ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
এর আগে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ ম-১০ম শ্রেণির জাতীয় কারিকুলামের সহায়ক শিক্ষা উপকরণ হিসেবে দেশের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শাহানা কার্টুন ব্যবহার করা হয়েছে। নতুন কারিকুলামেও এটি ব্যবহারের জন্য এরই মধ্যে কার্টুনের সিডি প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিতরণ করতে জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়েছে। এই কার্টুনে ট্রান্সজেন্ডারের পক্ষে বলা হয়েছে। এমন দাবিতে কিছু পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে ভাইরাল একটি পোস্টে বলা হয়েছে, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড থেকে ক্লাসরুমে দেখাতে বলা শাহানা কার্টুনে শেখানো হচ্ছে ট্রান্সজেন্ডারবাদ। শাহানা কার্টুন ৬ষ্ঠ থেকে ৯ ম-১০ম শ্রেণির জাতীয় কারিকুলামের সহায়ক শিক্ষা উপকরণ হিসেবে দেশের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ব্যবহার করা হবে। এরই মধ্যে শাহানা কার্টুনের সিডি প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিতরণের লক্ষ্যে সকল জেলা শিক্ষা অফিসে প্রেরণ করা হয়েছে।’ পোস্টটিতে একটি ইউটিউব চ্যানেলের থাম্বনেইল ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। ইউটিউব ভিডিওটির শিরোনাম-‘Shahana Cartoon | Part-03 | শাহানা কার্টুন | The Beauty of Diversity’। ছবির ওপর লেখা, ‘কোনো মেয়ে যদি ছেলের মতো চলাফেরা করে, তাতে তো কারও কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।’ এটি ছবির দুই ব্যক্তির কথপোকথনের একটি অংশ।
শাহানা কার্টুনটি সম্পর্কে গত ৪ ফেব্রুয়ারি মেহেদী হাসান নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া একটি পোস্টে দাবি করা হয়, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড শাহানা কার্টুনের সিডি সব স্কুলে দেখাতে বলেছে। শাহানা কমিক ইউএনএফপির একটা প্রজেক্ট।’ পোস্টটি আজ বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টা পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি শেয়ার হয়েছে।
শাহানা কার্টুন কি
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) নির্মিত শাহানা কার্টুনের বিষয়বস্তু-বয়ঃসন্ধিকালীন যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার এবং সবার জন্য লিঙ্গসমতা। সরকারের সংযুক্ত পাঠপরিকল্পনা ও গাইডলাইন অনুযায়ী, শাহানা কার্টুন ৬ষ্ঠ থেকে ৯ ম-১০ম শ্রেণির জাতীয় কারিকুলামের সহায়ক শিক্ষা উপকরণ হিসেবে দেশের সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ব্যবহার করা হবে। আগের শিক্ষাক্রমের সহায়ক শিক্ষা উপকরণ হিসেবে এটি সরবরাহ করা হয়েছিল।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ৫ সেকেন্ডের ভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি প্রকৃতপক্ষে শাহানা কার্টুনের ১৪ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের একটি পর্বের অংশ। পর্বটির নাম ‘Shahana Cartoon | The Beauty of Diversity।’ ভাইরাল ক্লিপটি কার্টুনটির ২ মিনিট ১৫ সেকেন্ড থেকে ৪ মিনিট ৪০ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশ বিশেষ নেওয়া। পর্বটিতে দেখানো কিশোরী চরিত্রটির নাম সুমি।
নতুন শিক্ষাক্রমেই কি শাহানা কার্টুন শিক্ষা সহায়ক?
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে বিবিসি বাংলাতে ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর ‘যৌন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা: বাংলাদেশে মাধ্যমিক স্কুলের এক কোটি শিক্ষার্থীকে কী পড়ানো হবে?’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্কুলে বয়ঃসন্ধিকালীন যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, যা ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে শিক্ষার আওতায় আসবে, আর এ জন্য মূল উপকরণ হিসেবে হিসেবে ব্যবহৃত হবে ইউএনএফপিএ নির্মিত শাহানা কার্টুন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য বিবিসি বাংলাকে ওই সময় বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে শেখানোর জন্য উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হবে ইউএনএফপিএ’র শাহানা কার্টুন, যা ইতিমধ্যেই উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষা অফিসগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পরে আরও খোঁজে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) দিল আফরোজ বিনতে আছির স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়। ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিটিতে বলা হয়, ইউএনএফপিএ নির্মিত শাহানা কার্টুনের বিষয়বস্তু হলো, বয়ঃসন্ধিকালীন যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার এবং সবার জন্য জেন্ডার সমতা। সংযুক্ত পাঠপরিকল্পনা ও গাইডলাইন অনুযায়ী শাহানা কার্টুন ৬ষ্ঠ থেকে ৯ ম-১০ম শ্রেণির জাতীয় কারিকুলামের সহায়ক শিক্ষা উপকরণ হিসেবে দেশের সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ব্যবহার করা হবে। ইতিমধ্যে শাহানা কার্টুনের সিডি প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিতরণের লক্ষ্যে সকল জেলা শিক্ষা অফিসে প্রেরণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিটিতে শাহানা কার্টুন নিয়ে পাঠপরিকল্পনা ও শ্রেণিকক্ষে শাহানা কার্টুন ব্যবহারের নির্দেশিকাও সংযুক্তি হিসেবে রয়েছে। শাহানা কার্টুন ব্যবহারের নির্দেশিকাটিতে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ ম-১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শ্রেণিভিত্তিক বিষয় ও পাঠ্যপুস্তক অধ্যায়ের নাম রয়েছে। যেমন, ষষ্ঠ শ্রেণিতে শারীরিক শিক্ষা, সপ্তম শ্রেণিতে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, অষ্টম শ্রেণিতে শারীরিক শিক্ষা, নবম-দশম শ্রেণিতে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ের সঙ্গে শাহানা কার্টুনটি দেখাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শাহানা কার্টুন ব্যবহারের নির্দেশিকাটিতে এই বিষয় সম্পর্কিত অধ্যায়গুলোর নামও উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া ২০২৪ সালের নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রণীত মাধ্যমিক পর্যায়ের বইগুলোতে ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণিতে শারীরিক শিক্ষা, সপ্তম ও নবম শ্রেণিতে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় নামে কোনো বিষয় পাওয়া যায়নি। এর পরিবর্তে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বই রয়েছে। শাহানা কার্টুন ব্যবহারের নির্দেশিকাটিতে যেই অধ্যায়গুলোর নাম রয়েছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইগুলোতে এই অধ্যায়গুলো নেই।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সাল থেকে দেশে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ওই বছরের জানুয়ারি থেকে ১ ম,৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হয়। ২০২৪ সাল থেকে ২ য়,৩ য়, ৮ম ও ৯ম শ্রেণিতে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টগুলোর দাবির বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ। শাহানা কার্টুন বর্তমানে স্কুলে দেখানো হচ্ছে কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এনসিটিবিতে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কনসার্নড না।’
এনসিটিবির জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে যোগাযোগ করতে বলেন।
পরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার উপপরিচালক মো. মুরশীদ আকতারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ। তিনি বলেন, ‘শাহানা কার্টুনের সঙ্গে নতুন কারিকুলামের কোনো সম্পর্ক নেই। এর আগের কারিকুলামেও বলা হয়নি যে, শাহানা কার্টুন ব্যবহার করতে হবে। শাহানা কার্টুন বানানো হয়েছিল এবং স্কুলগুলোডে অনলাইন কনটেন্ট হিসেবে দেওয়া হয়েছিল জেনারেশন ব্রেক থ্রো নামের একটি প্রকল্পের আওতায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটার সঙ্গে কারিকুলামের কোনো সম্পর্ক নেই। কারিকুলামের কোথাও শাহানা কার্টুনকে রেফারেন্স হিসেবে দেওয়া হয়নি। ক্লাসের বাইরে এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রম হিসেবে দেখানোর নির্দেশনা ছিল। এ ছাড়া জেনারেশন ব্রেক থ্রো প্রকল্পটি আরও এক-দেড় বছর আগেই বন্ধ হয়ে গেছে।’
তবে গত পহেলা ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী জেলা শিক্ষা অফিসের তত্ত্বাবধানে নোয়াখালী বাংলা বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে শাহানা কার্টুন বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নতুন কোনো বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে শাহানা কার্টুন নিয়ে এই কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে কি না জানতে নোয়াখালী জেলা শিক্ষা অফিসের জেলা শিক্ষা অফিসার নুর উদ্দিন মো: জাহাঙ্গীরের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
তিনি বলেন, ‘নতুন কোনো বিজ্ঞপ্তি নয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পুরানো বিজ্ঞপ্তি ভিত্তিতেই এই আয়োজন করা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, এর আগেও জেনারেশন ব্রেক থ্রো প্রকল্পের একটি বইকে নতুন শিক্ষাক্রমের বই দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হলে তা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আজকের পত্রিকা ফ্যান্টচেক বিভাগ।
স্পষ্টত, শাহানা কার্টুনের সঙ্গে নতুন শিক্ষাক্রমের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি আগের শিক্ষাক্রমের শিক্ষা সহায়ক অনলাইন কনটেন্ট হিসেবে দেওয়া হয়েছিল জেনারেশন ব্রেক থ্রো নামের একটি প্রকল্পের আওতায়। এই প্রকল্প এক থেকে দেড় বছর আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও এটি দেখানো হলেও পুরানো বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে দেখানো হচ্ছে। নতুন করে দেখানোর বিষয়ে মাউশির কোনো বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায় না।
এর আগে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ ম-১০ম শ্রেণির জাতীয় কারিকুলামের সহায়ক শিক্ষা উপকরণ হিসেবে দেশের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শাহানা কার্টুন ব্যবহার করা হয়েছে। নতুন কারিকুলামেও এটি ব্যবহারের জন্য এরই মধ্যে কার্টুনের সিডি প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিতরণ করতে জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়েছে। এই কার্টুনে ট্রান্সজেন্ডারের পক্ষে বলা হয়েছে। এমন দাবিতে কিছু পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে ভাইরাল একটি পোস্টে বলা হয়েছে, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড থেকে ক্লাসরুমে দেখাতে বলা শাহানা কার্টুনে শেখানো হচ্ছে ট্রান্সজেন্ডারবাদ। শাহানা কার্টুন ৬ষ্ঠ থেকে ৯ ম-১০ম শ্রেণির জাতীয় কারিকুলামের সহায়ক শিক্ষা উপকরণ হিসেবে দেশের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ব্যবহার করা হবে। এরই মধ্যে শাহানা কার্টুনের সিডি প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিতরণের লক্ষ্যে সকল জেলা শিক্ষা অফিসে প্রেরণ করা হয়েছে।’ পোস্টটিতে একটি ইউটিউব চ্যানেলের থাম্বনেইল ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। ইউটিউব ভিডিওটির শিরোনাম-‘Shahana Cartoon | Part-03 | শাহানা কার্টুন | The Beauty of Diversity’। ছবির ওপর লেখা, ‘কোনো মেয়ে যদি ছেলের মতো চলাফেরা করে, তাতে তো কারও কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।’ এটি ছবির দুই ব্যক্তির কথপোকথনের একটি অংশ।
শাহানা কার্টুনটি সম্পর্কে গত ৪ ফেব্রুয়ারি মেহেদী হাসান নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া একটি পোস্টে দাবি করা হয়, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড শাহানা কার্টুনের সিডি সব স্কুলে দেখাতে বলেছে। শাহানা কমিক ইউএনএফপির একটা প্রজেক্ট।’ পোস্টটি আজ বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টা পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি শেয়ার হয়েছে।
শাহানা কার্টুন কি
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) নির্মিত শাহানা কার্টুনের বিষয়বস্তু-বয়ঃসন্ধিকালীন যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার এবং সবার জন্য লিঙ্গসমতা। সরকারের সংযুক্ত পাঠপরিকল্পনা ও গাইডলাইন অনুযায়ী, শাহানা কার্টুন ৬ষ্ঠ থেকে ৯ ম-১০ম শ্রেণির জাতীয় কারিকুলামের সহায়ক শিক্ষা উপকরণ হিসেবে দেশের সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ব্যবহার করা হবে। আগের শিক্ষাক্রমের সহায়ক শিক্ষা উপকরণ হিসেবে এটি সরবরাহ করা হয়েছিল।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ৫ সেকেন্ডের ভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি প্রকৃতপক্ষে শাহানা কার্টুনের ১৪ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের একটি পর্বের অংশ। পর্বটির নাম ‘Shahana Cartoon | The Beauty of Diversity।’ ভাইরাল ক্লিপটি কার্টুনটির ২ মিনিট ১৫ সেকেন্ড থেকে ৪ মিনিট ৪০ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশ বিশেষ নেওয়া। পর্বটিতে দেখানো কিশোরী চরিত্রটির নাম সুমি।
নতুন শিক্ষাক্রমেই কি শাহানা কার্টুন শিক্ষা সহায়ক?
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে বিবিসি বাংলাতে ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর ‘যৌন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা: বাংলাদেশে মাধ্যমিক স্কুলের এক কোটি শিক্ষার্থীকে কী পড়ানো হবে?’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্কুলে বয়ঃসন্ধিকালীন যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, যা ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে শিক্ষার আওতায় আসবে, আর এ জন্য মূল উপকরণ হিসেবে হিসেবে ব্যবহৃত হবে ইউএনএফপিএ নির্মিত শাহানা কার্টুন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য বিবিসি বাংলাকে ওই সময় বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে শেখানোর জন্য উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হবে ইউএনএফপিএ’র শাহানা কার্টুন, যা ইতিমধ্যেই উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষা অফিসগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পরে আরও খোঁজে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) দিল আফরোজ বিনতে আছির স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়। ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিটিতে বলা হয়, ইউএনএফপিএ নির্মিত শাহানা কার্টুনের বিষয়বস্তু হলো, বয়ঃসন্ধিকালীন যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার এবং সবার জন্য জেন্ডার সমতা। সংযুক্ত পাঠপরিকল্পনা ও গাইডলাইন অনুযায়ী শাহানা কার্টুন ৬ষ্ঠ থেকে ৯ ম-১০ম শ্রেণির জাতীয় কারিকুলামের সহায়ক শিক্ষা উপকরণ হিসেবে দেশের সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ব্যবহার করা হবে। ইতিমধ্যে শাহানা কার্টুনের সিডি প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিতরণের লক্ষ্যে সকল জেলা শিক্ষা অফিসে প্রেরণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিটিতে শাহানা কার্টুন নিয়ে পাঠপরিকল্পনা ও শ্রেণিকক্ষে শাহানা কার্টুন ব্যবহারের নির্দেশিকাও সংযুক্তি হিসেবে রয়েছে। শাহানা কার্টুন ব্যবহারের নির্দেশিকাটিতে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ ম-১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শ্রেণিভিত্তিক বিষয় ও পাঠ্যপুস্তক অধ্যায়ের নাম রয়েছে। যেমন, ষষ্ঠ শ্রেণিতে শারীরিক শিক্ষা, সপ্তম শ্রেণিতে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, অষ্টম শ্রেণিতে শারীরিক শিক্ষা, নবম-দশম শ্রেণিতে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ের সঙ্গে শাহানা কার্টুনটি দেখাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শাহানা কার্টুন ব্যবহারের নির্দেশিকাটিতে এই বিষয় সম্পর্কিত অধ্যায়গুলোর নামও উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া ২০২৪ সালের নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রণীত মাধ্যমিক পর্যায়ের বইগুলোতে ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণিতে শারীরিক শিক্ষা, সপ্তম ও নবম শ্রেণিতে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় নামে কোনো বিষয় পাওয়া যায়নি। এর পরিবর্তে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বই রয়েছে। শাহানা কার্টুন ব্যবহারের নির্দেশিকাটিতে যেই অধ্যায়গুলোর নাম রয়েছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইগুলোতে এই অধ্যায়গুলো নেই।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সাল থেকে দেশে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ওই বছরের জানুয়ারি থেকে ১ ম,৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হয়। ২০২৪ সাল থেকে ২ য়,৩ য়, ৮ম ও ৯ম শ্রেণিতে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টগুলোর দাবির বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ। শাহানা কার্টুন বর্তমানে স্কুলে দেখানো হচ্ছে কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এনসিটিবিতে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কনসার্নড না।’
এনসিটিবির জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে যোগাযোগ করতে বলেন।
পরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার উপপরিচালক মো. মুরশীদ আকতারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ। তিনি বলেন, ‘শাহানা কার্টুনের সঙ্গে নতুন কারিকুলামের কোনো সম্পর্ক নেই। এর আগের কারিকুলামেও বলা হয়নি যে, শাহানা কার্টুন ব্যবহার করতে হবে। শাহানা কার্টুন বানানো হয়েছিল এবং স্কুলগুলোডে অনলাইন কনটেন্ট হিসেবে দেওয়া হয়েছিল জেনারেশন ব্রেক থ্রো নামের একটি প্রকল্পের আওতায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটার সঙ্গে কারিকুলামের কোনো সম্পর্ক নেই। কারিকুলামের কোথাও শাহানা কার্টুনকে রেফারেন্স হিসেবে দেওয়া হয়নি। ক্লাসের বাইরে এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রম হিসেবে দেখানোর নির্দেশনা ছিল। এ ছাড়া জেনারেশন ব্রেক থ্রো প্রকল্পটি আরও এক-দেড় বছর আগেই বন্ধ হয়ে গেছে।’
তবে গত পহেলা ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী জেলা শিক্ষা অফিসের তত্ত্বাবধানে নোয়াখালী বাংলা বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে শাহানা কার্টুন বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নতুন কোনো বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে শাহানা কার্টুন নিয়ে এই কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে কি না জানতে নোয়াখালী জেলা শিক্ষা অফিসের জেলা শিক্ষা অফিসার নুর উদ্দিন মো: জাহাঙ্গীরের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
তিনি বলেন, ‘নতুন কোনো বিজ্ঞপ্তি নয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পুরানো বিজ্ঞপ্তি ভিত্তিতেই এই আয়োজন করা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, এর আগেও জেনারেশন ব্রেক থ্রো প্রকল্পের একটি বইকে নতুন শিক্ষাক্রমের বই দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হলে তা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আজকের পত্রিকা ফ্যান্টচেক বিভাগ।
স্পষ্টত, শাহানা কার্টুনের সঙ্গে নতুন শিক্ষাক্রমের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি আগের শিক্ষাক্রমের শিক্ষা সহায়ক অনলাইন কনটেন্ট হিসেবে দেওয়া হয়েছিল জেনারেশন ব্রেক থ্রো নামের একটি প্রকল্পের আওতায়। এই প্রকল্প এক থেকে দেড় বছর আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও এটি দেখানো হলেও পুরানো বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে দেখানো হচ্ছে। নতুন করে দেখানোর বিষয়ে মাউশির কোনো বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায় না।
ময়মনসিংহের ‘ফুলবাড়ীয়ায় ক্যানসার প্রতিরোধক করোসল গাছের পাতা সংগ্রহে ভিড়’ শিরোনামে ২০২৩ সালের ৫ জুলাই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি দৈনিক। তাতে দাবি করা হয়, ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে পরিচিত করোসল ফলের গাছের পাতা সংগ্রহে ভিড় করছেন রোগীদের স্বজনেরা।
৬ ঘণ্টা আগেভোলার বোরহানউদ্দিনে এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচি চলাকালে অর্ধশত স্কুলছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, এ শিক্ষার্থীদের দেওয়া টিকাগুলো ‘বিষাক্ত’ ছিল। এর প্রভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা।
১১ ঘণ্টা আগেদাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ভয়েস অব আমেরিকার ওয়েবসাইটে গত শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) ‘ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী হাসিনার দল বিক্ষোভের পরিকল্পনা করছে’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
১ দিন আগেসোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল একটি মন্তব্যে দাবি করা হচ্ছে, সেনাপ্রধান ওয়াকার–উজ–জামান এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, শেখ হাসিনা জনগণের লাশের বন্যা ও মৃত্যু চাননি। তাই তিনি পদত্যাগ না করেই ভারতে চলে যান।
৩ দিন আগে