কাগজের কাপেও থাকে প্লাস্টিক, এতে চা–কফি পান কি নিরাপদ

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৪, ১৯: ৫২
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৬: ১৪

স্বাস্থ্য সচেতন অনেক মানুষই এখন ওয়ানটাইম কাপে চা বা কফি পান করেন। বিশেষ করে করোনা মহামারীর সময় থেকে ওয়ানটাইম কাপে চা–কফি পান বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এসব ওয়ানটাইম কাপ প্লাস্টিক অথবা কাগজের হতে পারে। তবে কফি বা কোমলপানীয় পানের জন্য কাগজের কাপই বেশি জনপ্রিয়। অনেকে ভাবেন, প্লাস্টিকের ওয়ানটাইম কাপের চেয়ে কাগজের কাপ পরিবেশবান্ধব। পরিবেশবাদীরাও অনেকে এ কারণে কাগজের কাপ ব্যবহার উৎসাহিত করেন।

কাগজের কাপ স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য কতটা নিরাপদ?
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট সায়েন্স ডেইলি থেকে জানা যায়, কাগজ চর্বি বা পানি প্রতিরোধী নয়। এ কারণে খাদ্য প্যাকেজিংয়ে ব্যবহৃত কাগজে প্লাস্টিকের আবরণ দেওয়া হয়। এই প্লাস্টিক আবরণ কাগজকে তরলের সংস্পর্শে ভিজে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। ফলে চা, কফি বা কোমলপানীয় পানে ব্যবহৃত কাগজের কাপগুলোর ভেতর দিকে প্লাস্টিকের পাতলা আবরণ দেওয়া থাকে।

বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের এই আবরণ পলিল্যাকটাইড (পিএলএ) নামে এক ধরনের বায়োপ্লাস্টিক। প্লাস্টিক পলিমারগুলো সাধারণত জীবাশ্ম–জ্বালানি (পেট্রোলিয়াম) থেকে তৈরি করা হয়। কিন্তু বায়োপ্লাস্টিক তৈরি করা হয় নবায়নযোগ্য উপাদান থেকে। যেমন, পলিল্যাকটাইড সাধারণত ভুট্টা, কাসাভা বা আখ থেকে তৈরি করা হয়। পলিল্যাকটাইডকে বায়োডিগ্রেডেবল (প্রাকৃতিকভাবে ক্ষয়যোগ্য) বলে মনে করা হয়। অর্থাৎ এটি সঠিক পরিবেশে সাধারণ প্লাস্টিকের চেয়ে দ্রুত ভেঙে যায়।

তবে গবেষণায় উঠে এসেছে, কাগজের কাপ বায়োডিগ্রেডেবল উপাদান দিয়ে তৈরি হলেও এটি প্লাস্টিকের কাপের মতোই ক্ষতিকর। ২০২৩ সালে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের কাপের পরিবর্তে কাগজের কাপ পরিবেশের জন্য কতটা নিরাপদ তা নিয়ে গবেষণা করেন সুইডেনের ইউনিভার্সিটি অব গোটেনবার্গের বায়োলজি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস বিভাগের একদল গবেষক। গবেষণাপত্রটি ওই বছরের ১ আগস্ট পিয়ার রিভিউড জার্নাল এনভায়রনমেন্টাল পলিউশনে প্রকাশিত হয়। 

ওই গবেষণা দলের সদস্য অধ্যাপক বেথানি কার্নি অ্যালমরথ বলেন, প্রচলিত প্লাস্টিকে যতোগুলো রাসায়নিক থাকে, বায়োপ্লাস্টিকেও সেগুলো থাকে। বায়োপ্লাস্টিক পরিবেশে বিশেষ করে পানিতে পুরোপুরি মিশে যায় না। ফলে প্রকৃতিতে প্লাস্টিক থেকে যাওয়ার একটি ঝুঁকি থেকেই যায় এবং ফলস্বরূপ মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলো অন্যান্য প্লাস্টিক কণার মতো প্রাণী এবং মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে।

গবেষণার অংশ হিসেবে কার্নি অ্যালমরথ ও তাঁর সহযোগীরা কাগজের কাপ এবং প্লাস্টিকের কাপকে কয়েক সপ্তাহের জন্য ভেজা পলি এবং পানিতে রেখেছিলেন এবং এসব কাপ থেকে নির্গত রাসায়নিকগুলো কীভাবে মশার লার্ভাকে প্রভাবিত করে তা পর্যবেক্ষণ করেন। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, উভয় ধরনের কাপ থেকেই নির্গত রাসায়নিক লার্ভার দৈহিক বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। গবেষণাটির সারমর্ম থেকে জানা যায়, প্লাস্টিকের কাপের পরিবর্তে কাগজের কাপ ব্যবহারে পরিবেশ দূষণের কোনো সমাধান তো মিলবেই না, বরং এতে আরও বেশি সমস্যা তৈরি হতে পারে।। কারণ, এই কাপগুলোতে ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে। 

কেবল পরিবেশই নয়, গবেষকদের গবেষণায় উঠে এসেছে, মানুষের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব আছে কাগজের কাপের। বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার ইন্ডিয়াতে ২০২০ সালে এ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। গবেষণাটি করেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের খড়গপুরে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (আইআইটি) একদল গবেষক। ওই গবেষণা থেকে জানা যায়, প্লাস্টিকের আবরণ দেওয়া ওয়ানটাইম কাগজের কাপ ১৫ মিনিটের জন্য গরম পানির সংস্পর্শে থাকলে ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা, ক্ষতিকর আয়ন এবং ভারী ধাতু নিঃসরিত হয়। এই ধরনের কাগজের কাপ থেকে গরম পানীয় গ্রহণ করলে এই ক্ষতিকর পদার্থগুলো শরীরে প্রবেশ করে। এতে প্রজনন সমস্যা, ক্যানসার এবং স্নায়ুরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।

আইআইটির গবেষকেরা ১০০ মিলিলিটার ধারণক্ষমতার কাগজের কাপে শতভাগ বিশুদ্ধ গরম পানি ঢেলে ১৫ মিনিটের জন্য রাখেন। পরে তাঁরা কাপগুলো থেকে সংগৃহীত নমুনা পানিতে প্লাস্টিক কণা শনাক্ত করতে নির্দিষ্ট রঞ্জক যোগ করেন। গবেষকেরা দেখেন, প্রতিটি কাপে গরম পানি যোগ করার ১৫ মিনিট পরে পানিতে প্রায় ২৫ হাজার ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি রয়েছে। এ হিসাবে তাঁরা বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি কাগজের কাপে দৈনিক তিন কাপ চা বা কফি পান করেন, তাহলে দৈনিক তিনি ৭৫ হাজার পর্যন্ত ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা গ্রহণ করেন।

এ ছাড়া গবেষকেরা পানির ওই নমুনাতে বিভিন্ন আয়ন যেমন: ফ্লুরাইড, ক্লোরাইড, নাইট্রেট, সালফেটের উপস্থিতি পান। পাশাপাশি বিভিন্ন ভারী ধাতু যেমন: সীসা, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম এবং আর্সেনিকের উপস্থিতিও পেয়েছেন তাঁরা। তবে এ ধরনের কাপে কক্ষ তাপমাত্রার (২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পানি রাখলে কোনো প্লাস্টিক কণা পাওয়া যায় না। এর অর্থ, গরম পানিতে প্লাস্টিক কণাগুলো কাপ থেকেই আসছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তরের অধীন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজির (এনআইএসটি) একটি গবেষণা থেকেও একই ধরনের ফলাফল পাওয়া যায়। এনআইএসটির গবেষণাটি বিজ্ঞান সাময়িকী এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে প্রকাশিত হয়েছে।

এনআইএসটির গবেষকেরা তাঁদের গবেষণায় প্লাস্টিকযুক্ত দুই ধরনের বাণিজ্যিক পণ্য ব্যবহার করেন: এর একটি ফুড গ্রেড নাইলন ব্যাগ এবং ওয়ানটাইম কাগজের কাপ। এই কাপগুলোতে কম ঘনত্বের পলিথিনের (এলডিপিই) আবরণ ব্যবহার করা হয়। এই কাপগুলোকে ২০ মিনিটের জন্য ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ফুটন্ত পানির সংস্পর্শে রাখা হয়। এতে দেখা যায়, কাপগুলো প্রতি লিটার পানিতে কোটি কোটি ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা (ন্যানোপার্টিক্যাল) নিঃসরণ করে।

এনআইএসটি রসায়নবিদ ক্রিস্টোফার জাংমিস্টার বলেন, প্রতি লিটারে কোটি কোটি প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে। তবে আমরা জানি না, এসব কণা মানুষের বা প্রাণীর স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে কি না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত