ফিলিস্তিন ইস্যুতে বয়কট এড়াতেই কি স্টারবাকসের তরমুজ ডিজাইনের মগ

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ২০: ৩৯

গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্বিচার হামলা শুরুর পর গত বছরের নভেম্বরে ইসরায়েলি দখলদার সেনাবাহিনীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক কফি চেইনশপ স্টারবাকস। এই ঘোষণার পর বিশ্বব্যাপী স্টারবাকস বয়কটের ডাক দেয় বিডিএস (বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট অ্যান্ড স্যাংকশন) মুভমেন্ট ও ফিলিস্তিনিপন্থী মানুষেরা। এই ঘোষণার পর কোম্পানিটি ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়ে। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে মাত্র ১৯ দিনে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ কমে যায়, যা ১১ বিলিয়ন ডলারের সমান বলে জানান অর্থনীতি বিশ্লেষকেরা। 

ফিলিস্তিন–ইসরায়েল ইস্যুতে স্টারবাকসের এই অবস্থানের মধ্যে সম্প্রতি মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে (সাবেক টুইটার) কিছু ব্যবহারকারী স্টারবাকস লেখা সংবলিত তরমুজ ডিজাইনের একটি মগের ছবি শেয়ার করে লিখছেন, ‘স্টারবাকস তরমুজ ডিজাইনের নতুন এই মগ বাজারে এনে আমাদের বোকা বানানোর চেষ্টা করছে, আমরা তোমাদের বয়কট করেই যাব।’ 

তরমুজের সঙ্গে ফিলিস্তিনের সম্পর্ক কী?
১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর, ইসরায়েল যখন পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং পূর্ব জেরুজালেম দখল করে, তখন ইসরায়েল অধিকৃত ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনি পতাকা নিষিদ্ধ করে। ফিলিস্তিনের পতাকা প্রদর্শন ফৌজদারি অপরাধ ঘোষণা করে।  ওই সময় নিষেধাজ্ঞা এড়ানোতে ফিলিস্তিনিরা তরমুজ ব্যবহার করতে শুরু করেন। কারণ, তরমুজের ভেতরের অংশ ফিলিস্তিনি পতাকার জাতীয় রং লাল, কালো, সাদা এবং সবুজ বহন করে।

ক্রমেই তরমুজ শিল্পমাধ্যম, টিশার্ট, গ্রাফিতি, পোস্টার এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ার ইমোজি হিসেবেও ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হতে থাকে। 

যদিও পরে ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি পতাকা প্রদর্শনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এই চুক্তির অধীনেই ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী সংগঠন (পিএলও) পরস্পরকে স্বীকৃতি দেয়। এটি ছিল দশকব্যাপী ইসরায়েল–ফিলিস্তিনি সংঘাত সমাধানের চেষ্টায় প্রথম আনুষ্ঠানিক চুক্তি। ওই সময় ফিলিস্তিনের পতাকাটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে গৃহীত হয়। 

তবে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভির পুলিশকে ফিলিস্তিনি পতাকা বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা দেন। তখন তরমুজ আবারও আলোচনায় আসে। ওই বছরের জুনে ইসরায়েল ভিত্তিক আরব–ইসরায়েলি সংহতি সংগঠন জাজিম পতাকা বাজেয়াপ্ত ও গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একটি প্রচার শুরু করে। এই প্রচারের আওতায় ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবের ১৬টি ট্যাক্সিতে তরমুজের ছবি লাগিয়ে দেয় সংগঠনটি। সংগঠনটি ছবিগুলোতে লেখে দেয়, ‘এটা ফিলিস্তিনের পতাকা নয়।’

বয়কট এড়াতে স্টারবাকস কি সত্যিই তরমুজ ডিজাইনের মগ এনেছে?
ভাইরাল মগের ছবিটি রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে স্টারবাকসের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২০২৩ সালের ৫ মে পোস্ট করা একটি রিল ভিডিওতে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। এর একদিন পরই শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকের একটি ভিডিওতে একই মগের ছবি দেখা যায়। অপরদিকে ইসরায়েল–ফিলিস্তিন চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে নজিরবিহীন হামলা চালানোর পর। গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার বোমা হামলায় এরই মধ্যে ২০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। 

যুক্তরাজ্যে গ্রীষ্মকালীন প্রচারণার অংশ হিসেবে ২০২৩ সালের মে মাসে তরমুজ ডিজাইনের মগ উন্মোচন করে স্টার বাকস। ছবি: স্টার বাকস ইনস্টাগ্রামমগটি প্রসঙ্গে স্টারবাকসের মুখপাত্র জ্যাসি অ্যান্ডারসন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান স্নোপসকেও একই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি স্নোপসকে বলেন, চলমান ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধের সঙ্গে এই মগের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি যুক্তরাজ্যে গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে ২০২৩ সালের মে মাসে উন্মোচন করা হয়েছিল। 

অর্থাৎ ব্যবসায়িক ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে স্টারবাকস তরমুজ ডিজাইনের মগ এনেছিল এটি সত্য। তবে সাম্প্রতিক বয়কট এড়াতে তারা নতুন করে এমন কোনো মগ আনেনি। এটি সংঘাত শুরুর আগে থেকেই স্টারবাকসের এ ধরনের মগ বাজারে ছিল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত