শিক্ষকতা ছেড়ে আ.লীগে বাবুল গড়েন সম্পদের পাহাড়

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০৯: ১০

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন বাবুল মিয়া সরকার। জীবন ছিল একেবারেই সাদামাটা। তবে চাকরির শেষ সময় এসে ২০১৯ সালে শিক্ষকতা ছেড়ে দেন তিনি। কয়েক দিনের মধ্যে নির্বাচিত হন ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। বদলে যায় ভাগ্যের চাকা। সাদামাটা বাবুল হয়ে ওঠেন ধনাঢ্য ব্যক্তি। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের ছত্রচ্ছায়ায় তিনি গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। সম্পর্কে তিনি শরীফের চাচা (বাবার ফুফাতো ভাই)। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীফ প্রতিমন্ত্রী এবং এমপি থাকাকালীন তারাকান্দা নিয়ন্ত্রণ করতেন বাবুল। নিয়োগ, বদলি-বাণিজ্য, জমি দখল এবং তদবির—সবকিছুই করতেন মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে। এসব করে কামিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। তারাকান্দা বাজারে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ডুপ্লেক্স বাড়ি, ময়মনসিংহ নগরীতে ৭ ও ১০ তলা দুটি বাড়ি, ফ্ল্যাট, ঢাকায় ফ্ল্যাট, ফিশারিজ এবং শত একর কৃষিজমির মালিক হয়ে যান তিনি। চড়তে শুরু করেন দামি গাড়িতে। 

গত বছরের ডিসেম্বরে উপজেলার পঙ্গুয়াই উমেদ আলী উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচ নিয়োগে বাবুল মাস্টার, প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে ৬০ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। 

বাড়ইপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুবুল আলম হাসান বলেন, গত বছর পঙ্গুয়াই উমেদ আলী উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক নাঈম হাসান এবং ল্যাব সহায়ক সমির কুমার পালসহ পাঁচ নিয়োগের চূড়ান্ত আলোচনা হয় বাবুলের বাসায়। এতে ৬০ লাখ টাকায় রফাদফা হয়। নিয়োগের সিংহভাগ টাকা নেন তিনি। ভাগ পান বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বাবুল তালুকদার এবং প্রধান শিক্ষক মাহবুব হাসান। বাবুলের কথা ছাড়া কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ হতো না। তাঁর অনিয়ম-দুর্নীতির বিচার হওয়া দরকার। 

নিয়োগে ৬০ লাখ টাকা নেওয়ার বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বাবুল তালুকদার বলেন, ‘ভাই, আমি একটু ব্যস্ত আছি। পরে বিষয়টি নিয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলব।’ পরে আর তিনি কল ধরেননি। 

স্থানীয় আফসার উদ্দিন বলেন, কিছুদিন আগেও তারাকান্দার আতঙ্ক ছিলেন বাবুল। শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর তিনিও গা ঢাকা দিয়েছেন। মানুষ সরকারি চাকরি পায় না। আর বাবুল সরকারি চাকরি ছেড়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। একসময় ছেঁড়া জুতা, জামা পরে বাবুল চললেও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। 

স্থানীয় মফিজুল হক নামে এক ব্যক্তি বাবুলের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তারাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর থেকেই আমাদের ওপর নানাভাবে নির্যাতন চলছে। যদিও দল ক্ষমতায় থাকাকালীন বাবুল মাস্টারের জন্য এক টাকারও সুবিধা পাইনি। শরীফের প্রভাব বিস্তার করে বাবুল মাস্টার সব সেক্টর থেকে দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই দুর্নীতিবাজ বাবুল মাস্টারের জন্য তারাকান্দায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।’ 

সপরিবারে আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় এ বিষয়ে বাবুলের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর ভাই বারেক সরকার বলেন, ‘রাজনৈতিক তদবিরের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য করে বাবুল কিছুটা স্বাবলম্বী হয়েছে। কারও প্রতি সে অন্যায় জুলুম করেনি।’ 

রাজনৈতিক পদ-পদবি ব্যবহার করে যাঁরা কোটি কোটি টাকা ও অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন, তাঁদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সম্পাদক আলী ইউসুফ। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যারা দেশটাকে চুষে খেয়েছে, তাদের কোনোভাবেই ছাড় নয়। 

দুর্নীতি দমন কমিশন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদক সব সময় কাজ করে যাচ্ছে। কেউ যদি অবৈধ উপায়ে অর্থবিত্তের মালিক হয়ে থাকেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত