Ajker Patrika

নাক ডাকা হতে পারে ঘাতকব্যাধি

অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু
নাক ডাকা হতে পারে ঘাতকব্যাধি

‘গুণগত ঘুম, সুস্থ মন, সুখী পৃথিবী’
আজ বিশ্ব ঘুম দিবস। প্রতি বছর মার্চ মাসের তৃতীয় শুক্রবার দিবসটি পালিত হয়। ২০০৮ সালে প্রথমবার দিবসটি পালন করে ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব স্লিপ মেডিসিনের ওয়ার্ল্ড স্লিপ ডে কমিটি। ঘুমের অভাবে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির বিষয়ে মানুষকে জানানোই ছিল এই কমিটির মূল উদ্দেশ্য। 

ঘুম খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কীভাবে ঘুমাচ্ছেন, ঘুমের সময় কী করছেন ইত্যাদি আপনার সুস্থ থাকার প্যারামিটার। ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা হতে পারে ঘাতক ব্যাধি। মধ্যবয়স্ক পুরুষদের ৪০ শতাংশ ও নারীদের ২০ শতাংশ ঘুমের মধ্যে নাক ডাকেন। এমনকি শিশুদের মধ্যেও এ সমস্যা দেখা গেছে। তাই নাক ডাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন এবং সঠিক চিকিৎসা করিয়ে গুণগত ঘুম নিশ্চিত করে সুস্থ থাকুন।

নাক ডাকার স্বাস্থ্য ঝুঁকি
ঘুমের মধ্যে নাক ডাকাকে অনেকে সমস্যা মনে না করে গভীর ঘুমের লক্ষণ মনে করে থাকে। কিন্তু সত্য হলো, নাক ডাকা প্রশান্তিময় ও তৃপ্তিদায়ক ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানোসহ আরও নানাবিধ স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে।

নাক ডাকার কারণ
ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিপথ কোনোভাবে বাধা পেলে বাতাস শ্বাসযন্ত্রে কাঁপুনির সৃষ্টি করে। সে জন্য নাক ডাকার শব্দ হয়। যেসব কারণে নাক ডাকতে পারে তার মধ্যে অন্যতম হলো—

  • নাকে পলিপ বা সাইনাসের সমস্যা থাকা
  • ওজন বেড়ে গলার চারপাশের চর্বি জমে যাওয়া
  • শিশুদের নাকের পেছনে মাংস বেড়ে যাওয়া
  • বয়সজনিত কারণে কণ্ঠনালি সরু হওয়া
  • লম্বা টান টান হয়ে শুলে গলার কাছের পেশিগুলো আলগা হয়ে যাওয়া
  • গলার পেশির নমনীয়তা কমে যাওয়া
  • ধূমপান ও অ্যালকোহল আসক্তি

যা হতে পারে

  • নাক ডাকা রোগীদের হার্ট অ্যাটাক বেশি হয়
  • হার্ট ফেইলরের ঝুঁকি বেশি থাকে
  • ঘুমের মধ্যে হঠাৎ মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে
  • হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হয়
  • হার্টের অলিন্দ বড় হয়ে যেতে পারে
  • ডায়াবেটিস ও স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

নাক ডাকা এড়াবেন কীভাবে

  • চিৎ হয়ে না ঘুমিয়ে কাত হয়ে ঘুমান। কারণ, চিৎ হয়ে ঘুমালে গলার পেশি শিথিল থাকে। ফলে নাক বেশি ডাকার আশঙ্কা থাকে।
  • ওজন কমান। কারণ ওজন বেশি থাকার ফলে শ্বাসনালির চারদিকে চর্বি জমে বলে ঠিকমতো শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া যায় না।
  • অ্যালকোহল ও নেশাজাতীয় দ্রব্য বাদ দিন।
  • মাথার নিচে বালিশ ব্যবহার করতে পারেন। মাথার নিচে বালিশ দিলে বুকের চেয়ে মাথা বেশি উঁচুতে থাকে। এতে করে নাক ডাকার আশঙ্কা কিছুটা কমে যায়।
  • ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করুন। ধূমপান করলে শরীরের অক্সিজেন ব্যবহারের ক্ষমতা কমে যায়। এর ফলে বাতাস বের হওয়ার পথ সংকুচিত হয়ে পড়ে। এ কারণেও নাক বেশি ডাকতে পারেন অনেকে। তাই ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
  • নিয়মিত নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। এতে করে ঘুমের সঙ্গে শরীরের এক ধরনের সামঞ্জস্য তৈরি হয়। ফলে অভ্যাসেরও পরিবর্তন হয়।
  • ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম করলে পেশি, রক্তের চলাচল ও হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন বাড়ে, ফলে ঘুমও ভালো হয়।
  • প্রচুর পানি পান করুন। এতে নাকের রন্ধ্রে লেগে থাকা আঠারো মতো দ্রব্যগুলো দূর হবে। নাক ডাকাও কমবে।

নাক ডাকা যেসব রোগের লক্ষণ হতে পারে
ঘুমের সময় নাক ডাকা বেশ কিছু রোগের লক্ষণও। তাই একে হেলাফেলা করবেন না। নাক ডাকা যেসব রোগের লক্ষণ—

অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া একটি ঘুম-সংক্রান্ত রোগ। এই রোগে আক্রান্ত মানুষের ঘুমানোর সময় শ্বাসনালির মধ্য দিয়ে বাতাস চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় বলে উচ্চ শব্দে নাক ডাকার অভ্যাস হয়। এই রোগটি শ্বাসনালির রোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যারা ধূমপান ও মদ্যপান করেন, তাঁদের শ্বাসনালির সমস্যায় ভুগতে দেখা যায় এবং নিশ্বাসে সমস্যা শুরু হয়। এই রোগে আক্রান্ত মানুষকে বিষণ্নতা এবং স্মৃতিভ্রষ্ট রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।

উচ্চ রক্তচাপ
যাদের ঘুমের মাঝে নাক ডাকার অভ্যাস আছে, তারা প্রায় প্রত্যেকেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন। নাক ডাকা রোগীদের সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম উত্তেজিত থাকে। ফলে সিস্টোলিক ব্লাড প্রেশার বেশি থাকে, যা পরবর্তীতে স্থায়ী উচ্চ রক্তচাপে পরিণত হতে পারে। মস্তিষ্কের ধমনিতে ব্লক হওয়ার কারণে ঘুমানোর সময় নাক ডাকা অভ্যাস তৈরি হয়। মস্তিষ্কের ধমনিতে ব্লক উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থেকে তৈরি হয়। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বেড়ে চললে পরবর্তীতে ব্রেইন স্ট্রোকের আশঙ্কা দেখা দেয়। তাই নাক ডাকার অভ্যাসটিকে অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা করুন।

কার্ডিওভ্যাসক্যুলার রোগ
যাদের একটু বাড়তি ওজন আছে, তাদের বেশির ভাগ সময় নাক ডাকতে দেখা যায়। এর কারণ হলো, মেদ জমে শ্বাসনালির ব্যাস কমে যায় বলে ঠিকমতো শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া যায় না। ঘুমের মাঝে এই সমস্যা আরও বেশি দেখা যায়। ফলে নাক ডাকা শুরু হয়। মস্তিষ্কের ধমনিতে চাপ পড়ার ফলে কিংবা মেদ জমে শ্বাসনালির ব্যাস কমে যাওয়ার কারণে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ ঠিকমতো হয় না। তাতে দেহের ক্রিয়াকর্ম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর সে কারণে কার্ডিওভ্যাসক্যুলার সমস্যা সৃষ্টি হয়।

লেখক: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং জেনারেল সেক্রেটারি, অ্যাসোসিয়েশন অব সার্জনস ফর স্লিপ অ্যাপনিয়া, বাংলাদেশ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সংখ্যালঘু ইস্যুতে বাংলাদেশের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাল দিল্লি

‘ক্রিকেটাররা আমাকে ন্যুড পাঠাত’, বিস্ফোরক ভারতের সাবেক কোচের সন্তান

নালিতাবাড়ীতে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে যুবক আটক

পারদর্শী হয়ে উঠছে বাংলাদেশ, স্থিতিশীল হচ্ছে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক: ভারতীয় বিশেষজ্ঞ

পরপর সংঘর্ষে উড়ে গেল বাসের ছাদ, যাত্রীসহ ৫ কিমি নিয়ে গেলেন চালক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত