হাতিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: অফিস চলাকালে ফি নিয়ে রোগী দেখেন ডাক্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১১: ৩৯
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২: ০০

সাদা পোশাক পরা কাউকে দেখলেই চিৎকার করে কেঁদে উঠছে ১৮ মাসের শিশু আফিয়া নূর। ডায়রিয়া নিয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ভর্তি সে। আফিয়ার মা সাদিয়া ইসলাম জানান, সাদা পোশাকে কাউকে দেখে আফিয়া ভাবছে ডাক্তার কিংবা নার্স। ইনজেকশনের ভয়ে আঁতকে উঠছে সে। 

গতকাল সোমবার এই হাসপাতালে সাদিয়া ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। এদিন সেখানে দেখা যায়, পেট খারাপ, জ্বর, বমি, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ নিয়ে শিশুরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। শিশু হাসপাতালের তথ্য বলছে, সেখানে ভর্তি শিশুর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। 

সাদিয়া ইসলাম আরও বলেন, নড়াইলের লোহাগড়া থেকে এসেছেন তাঁরা। ডায়রিয়া ও বমিতে আক্রান্ত হয়ে লোহাগড়ার হাসপাতালে চার দিন ভর্তি ছিল আফিয়া। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

১ মাস ২১ দিনের শিশু নাসির ফাওয়াজ। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে সে। শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আফিয়া আর ফাওয়াজের মতো ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে। 

গতকাল সোমবার রাজধানীর শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পেডিয়েটিক রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. কামরুজ্জামান বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ রোগী আসছে; যাদের বেশির ভাগই ডায়রিয়া, নিউমোনিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত। শীতের প্রকোপের কারণে এখন শিশুরা নিউমোনিয়া ও রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। 

হাসপাতালের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম ১৪ দিনে এই হাসপাতালে ২২৩টি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু ভর্তি হয়েছে। আর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৯৮টি। হাসপাতালে ভর্তি শিশুর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিউমোনিয়ার উপসর্গ নিয়ে গত ১৪ দিনে ৩৬টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। 

সেখানকার চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের মা-বাবারা সাধারণত ডাক্তার দেখিয়ে প্রেসক্রিপশন নিয়ে চলে যান। যাদের শারীরিক অবস্থা খুব জটিল থাকে, তারাই কেবল হাসপাতালে ভর্তি হয়। ফেব্রুয়ারি নাগাদ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা তাঁদের। 

এ প্রসঙ্গে চিকিৎসক মো. কামরুজ্জামান বলেন, কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিশুর অবস্থা যখন খুব খারাপ অবস্থায় চলে যায়, তখন হাসপাতালে নিয়ে আসেন অভিভাবকেরা। তখন শিশুটিকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যায়। 

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, সারা দেশেই ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগ বাড়ছে। অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৪০২ জন। আর শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ নিয়ে ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৯৬ জন। 

অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুসারে, গত দুই মাসে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭৪ জন। এর মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ নিয়ে ভর্তি হয়েছে ৬৪ হাজার ১১৭ জন রোগী। এর মধ্যে ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত