গলাচিপা উপজেলার চরকাজল ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার শিকার হয়েছেন নৌকা প্রতীকের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইদুর রহমান রুবেল মোল্লা। রুবেলের বাড়িতে হামলার সময় হামলাকারীরা দুটি হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় তাঁরা দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দেন ও প্রার্থীর ঘরে ইট–পাটকেল নিক্ষেপ করেন। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

হামলার সময় রোমেনা নামের অন্তঃসত্ত্বা এক নারী আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় রুবেল ও তাঁর সমর্থকেরা অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিল। এ ছাড়া ওই এলাকার বিভিন্ন গ্রামে নির্বাচনী সহিংসতায় কমপক্ষে ২৬ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত ৬ জনকে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরা হলেন সাহেব আলী, রুবেল, তোতা মিয়া, শাহাবুদ্দিন, মোশারেফ মোল্লা ও আলাউদ্দিন। এদের মধ্যে সাহেব আলী ও রুবেলের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁদের বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।

রুবেল মোল্লা জানান, শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তাঁর বাড়িতে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহীন গাজি ও তাঁর সমর্থক আবু কালাম গাজী, আরিফ গাজী, সাবু গাজী ও সুমন গাজীর নেতৃত্বে ১৫০–২০০ জন হামলা চালান। এ সময় তাঁরা দুইটি হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটান। এ সময় হামলাকারীরা ইট–পাটকেল নিক্ষেপ করলে পুকুর পাড়ে থাকা অন্তঃসত্ত্বা নারী রোমেনা বেগম আহত হন। হামলাকারীরা রুবেল মোল্লাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন ও তাঁর গবাদিপশু, ঘেরের মাছ লুট করে নেওয়ার হুমকি দেন। এ সময় ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে বিজয়ী ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিব মোল্লার লোকজনও হামলায় যোগ দেন। বিষয়টি তখনই জেলা পুলিশ সুপার, গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও স্থানীয় ফাঁড়ি পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে হামলাকারীরা চলে যান।

এর আগে ওই একই সমর্থকেরা সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টায় হাজিরহাট বাজারে ৪ জন সমর্থককে মারধর করেন। এ সময় তাঁরা বাজারের বেশ কয়েকজন নৌকার সমর্থকের দোকানে তালা মেরে বন্ধ করে দেন। এদের মধ্যে ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল কাজী ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিনের দোকানে তালা মারার পাশাপাশি তাঁদের এলাকা ছাড়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। চরকাজল ইউপির নৌকার কর্মী–সমর্থকেরা এখনও হামলার আতঙ্কে রয়েছেন।

উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘এ হামলার ঘটনা কিছুই জানি না। তবে যারাই এ কাজ করেছে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’

এ বিষয়ে জানার জন্য আনারস মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহিন গাজীর ব্যবহৃত একাধিক মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আনোয়ার ইসলাম বলেন, ‘চরকাজলের পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত ছিল। ক্ষতিগ্রস্ত চেয়ারম্যান প্রার্থী রুবেল মোল্লার বাড়ি পরিদর্শন করেছি। এখন ওই এলাকার পরিবেশ কিছুটা শান্ত রয়েছে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। লিখিত অভিযোগ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’