আইয়ুব আলীর কি সত্যিই সবুজ নামে ছেলে আছে

সাহস মোস্তাফিজ
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২২, ১৭: ২১
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২২, ১৮: ০১

গুলশান, বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় আজকাল দেখা যায় ‘ভিক্ষুক মুক্ত এলাকা’ লেখা সাইনবোর্ড। ভিক্ষাবৃত্তি এ শহরে অনেকেরই পেশা, সেটি বোধ করি কারও অজানা নয়। এই পেশাজীবী ভিক্ষুকদের জন্য সত্যিকারের অনাহারী ও অসহায় মানুষেরাই বরং অনেক সময় সাহায্য থেকে বঞ্চিত হন।

আজকাল রাস্তাঘাট ও বাসা-বাড়ি ছাপিয়ে ডিজিটাল ভিক্ষাবৃত্তির এক মহোৎসব দেখা যায় ফেসবুকে। আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে নানা সময়ে বেরিয়ে এসেছে, এসব সাহায্য প্রার্থনার আড়ালে চলছে রমরমা বাণিজ্য।

বীভৎস ছবি ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তির মানবিক বর্ণনা দিয়ে সাহায্য প্রার্থনার এই পোস্টগুলোতে জুড়ে দেওয়া হয় মোবাইল নম্বর। টাকা পাঠানোর জন্য উল্লেখ করা সেসব মোবাইল কখনোই খোলা পাওয়া যায় না; খোলা থাকলেও কল ধরা হয় না।

অন্যদিকে ছবিগুলো রিভার্স ইমেজ সার্চ প্রযুক্তিতে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ছবির চরিত্রটি হয়তো আগেই সুস্থ হয়ে গেছেন, নয়তো তিনি বাংলাদেশেরই নন।

একই নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন নম্বর ব্যবহার করে সাহায্যের আবেদন ঘুরে বেড়াচ্ছে ফেসবুকেঅনুসন্ধানে মিলল সবুজ নামের এক শিশুর সন্ধান। এই নামে আদৌ কোনো অসুস্থ শিশু আছে কি-না, সেটি জানা না গেলেও ফেসবুকে দেখা মিলল একই নামের অন্তত পাঁচ শিশুর আলাদা-আলাদা ছবি। ফেসবুকে প্রচারিত সবুজের ছবি ভিন্ন ভিন্ন হলেও সবার বাবার নাম ও পেশা এক। অসুস্থতার বর্ণনাও হুবহু এক। পার্থক্য শুধু টাকা পাঠানোর জন্য দেওয়া নম্বরগুলোতে।

একই নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন নম্বর ব্যবহার করে সাহায্যের আবেদন ঘুরে বেড়াচ্ছে ফেসবুকেপ্রতিটি পোস্টে সবুজ নামের পাঁচ মাস বয়সী ওই শিশুর বাবার নাম লেখা হচ্ছে আইয়ুব আলী। পোস্টগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে, আইয়ুব আলীর বাড়ি গাজীপুর সদরের নলজানি গ্রামে। তিনি একজন গার্মেন্টস শ্রমিক। বাড়ি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার কাচারিবাজার গ্রামে। গত প্রায় চার মাস থেকে শিশুটির পায়ের ভেতরে টিউমার বড় হতে থাকে। এত দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও টিউমারের বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।

যাচাই করে দেখা যায়, পোস্টগুলোর সঙ্গে ব্যবহার করা ছবিগুলো সবুজ নামের কোনো শিশুর নয়। এগুলো ভারতের কেটো নামের একটি ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া। কেটো নামের এই ওয়েবসাইট অসুস্থ রোগীর তথ্য ও ছবি দিয়ে অর্থ সাহায্য সংগ্রহ করে। সেখানে ওই রোগীর চিকিৎসা-সংক্রান্ত সকল তথ্যও জুড়ে দেওয়া হয়। রোগী সুস্থ হয়ে গেলে সেটিও জানিয়ে দেওয়া হয়।

 

কেটো নামের ওয়েবসাইট থেকেই মূলত ছবিগুলো সংগ্রহ করা হয়পোস্টে উল্লেখ থাকা ফোন নম্বরগুলোতে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু প্রতিটি নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। মূলত এই নম্বরগুলো বিকাশ বা নগদ অ্যাকাউন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ফলে অধিকাংশ সময় এগুলো বন্ধ থাকে।  সাধারণ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অনেকেই তাদের এই কৌশলের জালে ধরা পড়েন, সাহায্য পাঠান ওই সব নম্বরে।

এর আগেও আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে এমন একাধিক প্রতারণামূলক পোস্টের প্রমাণ উঠে এসেছে। এ রকম কিছু প্রতিবেদন পড়ুন:

সম্প্রতি ভিন্ন ঘটনা থেকে ছবি সংগ্রহ করে সেটি ব্যবহার করে মিথ্যে গল্প লিখে ফেসবুকে সাহায্য চাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে ফেসবুকে অসহায় কোনো ব্যক্তির ছবি দেখে সেখানে উল্লেখ করা ফোন নম্বরে টাকা পাঠানোর আগে সেটি যাচাই করে নেওয়া প্রয়োজন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে, তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা—[email protected]

আরও পড়ুন ফ্যাক্টচেক:

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত