ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
ফেসবুকে না জেনে হারাম খাচ্ছি—শিরোনামে একটি পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে। পোস্টটিতে একটি চকলেটের মোড়কের ছবি যুক্ত করে এমালসিফায়ার কোড নামে একটি কোড উল্লেখ করে বলা হচ্ছে, এমালসিফায়ার কোড নির্দেশ করে খাবারটি হারাম বা হালাল। এই কোডগুলোর একটি ই৪৭৬ (E476 )। এই কোডের অর্থ হচ্ছে PIG Fat অর্থাৎ শূকরের চর্বি ব্যবহার করা হয়েছে এমন পণ্য। পোস্টটের চকলেটের মোড়কে এই কোড রয়েছে।
গত ৩ ডিসেম্বর ফেসবুকে এমন দাবি করে ফাহাদ ইবনে হাসান হৃদয় নামের ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এমন এক পোস্ট আজ মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) বেলা ১টা পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার বার শেয়ার হয়েছে। এতে রিয়েক্ট পড়েছে প্রায় ৪ হাজার। মন্তব্য পড়েছে ৪০০–এর বেশি। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের এসব মন্তব্যে বিভিন্নজনকে সতর্ক করতে দেখা গেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোড ই৪৭৬ মানেই সেটি পিগ ফ্যাট বা শূকরের চর্বি বিশিষ্ট নয়।
কোড ই৪৭৬ নিয়ে আলোচনার আগে এর সঙ্গে থাকা ই–এর অর্থ নিয়ে আলোচনা করা যাক। ইউরোপিয়ান ফুড সেফটি অথোরিটির (ইএফএসএ) ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ই—যুক্ত নম্বর দিয়ে প্যাকেটজাত খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহৃত ফুড অ্যাডিটিভস শনাক্ত করা হয়। ফুড অ্যাডিটিভস হলো এমন পদার্থ, যা প্যাকেটজাত খাদ্যদ্রব্যে বিশেষ কিছু কাজ যেমন, খাদ্যসামগ্রী রং করা, মিষ্টি করা বা খাবার সংরক্ষণে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। এই দ্রব্যগুলোকে সব সময় প্যাকেটজাত খাবারের মোড়কে উল্লেখিত উপাদান তালিকার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করে দিতে হয়। খাদ্যের মোড়কে প্রদর্শিত সবচেয়ে সাধারণ ফুড অ্যাডিটিভ হলো— অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, রং, এমালসিফায়ার, স্টেবিলাইজার, জেলিং এজেন্টস ও থিকেনার্স, প্রিজারভেটিভস এবং সুইটেনার্স।
‘E476’ (অপর নাম পলিগ্লিসারল পলিরিসিনোলিয়েট) কোড দিয়ে একটি ‘এমালসিফায়ার’–কে নির্দেশ করা হয়। এমালসিফায়ার হচ্ছে এমন ফুড অ্যাডিটিভ যা প্যাকেটজাত খাবারে গুনগতমান দীর্ঘদিন ধরে রাখতে ব্যবহার করা হয়। এটি বিশেষত চকলেট তৈরির সময় থকথকে ভাব কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি এক ধরনের পলিগ্লিসারল এস্টার। পলিগ্লিসারলকে ঘনীভূত ক্যাস্টর অয়েল ফ্যাটি অ্যাসিড সহযোগে অ্যাস্টারিফিকেশনের মাধ্যমে এটি তৈরি করা হয়। এটির ইউপোরীয়ান ফুড অ্যাডিটিভ নম্বর E476।
এই এমালসিফায়ার ব্যবহার করে তৈরি খাদ্য কি ইসলাম ধর্মমতে হারাম— এমন জিজ্ঞাসায় হালাল বা হারাম সম্পর্কে যাচাইকারী যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হারাম অর হালাল ডট ইউকে এক নিবন্ধে জানায়, প্যাকেটজাত খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহৃত ই–যুক্ত নম্বরে ‘ই’ দিয়ে ইউরোপ বোঝায়। ‘ই’ কোড দ্বারা ইউরোপিয়ান ফুড সেফটি অথোরিটি (ইএফএসএ) অনুমোদিত খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহৃত বিশেষ উপাদানকে (ফুড অ্যাডিটিভ) নির্দেশ করা হয়।
ইউরোপে ১৯৬২ সালে সর্বপ্রথম ফুড কালারিং এজেন্টে ‘ই’ নম্বর ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে প্রিজারভেটিভস, এমালসিফায়ার, জেলিং এজেন্ট ও থিকেনারসহ আরও বেশ কিছু উপাদান এই তালিকায় যুক্ত করা হয়।
ওয়েবসাইটটিতে বলা হয়, ই৪৭৬ হলো হলুদাভ বর্ণের একটি এমালসিফায়ার। চকলেট, পাউরুটি, সালাদ ও বিস্কুটের মতো খাদ্যপণ্যে এই এমালসিফায়ার ব্যবহার করা হয়। নির্দিষ্ট কিছু উদ্ভিদ ও শূকর ই৪৭৬–এর অন্যতম উৎস। তাই এই এমালসিফায়ার দিয়ে তৈরি পণ্যের ক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়তের নির্দেশনা হচ্ছে মাশবূহ, অর্থাৎ এটি হালাল নাকি হারাম তা স্পষ্ট নয়। তবে কোনো পণ্যে ব্যবহৃত ই৪৭৬–এর উৎস সম্পর্কে যদি নিশ্চিত জানা যায় এবং সেটি যদি হয় শূকরের চর্বি তাহলে হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
ইসলামি জিজ্ঞাসার ওয়েবসাইট ইসলামকিউএতে মুসলমানদের জন্য ই৪৭৬ হালাল না হারাম সে সম্পর্কে আলোচনা পাওয়া যায়। যুক্তরাজ্যের মুসলমানদের বিভিন্ন বিষয়ে মাসআলা–মাসায়েল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান দারুল ইফতা বার্মিংহামের মুফতি মোহাম্মদ তছির মিয়ার অনুমোদন নিয়ে ওয়েবসাইটটিতে ই৪৭৬ সম্পর্কে মাওলানা মুকতাউর রহমান নামে একজন আলেম লেখেন, ই৪৭৬ এমালসিফায়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি কৃত্রিম চর্বি বা উদ্ভিজ্জ চর্বির সঙ্গে অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে তৈরি করা হয় এবং খাওয়া হালাল।
ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের ওয়েবসাইটে অনেকগুলো ‘ই’ কোডের সঙ্গে ই৪৭৬ হালাল নাকি হারাম সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মাদ্রাসাটির ফতোয়া বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, আমাদের কাছে এই কোড নম্বরগুলো হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোনো নিশ্চিত তথ্য নেই।
ইসলামিক রিলিজিয়াস কাউন্সিল অব সিঙ্গাপুর, সিঙ্গাপুরের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি হালাল সার্টিফিকেশন পরিষেবা দেয় এবং দেশটির হালাল শিল্প নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে ফুড অ্যাডিটিভের একটি তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়। তালিকাটিতে ই৪৭৬ যুক্ত পণ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরাসরি হালাল বা হারাম কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। বরং বলা হয়েছে, এর বৈধতা নির্ভর করে ই৪৭৬–এর উপাদান কোন উৎস থেকে এসেছে বা এর উৎপাদন প্রক্রিয়ার ওপর।
পাকিস্তানের কমসেটস ইউনিভার্সিটি ইসলামাবাদের সেন্টার অব ইসলামিক ফাইন্যান্স তাদের ওয়েবসাইটে ই৪৭৬ সম্পর্কে জানায়, মুসলমানদের জন্য এটির ব্যবহারের নির্দেশনা হলো ‘মাশবূহ’, অর্থাৎ হালাল–হারাম স্পষ্ট নয়। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে হারাম ‘ই’ নম্বর হিসেবে ই১২০ উল্লেখ করা হয়েছে। এটি কিছু অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়, লাল আপেল সস, মাংস, দই ইত্যাদি পণ্যে ব্যবহার করা হয়।
ই৪৭৬ সম্পর্কে শিয়া মুসলিমদের আধ্যাত্মিক নেতা আলী আল হোসাইনী আল সিস্তানির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, যদি ই৪৭৬ উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে আসে, তবে হালাল। যদি পশু উৎস থেকে আসে, তবে হালাল–হারাম নির্ভর করে ওই পশুটিকে শরিয়ামতে জবাই করা হয়েছে কি না তার ওপর।
ওপরের এসব আলোচনা থেকে স্পষ্ট, কোনো পণ্যের মোড়কে ই৪৭৬ থাকলেই সেটি হারাম বলা যাবে না। বরং ই৪৭৬ হালাল না হারাম তা নির্ভর করে এটি কোন উপাদান দিয়ে তৈরি আর এসবের উৎস কী। ই৪৭৬ যদি উদ্ভিজ্জ চর্বি থেকে উৎপাদিত হয়, তাহলে সেটি হালাল।
উদ্ভিজ্জ উপাদান দিয়ে তৈরি কিনা বোঝা যাবে কীভাবে
কোনো পণ্য উদ্ভিজ্জ না প্রাণীজ উপাদান দিয়ে তৈরি তা বোঝা যায় পণ্যটির মোড়ক যাচাই করে। যদি কোনো খাদ্যপণ্যের গায়ে সাদা বর্গের ভেতর সবুজ বৃত্ত থাকে, তবে বুঝতে হবে সেই খাবারটি কেবল উদ্ভিজ্জ উপাদান দিয়ে তৈরি। এতে কোনো ধরনের প্রাণিজ উপকরণ নেই। অপরদিকে প্যাকেটের গায়ে সবুজের পরিবর্তে বাদামি বৃত্ত থাকলে তা নির্দেশ করে এই খাবারে প্রাণিজ উপকরণের অস্তিত্ব আছে।
যদি কোনো পণ্যের মোড়কে পণ্যের উপাদান তালিকায় ই৪৭৬ কোড এবং একই মোড়কে যদি সাদা বর্গের ভেতর সবুজ বৃত্তের চিহ্ন থাকে তাহলে ইসলামি বিশেষজ্ঞদের মতে, সেটি খাওয়া হালাল। তাই ফেসবুকে প্রচারিত চকলেটসহ কোনো পণ্যের মোড়কে উপরোক্ত বিষয়গুলোর উল্লেখ থাকলে সেটি মুসলমানদের জন্য হারাম নয়।
সিদ্ধান্ত
খাদ্যসামগ্রী রঙিন করতে, মিষ্টি বা সুস্বাদু করতে আবার কখনো খাবার সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে খাবারে বিভিন্ন উপাদান সংযোজন করা হয়, এগুলোকে বলে ফুড অ্যাডিটিভ। ইউরোপের খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থা নিরাপদ ফুড অ্যাডিটিভের তালিকা দেয়। এসব অ্যাডিটিভকে চিহ্নিত করতে ইংরেজি ‘ই’ অক্ষরের পর নির্দিষ্ট নম্বর দেওয়া হয়। ‘এমালসিফায়ার’ এমন একটি ফুড অ্যাডিটিভ।
ই৪৭৬ নম্বরযুক্ত এমালসিফায়ার মূলত চকলেট জাতীয় খাদ্যে ব্যবহার করা হয়। এটি প্রাণিজ বা উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে পাওয়া যায়। এই ফুড অ্যাডিটিভ যুক্ত খাবার মুসলমানদের জন্য হালাল নাকি হারাম সেটি নির্ভর করে উপাদানটির উৎসের ওপর।
ফেসবুকে না জেনে হারাম খাচ্ছি—শিরোনামে একটি পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে। পোস্টটিতে একটি চকলেটের মোড়কের ছবি যুক্ত করে এমালসিফায়ার কোড নামে একটি কোড উল্লেখ করে বলা হচ্ছে, এমালসিফায়ার কোড নির্দেশ করে খাবারটি হারাম বা হালাল। এই কোডগুলোর একটি ই৪৭৬ (E476 )। এই কোডের অর্থ হচ্ছে PIG Fat অর্থাৎ শূকরের চর্বি ব্যবহার করা হয়েছে এমন পণ্য। পোস্টটের চকলেটের মোড়কে এই কোড রয়েছে।
গত ৩ ডিসেম্বর ফেসবুকে এমন দাবি করে ফাহাদ ইবনে হাসান হৃদয় নামের ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এমন এক পোস্ট আজ মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) বেলা ১টা পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার বার শেয়ার হয়েছে। এতে রিয়েক্ট পড়েছে প্রায় ৪ হাজার। মন্তব্য পড়েছে ৪০০–এর বেশি। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের এসব মন্তব্যে বিভিন্নজনকে সতর্ক করতে দেখা গেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোড ই৪৭৬ মানেই সেটি পিগ ফ্যাট বা শূকরের চর্বি বিশিষ্ট নয়।
কোড ই৪৭৬ নিয়ে আলোচনার আগে এর সঙ্গে থাকা ই–এর অর্থ নিয়ে আলোচনা করা যাক। ইউরোপিয়ান ফুড সেফটি অথোরিটির (ইএফএসএ) ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ই—যুক্ত নম্বর দিয়ে প্যাকেটজাত খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহৃত ফুড অ্যাডিটিভস শনাক্ত করা হয়। ফুড অ্যাডিটিভস হলো এমন পদার্থ, যা প্যাকেটজাত খাদ্যদ্রব্যে বিশেষ কিছু কাজ যেমন, খাদ্যসামগ্রী রং করা, মিষ্টি করা বা খাবার সংরক্ষণে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। এই দ্রব্যগুলোকে সব সময় প্যাকেটজাত খাবারের মোড়কে উল্লেখিত উপাদান তালিকার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করে দিতে হয়। খাদ্যের মোড়কে প্রদর্শিত সবচেয়ে সাধারণ ফুড অ্যাডিটিভ হলো— অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, রং, এমালসিফায়ার, স্টেবিলাইজার, জেলিং এজেন্টস ও থিকেনার্স, প্রিজারভেটিভস এবং সুইটেনার্স।
‘E476’ (অপর নাম পলিগ্লিসারল পলিরিসিনোলিয়েট) কোড দিয়ে একটি ‘এমালসিফায়ার’–কে নির্দেশ করা হয়। এমালসিফায়ার হচ্ছে এমন ফুড অ্যাডিটিভ যা প্যাকেটজাত খাবারে গুনগতমান দীর্ঘদিন ধরে রাখতে ব্যবহার করা হয়। এটি বিশেষত চকলেট তৈরির সময় থকথকে ভাব কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি এক ধরনের পলিগ্লিসারল এস্টার। পলিগ্লিসারলকে ঘনীভূত ক্যাস্টর অয়েল ফ্যাটি অ্যাসিড সহযোগে অ্যাস্টারিফিকেশনের মাধ্যমে এটি তৈরি করা হয়। এটির ইউপোরীয়ান ফুড অ্যাডিটিভ নম্বর E476।
এই এমালসিফায়ার ব্যবহার করে তৈরি খাদ্য কি ইসলাম ধর্মমতে হারাম— এমন জিজ্ঞাসায় হালাল বা হারাম সম্পর্কে যাচাইকারী যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হারাম অর হালাল ডট ইউকে এক নিবন্ধে জানায়, প্যাকেটজাত খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহৃত ই–যুক্ত নম্বরে ‘ই’ দিয়ে ইউরোপ বোঝায়। ‘ই’ কোড দ্বারা ইউরোপিয়ান ফুড সেফটি অথোরিটি (ইএফএসএ) অনুমোদিত খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহৃত বিশেষ উপাদানকে (ফুড অ্যাডিটিভ) নির্দেশ করা হয়।
ইউরোপে ১৯৬২ সালে সর্বপ্রথম ফুড কালারিং এজেন্টে ‘ই’ নম্বর ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে প্রিজারভেটিভস, এমালসিফায়ার, জেলিং এজেন্ট ও থিকেনারসহ আরও বেশ কিছু উপাদান এই তালিকায় যুক্ত করা হয়।
ওয়েবসাইটটিতে বলা হয়, ই৪৭৬ হলো হলুদাভ বর্ণের একটি এমালসিফায়ার। চকলেট, পাউরুটি, সালাদ ও বিস্কুটের মতো খাদ্যপণ্যে এই এমালসিফায়ার ব্যবহার করা হয়। নির্দিষ্ট কিছু উদ্ভিদ ও শূকর ই৪৭৬–এর অন্যতম উৎস। তাই এই এমালসিফায়ার দিয়ে তৈরি পণ্যের ক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়তের নির্দেশনা হচ্ছে মাশবূহ, অর্থাৎ এটি হালাল নাকি হারাম তা স্পষ্ট নয়। তবে কোনো পণ্যে ব্যবহৃত ই৪৭৬–এর উৎস সম্পর্কে যদি নিশ্চিত জানা যায় এবং সেটি যদি হয় শূকরের চর্বি তাহলে হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
ইসলামি জিজ্ঞাসার ওয়েবসাইট ইসলামকিউএতে মুসলমানদের জন্য ই৪৭৬ হালাল না হারাম সে সম্পর্কে আলোচনা পাওয়া যায়। যুক্তরাজ্যের মুসলমানদের বিভিন্ন বিষয়ে মাসআলা–মাসায়েল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান দারুল ইফতা বার্মিংহামের মুফতি মোহাম্মদ তছির মিয়ার অনুমোদন নিয়ে ওয়েবসাইটটিতে ই৪৭৬ সম্পর্কে মাওলানা মুকতাউর রহমান নামে একজন আলেম লেখেন, ই৪৭৬ এমালসিফায়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি কৃত্রিম চর্বি বা উদ্ভিজ্জ চর্বির সঙ্গে অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে তৈরি করা হয় এবং খাওয়া হালাল।
ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের ওয়েবসাইটে অনেকগুলো ‘ই’ কোডের সঙ্গে ই৪৭৬ হালাল নাকি হারাম সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মাদ্রাসাটির ফতোয়া বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, আমাদের কাছে এই কোড নম্বরগুলো হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোনো নিশ্চিত তথ্য নেই।
ইসলামিক রিলিজিয়াস কাউন্সিল অব সিঙ্গাপুর, সিঙ্গাপুরের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি হালাল সার্টিফিকেশন পরিষেবা দেয় এবং দেশটির হালাল শিল্প নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে ফুড অ্যাডিটিভের একটি তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়। তালিকাটিতে ই৪৭৬ যুক্ত পণ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরাসরি হালাল বা হারাম কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। বরং বলা হয়েছে, এর বৈধতা নির্ভর করে ই৪৭৬–এর উপাদান কোন উৎস থেকে এসেছে বা এর উৎপাদন প্রক্রিয়ার ওপর।
পাকিস্তানের কমসেটস ইউনিভার্সিটি ইসলামাবাদের সেন্টার অব ইসলামিক ফাইন্যান্স তাদের ওয়েবসাইটে ই৪৭৬ সম্পর্কে জানায়, মুসলমানদের জন্য এটির ব্যবহারের নির্দেশনা হলো ‘মাশবূহ’, অর্থাৎ হালাল–হারাম স্পষ্ট নয়। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে হারাম ‘ই’ নম্বর হিসেবে ই১২০ উল্লেখ করা হয়েছে। এটি কিছু অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়, লাল আপেল সস, মাংস, দই ইত্যাদি পণ্যে ব্যবহার করা হয়।
ই৪৭৬ সম্পর্কে শিয়া মুসলিমদের আধ্যাত্মিক নেতা আলী আল হোসাইনী আল সিস্তানির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, যদি ই৪৭৬ উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে আসে, তবে হালাল। যদি পশু উৎস থেকে আসে, তবে হালাল–হারাম নির্ভর করে ওই পশুটিকে শরিয়ামতে জবাই করা হয়েছে কি না তার ওপর।
ওপরের এসব আলোচনা থেকে স্পষ্ট, কোনো পণ্যের মোড়কে ই৪৭৬ থাকলেই সেটি হারাম বলা যাবে না। বরং ই৪৭৬ হালাল না হারাম তা নির্ভর করে এটি কোন উপাদান দিয়ে তৈরি আর এসবের উৎস কী। ই৪৭৬ যদি উদ্ভিজ্জ চর্বি থেকে উৎপাদিত হয়, তাহলে সেটি হালাল।
উদ্ভিজ্জ উপাদান দিয়ে তৈরি কিনা বোঝা যাবে কীভাবে
কোনো পণ্য উদ্ভিজ্জ না প্রাণীজ উপাদান দিয়ে তৈরি তা বোঝা যায় পণ্যটির মোড়ক যাচাই করে। যদি কোনো খাদ্যপণ্যের গায়ে সাদা বর্গের ভেতর সবুজ বৃত্ত থাকে, তবে বুঝতে হবে সেই খাবারটি কেবল উদ্ভিজ্জ উপাদান দিয়ে তৈরি। এতে কোনো ধরনের প্রাণিজ উপকরণ নেই। অপরদিকে প্যাকেটের গায়ে সবুজের পরিবর্তে বাদামি বৃত্ত থাকলে তা নির্দেশ করে এই খাবারে প্রাণিজ উপকরণের অস্তিত্ব আছে।
যদি কোনো পণ্যের মোড়কে পণ্যের উপাদান তালিকায় ই৪৭৬ কোড এবং একই মোড়কে যদি সাদা বর্গের ভেতর সবুজ বৃত্তের চিহ্ন থাকে তাহলে ইসলামি বিশেষজ্ঞদের মতে, সেটি খাওয়া হালাল। তাই ফেসবুকে প্রচারিত চকলেটসহ কোনো পণ্যের মোড়কে উপরোক্ত বিষয়গুলোর উল্লেখ থাকলে সেটি মুসলমানদের জন্য হারাম নয়।
সিদ্ধান্ত
খাদ্যসামগ্রী রঙিন করতে, মিষ্টি বা সুস্বাদু করতে আবার কখনো খাবার সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে খাবারে বিভিন্ন উপাদান সংযোজন করা হয়, এগুলোকে বলে ফুড অ্যাডিটিভ। ইউরোপের খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থা নিরাপদ ফুড অ্যাডিটিভের তালিকা দেয়। এসব অ্যাডিটিভকে চিহ্নিত করতে ইংরেজি ‘ই’ অক্ষরের পর নির্দিষ্ট নম্বর দেওয়া হয়। ‘এমালসিফায়ার’ এমন একটি ফুড অ্যাডিটিভ।
ই৪৭৬ নম্বরযুক্ত এমালসিফায়ার মূলত চকলেট জাতীয় খাদ্যে ব্যবহার করা হয়। এটি প্রাণিজ বা উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে পাওয়া যায়। এই ফুড অ্যাডিটিভ যুক্ত খাবার মুসলমানদের জন্য হালাল নাকি হারাম সেটি নির্ভর করে উপাদানটির উৎসের ওপর।
ফ্যাক্টচেক, সোশ্যাল মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ভাইরাল, ভুয়া পোস্ট, সংঘর্ষ, রাজধানী, সেনাবাহিনী, বিক্ষোভ, রিকশা
১০ ঘণ্টা আগেদীপ্তির বক্তব্য দাবিতে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের নাম ও লোগোযুক্ত একটি ফটোকার্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। দীপ্তি চৌধুরীর ছবিযুক্ত ফটোকার্ডটিতে লেখা, ‘আমার নানীর ফুফাতো বোনের স্বামী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।’
১৪ ঘণ্টা আগেআজ শনিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অডিও রেকর্ড প্রচার করা হয়েছে। তাতে হাসিনাকে কথা বলতে শোনা যায়, গুলি খাওয়ার পর আবু সাঈদকে চার–পাঁচ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
১ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদকও। সম্প্রতি সারজিস শিশু মডেল অভিনেত্রী সিমরিন লুবাবাকে ফেসবুকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন দাবিতে একটি ফটোকার্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
২ দিন আগে