পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যু: ক্ষতিপূরণ পায়নি জনির পরিবার

এস এম নূর মোহাম্মদ, ঢাকা
প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮: ৫০
আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪: ৫৩

রাজধানীর পল্লবী থানায় পুলিশের নির্যাতনে এক দশক আগে নিহত ইশতিয়াক হোসেন জনির পরিবার এখনো ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি। ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর এই মামলার রায়ে পুলিশের তিন কর্মকর্তাকে যাবজ্জীবন, এক লাখ টাকা করে জরিমানা এবং জনির পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

আইনজীবীরা বলছেন, রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিল হাইকোর্টে নিষ্পত্তি না হওয়ায় ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না নিহত জনির পরিবার।

২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মিরপুর ১১ নম্বরে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করায় পুলিশের সোর্স (তথ্যদাতা) সুমনকে সেখান থেকে চলে যেতে বলেছিলেন জনি ও তাঁর ছোট ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি। এতে ক্ষিপ্ত সুমন ফোন করলে পুলিশ এসে জনি, রকিসহ আটজনকে ধরে পল্লবী থানায় নিয়ে যায়। থানায় নির্যাতনের একপর্যায়ে জনিকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় রকি ওই বছরের ৭ আগস্ট নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে আদালতে মামলা করেন। ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রায়ে পল্লবী থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান জাহিদ, দুই এএসআই রাশেদুল ইসলাম ও কামরুজ্জামান মিন্টুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং দুই লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিশের সোর্স সুমন ইসলাম ও মো. রাসেলকে সাত বছর করে কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।

বিচারিক আদালতের রায়ের পর হাইকোর্টে আপিল করেন চার আসামি। কামরুজ্জামান মিন্টু পলাতক থাকায় আপিল করতে পারেননি। দণ্ডপ্রাপ্ত রাসেল জামিনে রয়েছেন।

মামলার বাদী রকি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘১০ বছরে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় ক্ষতিপূরণের অর্থ পাচ্ছি না। ভাইয়ের ছেলে অষ্টম ও মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। আমি চাই, তাদের দায়িত্ব রাষ্ট্র তথা পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হোক। যাতে তারা পড়ালেখা করে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।’

আসামিরা পেপারবুক তৈরি না করায় শুনানিতে দেরি হচ্ছে জানিয়ে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) আইন উপদেষ্টা ও এই মামলার আইনজীবী এস এম রেজাউল করিম বলেন, আসামিদের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করার পর থেকে বিচারিক আদালতের রায় স্থগিত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে ক্ষতিপূরণের টাকা জমা থাকলেও নিহতের স্বজনেরা পাচ্ছেন না। পেপারবুক তৈরি শেষে মামলাটি কার্যতালিকায় এলে দ্রুত নিষ্পত্তি হবে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিৎ চ্যাটার্জি বাপ্পী আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত বছরের ১৯ অক্টোবর এই মামলার শুনানি হয়েছিল। আসামিদের মধ্যে রাশেদুল জরিমানা পরিশোধ করায় তাঁকে পেপারবুক তৈরি করতে এক মাস সময় দেওয়া হয়। জাহিদকে জরিমানা পরিশোধ করতে এবং পেপারবুক তৈরি করতে এক মাস সময় দেওয়া হয়। জরিমানা পরিশোধ না করায় পুলিশের ‘সোর্স’ সুমনের আপিল খারিজ করেন আদালত। তিনি বলেন, কার্যতালিকায় এলে শুনানি হবে। দ্রুত শুনানি করে বিচারিক আদালতের রায় যাতে বহাল থাকে রাষ্ট্রপক্ষ সেই চেষ্টা করবে। আইনে উল্লেখিত ক্ষতিপূরণ অপ্রতুল।

এদিকে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে উল্লেখিত ক্ষতিপূরণকে অপ্রতুল বলছেন আইনজীবীরা। আইনজীবী এস এম রেজাউল করিম বলেন, আইনটি সংশোধন করে মৃত্যুদণ্ড এবং জরিমানা ও ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত