকার মানুষের শীতের সময় শীত, গরমের সময় গরম বেশি লাগবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে শীতে বৃদ্ধ মানুষদের কষ্ট বেশি হয়। এ সময় তাঁদের নিয়ে সমস্যা হয়।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত