ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
ভারতে চলছে ১৮ তম লোকসভা নির্বাচন। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে দুই ধাপের ভোট গ্রহণ। সাত দফায় ভোট গ্রহণের তৃতীয় ধাপে ভোট গ্রহণ হবে আগামী ৭ মে। ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো জয়ের আশা করছে। ভোটার টানতে ফের উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রচারকেই হাতিয়ার করেছেন নরেন্দ্র মোদি। ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ এই মন্ত্র ভুলে নির্বাচনের মাঠে মুসলিমদেরই প্রধান প্রতিপক্ষ সাব্যস্ত করেছেন তিনি। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসকে ঘায়েল করতে এই ‘মুসলিম বিদ্বেষের’ অস্ত্রেই ভরসা করছেন সাবেক আরএসএস কর্মী নরেন্দ্র মোদি। বারবার মুসলিমদের ‘অনুপ্রবেশকারী’র তকমা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এই করতে গিয়ে তিনি তথ্যের সত্যাসত্যের ধার ধারছেন না।
এসব কারণে নির্বাচন কমিশনে তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ দিয়েছে কংগ্রেসসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল। নির্বাচন কমিশন অবশ্য বরাবরের মতো নীরব। ফলে নরেন্দ্র মোদিকে রুখতে পারে এমন কোনো শক্তি এই মুহূর্তে ভারতে নেই। পাঁচ দিনের নির্বাচনী প্রচারণায় একদিন বিরতি দিয়ে সমানে ছড়িয়ে যাচ্ছেন মিথ্যা তথ্য, ঘৃণা আর হিংসা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম স্ক্রল গত ২১ এপ্রিল থেকে ২৫ এপ্রিল নির্বাচনী প্রচারণায় নরেন্দ্র মোদির এমন বক্তব্যের ফ্যাক্টচেক নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো।
২১ এপ্রিল, বাঁশওয়াড়া (রাজস্থান)
রাজস্থানের বাঁশওয়াড়ায় নির্বাচনী প্রচারণায় মোদি দাবি করেন, কংগ্রেসের ইশতেহারে বলা হয়েছে, বিবাহিত হিন্দু নারীদের মঙ্গলসূত্রসহ ব্যক্তিগত সম্পদ জরিপ করে বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং এগুলো পুনঃবণ্টন করা হবে। মোদি বলেন, ‘আমার মা ও বোনদের সোনার গয়না শুধু একটি শোপিস নয়, এটি তাঁদের আত্মসম্মানের সঙ্গে জড়িত। তাঁদের মঙ্গলসূত্র তাঁদের জীবনের সঙ্গে জড়িত। আর আপনি ইশতেহারে এটি কেড়ে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন?’
ফ্যাক্ট: কংগ্রেসের ইশতেহারে ব্যক্তিগত সম্পদ এমনকি বিবাহিত নারীদের মঙ্গলসূত্র বাজেয়াপ্ত করার ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই।
নরেন্দ্র মোদি আরও দাবি করেন, বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে কংগ্রেস সরকার ‘দেশের সম্পদের প্রথম অধিকার মুসলমানদের’ এমন ঘোষণা দিয়েছিল।
ফ্যাক্ট: এটি ২০০৬ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন মনমোহন সিংয়ের দেওয়া একটি বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন। মনমোহন সিং তাঁর বক্তব্যে শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘু নয়, তফসিলি সম্প্রদায়সহ অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি, নারী এবং শিশুসহ ভারতের সব সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন।
একই দিনে ভারতীয় মুসলমানদের ইঙ্গিত করে মোদি দাবি করেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে ব্যক্তিগত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ‘অনুপ্রবেশকারী’ এবং ‘যাদের একাধিক সন্তান’ আছে তাদের মধ্যে বিতরণ করে দেবে।
ফ্যাক্ট: ভারতীয় মুসলমানেরা ‘অনুপ্রবেশকারী’, এই দাবির কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। খোদ মোদি সরকার বারবার সংসদকে বলেছে, তাদের কাছে অবৈধ অভিবাসীদের কোনো তথ্য নেই। ভারতীয় মুসলমানদের প্রজনন হার হিন্দুদের তুলনায় বেশি, তবে অন্য সব সম্প্রদায়ের তুলনায় এ হার দ্রুত কমছে। এ ছাড়া প্রজননের সঙ্গে অর্থনৈতিক অবস্থা জড়িত, ধর্ম নয়। ভারতের অধিক উন্নত অঞ্চল তামিলনাড়ুতে মুসলমানদের প্রজনন হার অপেক্ষাকৃত দরিদ্র অঞ্চল বিহারের হিন্দুদের তুলনায় কম।
২২ এপ্রিল, আলিগড়
এদিনও কংগ্রেসের ইশতেহারে ব্যক্তিগত সম্পদ জরিপ ও বাজেয়াপ্ত করার হুমকি সম্পর্কিত দাবির পুনরাবৃত্তি করেন মোদি। এদিন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে ‘কংগ্রেসের শেহজাদা’ উল্লেখ করে মোদি বলেন, ‘তিনি (রাহুল গান্ধী) বলেছেন, দল ক্ষমতায় এলে আপনার আয়, সম্পদ, বাড়ি সম্পর্কে জানতে একটি সমীক্ষা চালানো হবে...এরপর সেসব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত এবং পুনর্বণ্টন করা হবে, তাদের ইশতেহারে এটাই বলা হয়েছে।’
ফ্যাক্ট: কংগ্রেসের ইশতেহারে এমন কিছুর উল্লেখই নেই। গত ৬ এপ্রিল নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশের সময় রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, ‘আমরা দেশের “এক্স–রে” করব। অনগ্রসর শ্রেণি, দলিত, আদিবাসী, সাধারণ দরিদ্র মানুষ এবং সংখ্যালঘুরা জানতে পারবে, দেশে তাদের অংশ কী।’ কংগ্রেস ব্যক্তিগত সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং পুনর্বণ্টন করবে এমন কিছু তিনি বলেননি।
নরেন্দ্র মোদির দাবি: কারও যদি গ্রামে পৈতৃক বাড়ি থাকে এবং একই ব্যক্তি তাঁর সন্তানদের জন্য শহরে ছোট ফ্ল্যাট কিনে থাকেন, তবে কংগ্রেস কোনো একটির মালিকানা বাজেয়াপ্ত করবে। মোদি বলেন, ‘এটা কী মাওবাদী চিন্তা নয়? কংগ্রেস আপনার কষ্টার্জিত সম্পদ ছিনিয়ে নিতে চায়, নারীদের সম্পত্তি লুট করতে চায়।’
ফ্যাক্ট: কংগ্রেসের ইশতেহারে সম্পত্তি পুনর্বণ্টনের একমাত্র উল্লেখটি হলো, ক্ষমতায় এলে তারা এর জন্য একটি যথাযথ কর্তৃপক্ষ গঠনের উদ্যোগ নেবে। যার মাধ্যমে সরকারি জমি এবং সর্বোচ্চ ভূসম্পত্তির মালিকানা সম্পর্কিত আইনের (ভূমি সিলিং আইন) অধীনে উদ্বৃত্ত জমি দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টনের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে। কংগ্রেসের এই উদ্যোগ নতুন কিছু নয়। কারণ, এরই মধ্যে ভারতের ২১টি রাজ্যে ভূমি সিলিং আইন রয়েছে, যা ১৯৬০–এর দশকে দেশটিতে জমির মালিকানা বৈষম্য দূর করার জন্য প্রণয়ন করা হয়।
২৩ এপ্রিল, টঙ্ক–সাওয়াই মধুপুর (রাজস্থান)
নরেন্দ্র মোদির দাবি: কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার পর রাহুল গান্ধীর বক্তৃতায় দেশকে ‘এক্স–রে’ করার প্রসঙ্গ টেনে মোদি বলেন, ‘এর মানে হলো, আপনার বাড়িতে যদি এমন একটি গোলা থাকে, যেখানে আপনি খেতের শস্য সংরক্ষণ করেন সেটিরও “এক্স–রে” করা হবে। আপনার সমস্ত সম্পত্তি, যা আপনার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি, তা বাজেয়াপ্ত করে বিতরণ করে দেওয়া হবে। যদি আপনার দুটি বাড়ি থাকে এবং তাদের এক্স–রে–তে ধরা পড়ে, তাহলে একটি বাড়ি সরকার দখল করবে। এটা কি আপনি মেনে নেবেন?’
ফ্যাক্ট: কংগ্রেসের ইশতেহারে বা দলের নেতাদের বক্তৃতায় ‘সরকারে গেলে জনগণের বাড়ি দখল এবং পুনর্বণ্টনের উদ্যোগ’ বিষয়ে কোনো কথা বলা হয়নি।
একই বক্তৃতায় মোদি আবারও দাবি করেন, দেশের সম্পদের ওপর মুসলমানদের প্রথম অধিকার রয়েছে, এটি মনমোহন জি বলেছেন।
ফ্যাক্ট: মনমোহন সিংয়ের বক্তৃতার লিখিত রূপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আর্কাইভে পাওয়া যায়। সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মনমোহন সিংয়ের বক্তব্য স্পষ্ট করে বিবৃতিও দেওয়া হয়। মনমোহন সিংয়ের বক্তব্যে ‘সম্পদের প্রথম অধিকার’–এর উল্লেখটি শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘু নয়, তফসিলি সম্প্রদায়সহ অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি, নারী এবং শিশুসহ ভারতের সব সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির জন্যই বলা হয়। মনমোহন সিং এই বক্তব্য দিয়েছিলেন হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রাজিন্দর সাচারের নেতৃত্বে একটি কমিটি ভারতে মুসলিমরা শিক্ষা, আয় এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অন্যান্য সম্প্রদায়ের চেয়ে কীভাবে পিছিয়ে রয়েছে সে সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার এক মাস পর।
২৪ এপ্রিল, সাগর (মধ্য প্রদেশ)
এদিন মোদি দাবি করেন, কর্ণাটকে কংগ্রেস ধর্মের ভিত্তিতে অবৈধভাবে ওবিসি কোটায় বা অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জন্য রাখা কোটায় মুসলিম সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করে অন্যদের জন্য কোটা কমিয়ে ফেলেছে।
ফ্যাক্ট: ঘটনাটি ১৯৬২ সালের। ওই সময় কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার ধর্মের ভিত্তিতে নয়, বরং নাগানা গৌড়া কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু অংশকে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। অনগ্রসর সম্প্রদায়ের শ্রেণিবিন্যাস এবং এটি সংরক্ষণের মানদণ্ড নির্ধারণের জন্য ওই সময় একটি প্যানেলও গঠন করা হয়। এ ছাড়া কংগ্রেসেরও অনেক আগে মহীশূরের মহারাজা ১৯২১ সালে মুসলিম কোটা সংরক্ষণ নীতি প্রবর্তন করেন। পরে ১৯৯৪ সালে এইচডি দেবগৌড়ার নেতৃত্বাধীন জনতা দল (ধর্মনিরপেক্ষ) সরকার কর্ণাটকের পুরো মুসলিম সম্প্রদায়কে ওবিসি তালিকার অধীনে নিয়ে আসে এবং তাদের জন্য ৪ শতাংশ উপকোটা তৈরি করে। জনতা দল (ধর্মনিরপেক্ষ) বর্তমানে বিজেপির মিত্র।
প্রসঙ্গত, কর্ণাটক হলো ভারতের ১৪টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি, যেখানে মুসলিম সম্প্রদায়কে শতভাগ সামাজিক ও অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া গুজরাট, যেখানে মোদি ১২ বছর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, সেখানেও ওবিসি কোটায় মুসলিম সম্প্রদায়ের নাম রয়েছে। দুই বছর আগে বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোদি গর্ব করে বলেছিলেন যে, তাঁর রাজ্যে প্রায় ৭০টি মুসলিম পরিবার এই সুবিধা পেয়ে উন্নতি করেছে।
২৪ এপ্রিল, সুরগুজা (ছত্রিশগড়)
মোদি দাবি করেন, কংগ্রেস প্রথম অন্ধ্র প্রদেশে ধর্মের ভিত্তিতে কোটা বাস্তবায়ন এবং সারা দেশে একই কোটা প্রয়োগ করার পরিকল্পনা করেছিল। তারা ধর্মের ভিত্তিতে ১৫ শতাংশ কোটার প্রস্তাব করেছিল। মোদি আরও দাবি করেন, ‘কংগ্রেস আরও প্রস্তাব করেছিল, কিছু মানুষকে তফসিলি সম্প্রদায় এবং অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জন্য রাখা কোটা কমিয়ে ধর্মের ভিত্তিতে কোটার সুযোগ দেওয়া উচিত। কংগ্রেস ২০০৯ সালে ইশতেহারে এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিল। ২০১৪ সালের ইশতেহারেও তারা স্পষ্টভাবে এটি বাস্তবায়নের কথা বলেছিল।
ফ্যাক্ট: অন্ধ্র প্রদেশের কংগ্রেস সরকার ২০০৫ সালে একটি আইন পাস করে, যেখানে মুসলিমদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। হাইকোর্ট আইনটিকে অসাংবিধানিক বলে বাতিল করে দেয়। ওই সময় হাইকোর্টের যুক্তি ছিল, ধর্ম ‘সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া নাগরিকদের শ্রেণি নির্ধারণের একমাত্র ভিত্তি’ হতে পারে না। ২০০৯ সালের ইশতেহারে কংগ্রেস সতর্কতা অবলম্বন করে বলেছিল, তারা সংখ্যালঘুদের জন্য ‘তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে’ কোটা রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
একই বক্তৃতায় মোদি পুনরায় দাবি করেছিলেন, কংগ্রেস কর্ণাটকে ধর্মের ভিত্তিতে কোটা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু যখন বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলো, আমরা কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিয়েছিলাম। যা সংবিধান এবং বাবাসাহেব আম্বেদকরের আদর্শের বিরুদ্ধে ছিল এবং দলিত ও আদিবাসীদের তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।
ফ্যাক্ট: ২০২৩ সালের মার্চে, কর্ণাটকের বিজেপি সরকার মুসলিম অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য ৪ শতাংশ উপকোটা বাতিল করে। কিন্তু দলিত ও আদিবাসীদের জন্য কোটা পুনর্বণ্টন করা হয়নি।
একইদিনে মোদি আরেকটি দাবি করে বলেন, ‘কংগ্রেস বলছে, তারা উত্তরাধিকার কর আরোপ করবে, এমনকি পিতামাতার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের ওপরও কর আরোপ করবে। আপনার জমানো সম্পদ আপনার সন্তানেরা পাবে না এবং কংগ্রেস আপনার কাছ থেকে তা কেড়ে নেবে।’
ফ্যাক্ট: কংগ্রেসের ইশতেহারে উত্তরাধিকার করের কোনো উল্লেখ নেই।
২৪ এপ্রিল, বেতুল (মধ্য প্রদেশ)
মোদি দাবি করেছেন, কংগ্রেস তফসিলি সম্প্রদায়, ওবিসি গোষ্ঠীগুলোর কোটা কেড়ে নিতে চায় এবং দলটি নিজেদের ভোট ব্যাংক শক্তিশালী করতে ব্যক্তিগত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার এবং পুনরায় বিতরণ করার ষড়যন্ত্র করছে।
ফ্যাক্ট: কংগ্রেসের ইশতেহারে ধর্মভিত্তিক কোটা বা সম্পদের পুনর্বণ্টনের কোনো উল্লেখ নেই।
২৫ এপ্রিল, আগ্রা
মোদি দাবি করেছেন, কংগ্রেস ধর্মের ভিত্তিতে কোটা দেওয়ার জন্য ওবিসি বা অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত ২৭ শতাংশ কোটার একটি অংশ ‘চুরি’ করার পরিকল্পনা করেছে।
ফ্যাক্ট: কংগ্রেসের ইশতেহারে ধর্মভিত্তিক কোটা সংরক্ষণের কোনো উল্লেখ নেই।
২৫ এপ্রিল, আওনলা (উত্তর প্রদেশ)
কংগ্রেসের জরিপ এবং নাগরিকদের সম্পত্তি কেড়ে নেওয়ার মিথ্যা দাবির পর মোদি নতুন করে আবার দাবি করেন, ‘শুধু অর্থনৈতিক সমীক্ষা নয়, কংগ্রেসের লক্ষ্য সব প্রতিষ্ঠান ও অফিস জরিপ করা। যদি কোথাও অনগ্রসর শ্রেণি বা দলিত পরিবারের দুজন সদস্যকে চাকরিরত পাওয়া যায়, তাহলে কংগ্রেস একজনের চাকরি কেড়ে নেবে এবং যাদের তারা মনে করে “দেশের সম্পদের প্রথম দাবিদার” তাদের দেবে।’ স্পষ্টত ‘দেশের সম্পদের প্রথম দাবিদার’ বলতে মোদি ভারতের মুসলিমদের বুঝিয়েছেন।
ফ্যাক্ট: কংগ্রেসের ইশতেহারে বা দলটির নেতাদের বক্তৃতায় অনগ্রসর শ্রেণি বা দলিত পরিবারের সদস্যদের চাকরি কেড়ে নেওয়ার কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি। দলটির ইশতেহারে বলা হয়েছে, ‘কংগ্রেস জাতি ও উপজাতি এবং তাদের আর্থসামাজিক অবস্থা বোঝার জন্য দেশব্যাপী একটি আর্থসামাজিক এবং বর্ণ শুমারি করবে। এই জরিপের তথ্যের ভিত্তিতে ইতিবাচক পদক্ষেপের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
ভারতে চলছে ১৮ তম লোকসভা নির্বাচন। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে দুই ধাপের ভোট গ্রহণ। সাত দফায় ভোট গ্রহণের তৃতীয় ধাপে ভোট গ্রহণ হবে আগামী ৭ মে। ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো জয়ের আশা করছে। ভোটার টানতে ফের উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রচারকেই হাতিয়ার করেছেন নরেন্দ্র মোদি। ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ এই মন্ত্র ভুলে নির্বাচনের মাঠে মুসলিমদেরই প্রধান প্রতিপক্ষ সাব্যস্ত করেছেন তিনি। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসকে ঘায়েল করতে এই ‘মুসলিম বিদ্বেষের’ অস্ত্রেই ভরসা করছেন সাবেক আরএসএস কর্মী নরেন্দ্র মোদি। বারবার মুসলিমদের ‘অনুপ্রবেশকারী’র তকমা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এই করতে গিয়ে তিনি তথ্যের সত্যাসত্যের ধার ধারছেন না।
এসব কারণে নির্বাচন কমিশনে তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ দিয়েছে কংগ্রেসসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল। নির্বাচন কমিশন অবশ্য বরাবরের মতো নীরব। ফলে নরেন্দ্র মোদিকে রুখতে পারে এমন কোনো শক্তি এই মুহূর্তে ভারতে নেই। পাঁচ দিনের নির্বাচনী প্রচারণায় একদিন বিরতি দিয়ে সমানে ছড়িয়ে যাচ্ছেন মিথ্যা তথ্য, ঘৃণা আর হিংসা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম স্ক্রল গত ২১ এপ্রিল থেকে ২৫ এপ্রিল নির্বাচনী প্রচারণায় নরেন্দ্র মোদির এমন বক্তব্যের ফ্যাক্টচেক নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো।
২১ এপ্রিল, বাঁশওয়াড়া (রাজস্থান)
রাজস্থানের বাঁশওয়াড়ায় নির্বাচনী প্রচারণায় মোদি দাবি করেন, কংগ্রেসের ইশতেহারে বলা হয়েছে, বিবাহিত হিন্দু নারীদের মঙ্গলসূত্রসহ ব্যক্তিগত সম্পদ জরিপ করে বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং এগুলো পুনঃবণ্টন করা হবে। মোদি বলেন, ‘আমার মা ও বোনদের সোনার গয়না শুধু একটি শোপিস নয়, এটি তাঁদের আত্মসম্মানের সঙ্গে জড়িত। তাঁদের মঙ্গলসূত্র তাঁদের জীবনের সঙ্গে জড়িত। আর আপনি ইশতেহারে এটি কেড়ে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন?’
ফ্যাক্ট: কংগ্রেসের ইশতেহারে ব্যক্তিগত সম্পদ এমনকি বিবাহিত নারীদের মঙ্গলসূত্র বাজেয়াপ্ত করার ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই।
নরেন্দ্র মোদি আরও দাবি করেন, বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে কংগ্রেস সরকার ‘দেশের সম্পদের প্রথম অধিকার মুসলমানদের’ এমন ঘোষণা দিয়েছিল।
ফ্যাক্ট: এটি ২০০৬ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন মনমোহন সিংয়ের দেওয়া একটি বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন। মনমোহন সিং তাঁর বক্তব্যে শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘু নয়, তফসিলি সম্প্রদায়সহ অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি, নারী এবং শিশুসহ ভারতের সব সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন।
একই দিনে ভারতীয় মুসলমানদের ইঙ্গিত করে মোদি দাবি করেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে ব্যক্তিগত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ‘অনুপ্রবেশকারী’ এবং ‘যাদের একাধিক সন্তান’ আছে তাদের মধ্যে বিতরণ করে দেবে।
ফ্যাক্ট: ভারতীয় মুসলমানেরা ‘অনুপ্রবেশকারী’, এই দাবির কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। খোদ মোদি সরকার বারবার সংসদকে বলেছে, তাদের কাছে অবৈধ অভিবাসীদের কোনো তথ্য নেই। ভারতীয় মুসলমানদের প্রজনন হার হিন্দুদের তুলনায় বেশি, তবে অন্য সব সম্প্রদায়ের তুলনায় এ হার দ্রুত কমছে। এ ছাড়া প্রজননের সঙ্গে অর্থনৈতিক অবস্থা জড়িত, ধর্ম নয়। ভারতের অধিক উন্নত অঞ্চল তামিলনাড়ুতে মুসলমানদের প্রজনন হার অপেক্ষাকৃত দরিদ্র অঞ্চল বিহারের হিন্দুদের তুলনায় কম।
২২ এপ্রিল, আলিগড়
এদিনও কংগ্রেসের ইশতেহারে ব্যক্তিগত সম্পদ জরিপ ও বাজেয়াপ্ত করার হুমকি সম্পর্কিত দাবির পুনরাবৃত্তি করেন মোদি। এদিন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে ‘কংগ্রেসের শেহজাদা’ উল্লেখ করে মোদি বলেন, ‘তিনি (রাহুল গান্ধী) বলেছেন, দল ক্ষমতায় এলে আপনার আয়, সম্পদ, বাড়ি সম্পর্কে জানতে একটি সমীক্ষা চালানো হবে...এরপর সেসব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত এবং পুনর্বণ্টন করা হবে, তাদের ইশতেহারে এটাই বলা হয়েছে।’
ফ্যাক্ট: কংগ্রেসের ইশতেহারে এমন কিছুর উল্লেখই নেই। গত ৬ এপ্রিল নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশের সময় রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, ‘আমরা দেশের “এক্স–রে” করব। অনগ্রসর শ্রেণি, দলিত, আদিবাসী, সাধারণ দরিদ্র মানুষ এবং সংখ্যালঘুরা জানতে পারবে, দেশে তাদের অংশ কী।’ কংগ্রেস ব্যক্তিগত সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং পুনর্বণ্টন করবে এমন কিছু তিনি বলেননি।
নরেন্দ্র মোদির দাবি: কারও যদি গ্রামে পৈতৃক বাড়ি থাকে এবং একই ব্যক্তি তাঁর সন্তানদের জন্য শহরে ছোট ফ্ল্যাট কিনে থাকেন, তবে কংগ্রেস কোনো একটির মালিকানা বাজেয়াপ্ত করবে। মোদি বলেন, ‘এটা কী মাওবাদী চিন্তা নয়? কংগ্রেস আপনার কষ্টার্জিত সম্পদ ছিনিয়ে নিতে চায়, নারীদের সম্পত্তি লুট করতে চায়।’
ফ্যাক্ট: কংগ্রেসের ইশতেহারে সম্পত্তি পুনর্বণ্টনের একমাত্র উল্লেখটি হলো, ক্ষমতায় এলে তারা এর জন্য একটি যথাযথ কর্তৃপক্ষ গঠনের উদ্যোগ নেবে। যার মাধ্যমে সরকারি জমি এবং সর্বোচ্চ ভূসম্পত্তির মালিকানা সম্পর্কিত আইনের (ভূমি সিলিং আইন) অধীনে উদ্বৃত্ত জমি দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টনের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে। কংগ্রেসের এই উদ্যোগ নতুন কিছু নয়। কারণ, এরই মধ্যে ভারতের ২১টি রাজ্যে ভূমি সিলিং আইন রয়েছে, যা ১৯৬০–এর দশকে দেশটিতে জমির মালিকানা বৈষম্য দূর করার জন্য প্রণয়ন করা হয়।
২৩ এপ্রিল, টঙ্ক–সাওয়াই মধুপুর (রাজস্থান)
নরেন্দ্র মোদির দাবি: কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার পর রাহুল গান্ধীর বক্তৃতায় দেশকে ‘এক্স–রে’ করার প্রসঙ্গ টেনে মোদি বলেন, ‘এর মানে হলো, আপনার বাড়িতে যদি এমন একটি গোলা থাকে, যেখানে আপনি খেতের শস্য সংরক্ষণ করেন সেটিরও “এক্স–রে” করা হবে। আপনার সমস্ত সম্পত্তি, যা আপনার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি, তা বাজেয়াপ্ত করে বিতরণ করে দেওয়া হবে। যদি আপনার দুটি বাড়ি থাকে এবং তাদের এক্স–রে–তে ধরা পড়ে, তাহলে একটি বাড়ি সরকার দখল করবে। এটা কি আপনি মেনে নেবেন?’
ফ্যাক্ট: কংগ্রেসের ইশতেহারে বা দলের নেতাদের বক্তৃতায় ‘সরকারে গেলে জনগণের বাড়ি দখল এবং পুনর্বণ্টনের উদ্যোগ’ বিষয়ে কোনো কথা বলা হয়নি।
একই বক্তৃতায় মোদি আবারও দাবি করেন, দেশের সম্পদের ওপর মুসলমানদের প্রথম অধিকার রয়েছে, এটি মনমোহন জি বলেছেন।
ফ্যাক্ট: মনমোহন সিংয়ের বক্তৃতার লিখিত রূপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আর্কাইভে পাওয়া যায়। সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মনমোহন সিংয়ের বক্তব্য স্পষ্ট করে বিবৃতিও দেওয়া হয়। মনমোহন সিংয়ের বক্তব্যে ‘সম্পদের প্রথম অধিকার’–এর উল্লেখটি শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘু নয়, তফসিলি সম্প্রদায়সহ অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি, নারী এবং শিশুসহ ভারতের সব সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির জন্যই বলা হয়। মনমোহন সিং এই বক্তব্য দিয়েছিলেন হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রাজিন্দর সাচারের নেতৃত্বে একটি কমিটি ভারতে মুসলিমরা শিক্ষা, আয় এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অন্যান্য সম্প্রদায়ের চেয়ে কীভাবে পিছিয়ে রয়েছে সে সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার এক মাস পর।
২৪ এপ্রিল, সাগর (মধ্য প্রদেশ)
এদিন মোদি দাবি করেন, কর্ণাটকে কংগ্রেস ধর্মের ভিত্তিতে অবৈধভাবে ওবিসি কোটায় বা অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জন্য রাখা কোটায় মুসলিম সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করে অন্যদের জন্য কোটা কমিয়ে ফেলেছে।
ফ্যাক্ট: ঘটনাটি ১৯৬২ সালের। ওই সময় কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার ধর্মের ভিত্তিতে নয়, বরং নাগানা গৌড়া কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু অংশকে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। অনগ্রসর সম্প্রদায়ের শ্রেণিবিন্যাস এবং এটি সংরক্ষণের মানদণ্ড নির্ধারণের জন্য ওই সময় একটি প্যানেলও গঠন করা হয়। এ ছাড়া কংগ্রেসেরও অনেক আগে মহীশূরের মহারাজা ১৯২১ সালে মুসলিম কোটা সংরক্ষণ নীতি প্রবর্তন করেন। পরে ১৯৯৪ সালে এইচডি দেবগৌড়ার নেতৃত্বাধীন জনতা দল (ধর্মনিরপেক্ষ) সরকার কর্ণাটকের পুরো মুসলিম সম্প্রদায়কে ওবিসি তালিকার অধীনে নিয়ে আসে এবং তাদের জন্য ৪ শতাংশ উপকোটা তৈরি করে। জনতা দল (ধর্মনিরপেক্ষ) বর্তমানে বিজেপির মিত্র।
প্রসঙ্গত, কর্ণাটক হলো ভারতের ১৪টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি, যেখানে মুসলিম সম্প্রদায়কে শতভাগ সামাজিক ও অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া গুজরাট, যেখানে মোদি ১২ বছর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, সেখানেও ওবিসি কোটায় মুসলিম সম্প্রদায়ের নাম রয়েছে। দুই বছর আগে বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোদি গর্ব করে বলেছিলেন যে, তাঁর রাজ্যে প্রায় ৭০টি মুসলিম পরিবার এই সুবিধা পেয়ে উন্নতি করেছে।
২৪ এপ্রিল, সুরগুজা (ছত্রিশগড়)
মোদি দাবি করেন, কংগ্রেস প্রথম অন্ধ্র প্রদেশে ধর্মের ভিত্তিতে কোটা বাস্তবায়ন এবং সারা দেশে একই কোটা প্রয়োগ করার পরিকল্পনা করেছিল। তারা ধর্মের ভিত্তিতে ১৫ শতাংশ কোটার প্রস্তাব করেছিল। মোদি আরও দাবি করেন, ‘কংগ্রেস আরও প্রস্তাব করেছিল, কিছু মানুষকে তফসিলি সম্প্রদায় এবং অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জন্য রাখা কোটা কমিয়ে ধর্মের ভিত্তিতে কোটার সুযোগ দেওয়া উচিত। কংগ্রেস ২০০৯ সালে ইশতেহারে এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিল। ২০১৪ সালের ইশতেহারেও তারা স্পষ্টভাবে এটি বাস্তবায়নের কথা বলেছিল।
ফ্যাক্ট: অন্ধ্র প্রদেশের কংগ্রেস সরকার ২০০৫ সালে একটি আইন পাস করে, যেখানে মুসলিমদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। হাইকোর্ট আইনটিকে অসাংবিধানিক বলে বাতিল করে দেয়। ওই সময় হাইকোর্টের যুক্তি ছিল, ধর্ম ‘সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া নাগরিকদের শ্রেণি নির্ধারণের একমাত্র ভিত্তি’ হতে পারে না। ২০০৯ সালের ইশতেহারে কংগ্রেস সতর্কতা অবলম্বন করে বলেছিল, তারা সংখ্যালঘুদের জন্য ‘তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে’ কোটা রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
একই বক্তৃতায় মোদি পুনরায় দাবি করেছিলেন, কংগ্রেস কর্ণাটকে ধর্মের ভিত্তিতে কোটা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু যখন বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলো, আমরা কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিয়েছিলাম। যা সংবিধান এবং বাবাসাহেব আম্বেদকরের আদর্শের বিরুদ্ধে ছিল এবং দলিত ও আদিবাসীদের তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।
ফ্যাক্ট: ২০২৩ সালের মার্চে, কর্ণাটকের বিজেপি সরকার মুসলিম অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য ৪ শতাংশ উপকোটা বাতিল করে। কিন্তু দলিত ও আদিবাসীদের জন্য কোটা পুনর্বণ্টন করা হয়নি।
একইদিনে মোদি আরেকটি দাবি করে বলেন, ‘কংগ্রেস বলছে, তারা উত্তরাধিকার কর আরোপ করবে, এমনকি পিতামাতার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের ওপরও কর আরোপ করবে। আপনার জমানো সম্পদ আপনার সন্তানেরা পাবে না এবং কংগ্রেস আপনার কাছ থেকে তা কেড়ে নেবে।’
ফ্যাক্ট: কংগ্রেসের ইশতেহারে উত্তরাধিকার করের কোনো উল্লেখ নেই।
২৪ এপ্রিল, বেতুল (মধ্য প্রদেশ)
মোদি দাবি করেছেন, কংগ্রেস তফসিলি সম্প্রদায়, ওবিসি গোষ্ঠীগুলোর কোটা কেড়ে নিতে চায় এবং দলটি নিজেদের ভোট ব্যাংক শক্তিশালী করতে ব্যক্তিগত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার এবং পুনরায় বিতরণ করার ষড়যন্ত্র করছে।
ফ্যাক্ট: কংগ্রেসের ইশতেহারে ধর্মভিত্তিক কোটা বা সম্পদের পুনর্বণ্টনের কোনো উল্লেখ নেই।
২৫ এপ্রিল, আগ্রা
মোদি দাবি করেছেন, কংগ্রেস ধর্মের ভিত্তিতে কোটা দেওয়ার জন্য ওবিসি বা অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত ২৭ শতাংশ কোটার একটি অংশ ‘চুরি’ করার পরিকল্পনা করেছে।
ফ্যাক্ট: কংগ্রেসের ইশতেহারে ধর্মভিত্তিক কোটা সংরক্ষণের কোনো উল্লেখ নেই।
২৫ এপ্রিল, আওনলা (উত্তর প্রদেশ)
কংগ্রেসের জরিপ এবং নাগরিকদের সম্পত্তি কেড়ে নেওয়ার মিথ্যা দাবির পর মোদি নতুন করে আবার দাবি করেন, ‘শুধু অর্থনৈতিক সমীক্ষা নয়, কংগ্রেসের লক্ষ্য সব প্রতিষ্ঠান ও অফিস জরিপ করা। যদি কোথাও অনগ্রসর শ্রেণি বা দলিত পরিবারের দুজন সদস্যকে চাকরিরত পাওয়া যায়, তাহলে কংগ্রেস একজনের চাকরি কেড়ে নেবে এবং যাদের তারা মনে করে “দেশের সম্পদের প্রথম দাবিদার” তাদের দেবে।’ স্পষ্টত ‘দেশের সম্পদের প্রথম দাবিদার’ বলতে মোদি ভারতের মুসলিমদের বুঝিয়েছেন।
ফ্যাক্ট: কংগ্রেসের ইশতেহারে বা দলটির নেতাদের বক্তৃতায় অনগ্রসর শ্রেণি বা দলিত পরিবারের সদস্যদের চাকরি কেড়ে নেওয়ার কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি। দলটির ইশতেহারে বলা হয়েছে, ‘কংগ্রেস জাতি ও উপজাতি এবং তাদের আর্থসামাজিক অবস্থা বোঝার জন্য দেশব্যাপী একটি আর্থসামাজিক এবং বর্ণ শুমারি করবে। এই জরিপের তথ্যের ভিত্তিতে ইতিবাচক পদক্ষেপের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারকে ঘিরে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নাম বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। আন্দোলনের সময় গত ১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল...
১৩ ঘণ্টা আগেছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর তিনদিন পর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয় ৮ আগস্ট। এরপর ১০০ দিন পার করেছে এই সরকার...
১৮ ঘণ্টা আগেবর্তমানে দিল্লিতেই অবস্থান করছেন হাসিনা। ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুতির পর তিনি আর প্রকাশ্যে আসেননি। সম্প্রতি ফেসবুকে তাঁর ১৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ভারতে তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে।
৩ দিন আগেসম্প্রতি ভাইরাল হওয়া এমন একটি কল রেকর্ডে শেখ হাসিনার কণ্ঠে দাবি করা হয়, ‘চাকরির বয়স নিয়ে আন্দোলন করতে যমুনার সামনে গেল, সাথে সাথে গুলি করল। সেখানে একজন মারা গেল এবং পিটিয়ে উঠিয়ে দিল।’
৩ দিন আগে