শ্বাস ধরে রেখে কি ফুসফুসের সুরক্ষা যাচাই হয়? যা বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮: ০৪
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৯: ০৬

সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে প্রায়ই ‘আপনার ফুসফুসের অবস্থা পরীক্ষা করুন’ শিরোনামে একটি ভিডিও প্রচার হতে দেখা যায়। এতে ফুসফুসের অবস্থা পরীক্ষার জন্য তিনটি ধাপ অনুসরণ করতে বলা হয়। 

এগুলো হলো—

প্রথমে একজন ব্যক্তিকে শ্বাস নিতে বলা হয়। এরপর একটি পয়েন্ট (এ) থেকে আরেকটি পয়েন্টে (বি) শ্বাস ধরে রাখতে বলা হয়। পরের ধাপে শ্বাস ছেড়ে দিতে বলা হয়। দাবি করা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি এ পয়েন্ট থেকে বি পয়েন্টে শ্বাস ধরে রাখতে পারে, তাহলে ওই ব্যক্তির ফুসফুস ভালো আছে। এ পয়েন্ট থেকে বি পয়েন্টে শ্বাস ধরে রাখার সময় ২৪ সেকেন্ড। 

কিন্তু আসলেই কি এভাবে শ্বাস ধরে রেখে ফুসফুসের অবস্থা নির্ণয় করা যায়? এর কি কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে? 

স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট মেডিকেল নিউজ টুডে থেকে জানা যায়, একজন সাধারণ মানুষ গড়ে ৩০ থেকে ৯০ সেকেন্ড পর্যন্ত শ্বাস ধরে রাখতে পারে। তবে নানা কারণে যেমন ধূমপান, স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতি, শ্বাস প্রশিক্ষণ ইত্যাদির জন্য এই সময় কমতে পারে আবার বাড়তেও পারে। ওয়েবসাইটটিতে শ্বাস ধরে রাখার বেশ কিছু উপকার এবং ঝুঁকির বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে শ্বাস ধরে রাখার মাধ্যমে ফুসফুসের অবস্থা নির্ণয় করার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।

ফুসফুসের অবস্থা নির্ণয়ের দাবির উপায়টি নিয়ে অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ইরভিং মেডিকেল সেন্টারের ওয়েবসাইটে এক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

এতে ফুসফুস ঠিক অবস্থায় আছে কি না, সে সম্পর্কে জানার উপায় নিয়ে বলা হয়েছে, যদি কেউ স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে, শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা অনুভব না করে, তাহলে ধরে নেওয়া যায়, ওই ব্যক্তির ফুসফুস প্রায় ঠিক আছে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফুসফুসের রোগ হতে পারে উপসর্গ দেখানোর আগেই। ফুসফুসের রোগের সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ হলো শ্বাসকষ্ট এবং কাশি। তাই কারও এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। 

ফুসফুসের স্বাস্থ্য ও ফুসফুস-সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগ সুরক্ষায় কাজ করা আমেরিকান লাং অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইট থেকে ফুসফুসের কার্যকারিতা পরীক্ষার বেশ কিছু উপায় খুঁজে পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ পরীক্ষা হলো স্পাইরোমেট্রি। স্পাইরোমেট্রির মাধ্যমে এক ব্যক্তির ফুসফুস কী পরিমাণ বাতাস ধারণ করতে পারে, তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। একই সঙ্গে এই পরীক্ষার মাধ্যমে এক ব্যক্তি কত জোরে ফুসফুস থেকে বাতাস বের করতে পারে, তা-ও যাচাই করে দেখা হয়। ফুসফুসের বাতাস ধারণক্ষমতাকে প্রভাবিত করে এমন রোগ শনাক্তে স্পাইরোমেট্রি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) বা হাঁপানির মতো শ্বাসনালিকে প্রভাবিত করে এমন রোগ শনাক্তেও স্পাইরোমেট্রি ব্যবহৃত হয়।

ফুসফুসের কার্যকারিতা পরীক্ষার আরেকটি উপায় হলো ‘লাং ভলিউম’ পরীক্ষা। এই পরীক্ষার মাধ্যমে ফুসফুসে বাতাসের ঘনত্ব পরিমাপ করে দেখা হয়। ডিফিউজিং ক্যাপাসিটি টেস্ট নামে আরেকটি ফুসফুসের কার্যকারিতা পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তপ্রবাহে কত সহজে অক্সিজেন প্রবেশ করে, তা পরিমাপ করে দেখা হয়। এ ছাড়া ওয়েবসাইট থেকে এক্সারসাইজ টেস্টিং নামের আরেকটি পরীক্ষার কথা জানা যায়। এই পরীক্ষা শ্বাসকষ্টের কারণ মূল্যায়নে সহায়তা করে। এই পরীক্ষা করা হয় ছয় মিনিট হাঁটা বা কার্ডিওপালমোনারি টেস্টের মাধ্যমে। 

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের ওয়েবসাইট থেকেও এই পরীক্ষাগুলো সম্পর্কে জানা যায়। এসব পরীক্ষার বিষয়ে ওয়েবসাইটে বলা হয়, এগুলোর অধিকাংশ মুখের সঙ্গে যন্ত্র বসিয়ে করা হয়। এই যন্ত্রের আরেকটি অংশ অন্য যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকে, যেটি বিভিন্ন ধরনের পরিমাপ করতে পারে।

ফুসফুসের সুস্থতা যাচাইয়ের পদ্ধতির একটি স্পাইরোমেট্রি। ছবি: ভেরি ওয়েল হেলথ ওপরের আলোচনা থেকে শ্বাস ধরে রেখে ফুসফুসের অবস্থা পরীক্ষার পদ্ধতিটি সম্পর্কে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং অনুসন্ধানে দেখা যায়, দেশীয় সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভিডিওগুলো ২০২১ সাল থেকে প্রচার হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক পরিসরে করোনা সংক্রমণের বছর অর্থাৎ ২০২০ সাল থেকেই ভিডিওগুলো প্রচার হতে দেখা যায়। 

তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শ্বাস ধরে রেখে ফুসফুসের সুরক্ষা নিশ্চিত করা করা যায় না বলে জানায়। প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের ৩০ মার্চ দেওয়া এক পোস্টে জানায়, কাশি বা অন্য কোনো অস্বস্তি ছাড়াই ১০ সেকেন্ড বা তার বেশি সময় শ্বাস ধরে রাখতে সক্ষম হওয়ার অর্থ এই নয় যে আপনি করোনাভাইরাস রোগ বা অন্য কোনো ফুসফুসের রোগ থেকে মুক্ত। 

শ্বাস ধরে রেখে ফুসফুসের সুস্থতা যাচাই করা যায় না। ছবি: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফেসবুক পোস্টঅর্থাৎ কেবল শ্বাস ধরে রেখে ফুসফুসের সুস্থতা যাচাই করে রাখা সম্ভব নয়। কারণ, আগেই বলা হয়েছে, মানুষ গড়ে ৩০ থেকে ৯০ সেকেন্ড পর্যন্ত সাধারণভাবে শ্বাস ধরে রাখতে পারে। 

এ ছাড়া পদ্ধতিটি কতটুকু কার্যকর, তা কমপক্ষে নিয়মিত ধূমপায়ী ও অধূমপায়ী অন্তত ১০ ব্যক্তির ওপর যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ। এতে দেখা গেছে, নির্বিশেষে প্রত্যেকেই ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওর এ পয়েন্ট থেকে বি পয়েন্টে শ্বাস ধরে রেখে শেষ করতে পেরেছেন। সর্বোপরি প্রমাণিত হয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত হয়ে আসা ভিডিওটিতে ফুসফুসের কার্যকারিতা যাচাইয়ের দাবি করা পদ্ধতিটির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত