মঙ্গলে যাবেন অ্যালিসা কার্সন, ফিরতে পারবেন না জেনে বিয়েও করেননি— ভাইরাল গল্পটি সঠিক নয়

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪: ৩৫
Thumbnail image

সম্প্রতি শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে অ্যালিসা কার্সন নামে এক তরুণীর গল্প ভাইরাল হয়েছে। ওই গল্পে দাবি করা হচ্ছে, ওই তরুণী বিশ্বের প্রথম নারী, যিনি কি না ২০৩০ সালে মঙ্গলগ্রহে যাবেন। কিন্তু এই অভিযানে অ্যালিসার পৃথিবীতে ফিরে আসার আশা নেই। বর্তমানে অ্যালিসার বয়স ২৩ বছর। যখন তাঁর বয়স ৩ বছর ছিল, তখন তাঁর বাবা তাঁকে বলেছিলেন, একদিন তাঁকে মঙ্গলগ্রহে যেতে হবে। তখন থেকেই অ্যালিসা মঙ্গলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ জন্য তিনি বিয়েও করেননি। কারণ তিনি জানেন, একবার মঙ্গলে যাওয়ার পর আর কখনো পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারবেন না। নাসার একটি মিশনের অধীনে অ্যালিসা মঙ্গলে যাবেন এবং নাসা জানিয়েছে, অ্যালিসার ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম। 

আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ অ্যালিসা কার্সনের ভাইরাল এ গল্পটি সম্পর্কে অনুসন্ধান করেছে। কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে অ্যালিসা কার্সনের ভেরিফায়েড ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি খুঁজে পাওয়া যায়। অ্যাকাউন্টে কার্সন নিজেকে জ্যোতিজীববিজ্ঞানী, পিএইচডি শিক্ষার্থী এবং যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনটিক্যাল সায়েন্সেসের (আইআইএএস) গবেষক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। ভাইরাল দাবিগুলো প্রসঙ্গে তাঁর অ্যাকাউন্টে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

তাঁর প্রসঙ্গে পরে আরও খুঁজে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান স্নোপসে ২০১৮ সালের ১৬ জুলাইয়ে প্রকাশিত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এ প্রতিবেদনে নাসার একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, নাসা অ্যালিসা কার্সনকে কোনো প্রশিক্ষণ দিচ্ছে না এবং কোনো মিশনের জন্য তাঁকে প্রস্তুতও করছে না। ওই সময় কার্সনের বয়স ছিল ১৭ বছর। এই বয়সেই কার্সন নাসার একাধিক স্পেস ক্যাম্পে অংশ নিয়েছেন। কেনেডি স্পেস সেন্টার ভিজিটর কমপ্লেক্সের ‘পাসপোর্ট টু এক্সপ্লোর স্পেস’ প্রোগ্রাম সমাপ্ত করেছেন এবং মঙ্গল অভিযানে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে কার্সনের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। 

একই প্রসঙ্গে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ২০২১ সালের ৮ জুনে প্রকাশিত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ভবিষ্যতে মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এর জন্য কোনো মহাকাশচারীকে তখন পর্যন্ত নির্বাচন করা হয়নি এবং এ পরিকল্পনার সঙ্গে কার্সনের কোনো সম্পর্ক নেই। 

কার্সনের বাবা বার্ট ওই সময় ই–মেইল বার্তায় রয়টার্সকে জানান, অ্যালিসার সবসময় স্বপ্ন ছিল, মঙ্গল অভিযানে প্রথম ব্যক্তিদের একজন হওয়া এবং এ লক্ষ্যে অ্যালিসা সবসময় কাজ করে যাচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, অ্যালিসা সবসময় বিশ্বের প্রতিটি মহাকাশ সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। যেহেতু বিশ্বের নানা সংস্থা ও প্রাইভেট কোম্পানি মঙ্গল অভিযান নিয়ে কাজ করছে, তাই আমরা জানি না আসলে কী হতে যাচ্ছে। 

অ্যালিসা কারসনের মঙ্গল অভিযান ও নাসার সম্পৃক্ততা নিয়ে নাসার বক্তব্য। ছবি: স্নোপসএকই বছরের ১২ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ইউএসএ টুডেকে নাসার জনসংযোগ কর্মকর্তা ক্যাথেরিন হামব্লেটন জানান, অ্যালিসা কার্সনের সঙ্গে নাসার কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই। 

প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, অ্যালিসা কার্সন ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ম্যাগাজিন ভোগের কিশোর সংস্করণ টিন ভোগকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি সবসময় একজন মহাকাশচারী হতে চেয়েছেন এবং মঙ্গলে যেতে চেয়েছেন। পৃথিবীতে ফিরে এসে একজন শিক্ষক বা প্রেসিডেন্ট হতে চান। তবে তাঁর বাবা বার্ট ভোগকে জানিয়েছেন, মঙ্গল থেকে যদি পৃথিবীতে ফিরে আসার সুযোগ নাও থাকে তবুও মেয়েকে তিনি পাঠাবেন। 

এসব প্রতিবেদন থেকে অ্যালিসা কার্সনের মঙ্গল অভিযান নিয়ে প্রচলিত গল্পটির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। বরং প্রতিবেদনের এসব তথ্য প্রমাণ থেকে এটি স্পষ্ট, অ্যালিসা কার্সনের মঙ্গল অভিযান সম্পর্কিত ভাইরাল গল্পটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত