Ajker Patrika

সাল্ক জানালেন, পোলিও টিকা প্রস্তুত

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৩, ১১: ২৪
সাল্ক জানালেন, পোলিও টিকা প্রস্তুত

মার্চ ২৬, ১৯৫৩। আমেরিকান চিকিৎসক ও গবেষক জোনাস সাল্ক দেশের জাতীয় রেডিওর এক অনুষ্ঠানে দেন যুগান্তকরী সেই ঘোষণা। পলিওমিয়েলিটিসের বিরুদ্ধে কাজ করে এমন এক টিকার সফল পরীক্ষা চালিয়েছেন তিনি। এই ভাইরাসই পোলিও রোগের জন্য দায়ী।

এই ঘোষণা আসার আগের বছর, অর্থাৎ ১৯৫২ সালে পোলিওর জন্য ছিল মহামারির বছর। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নতুন ৫৮ হাজার আক্রান্ত হয় এই রোগে, এদের মধ্যে মারা যায় ৩ হাজারের বেশি।

পোলিও এ সময় পরিচিতি পায় ‘ইনফ্যান্ট প্যারালাইসিস’ বা ‘শিশুদের পক্ষাঘাত’ নামে। কারণ এতে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। আর এই রোগ নির্মূলে বড় ভূমিকা রাখায় ড. সাল্ক এ সময় ব্যাপক পরিচিতি পান।

ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে মানব জাতি আক্রান্ত হয়েছে পোলিওতে। স্নায়ুকে আক্রমণ করে পক্ষাঘাতসহ শরীরের নানা অংশ অবশ করে দেয় রোগটি। আর একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাসটি। তাই বিশ শতকের প্রথম দশকে পোলিও মহামারি অতি সাধারণ এক ঘটনায় পরিণত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম বড় পোলিও মহামারি আঘাত হানে ১৮৯৪ সালের গ্রীষ্মে, ভারমন্টে। ওই সময় কোয়ারেন্টিন আর বিখ্যাত আয়রন-লাঙেই (শ্বাস নিতে সাহায্য করে এমন কফিনের মতো দেখতে যন্ত্র) সীমাবদ্ধ ছিল চিকিৎসা।

যদিও শিশু, বিশেষ করে নবজাতকেরা সবচেয়ে বেশি বিপদগ্রস্ত ছিল রোগটিতে, প্রাপ্তবয়স্করাও বাদ যেতেন না। যেমন পরবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়া ফ্রাংকলিন ডি রুজভেল্ট ১৯২১ সালে ৩৯ বছর বয়সে আক্রান্ত হন রোগটিতে। পরে রুজভেল্ট ‘ওয়ার্ম স্প্রাংসে’ তাঁর নিজের জমিতে পোলিও রোগীদের চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে তোলেন। শুধু তাই নয়, রোগটির প্রতিষেধক তৈরিতে গবেষণা এবং চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহেও বড় ভূমিকা রাখেন।

ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গে সাল্ক১৯১৪ সালে নিউইয়র্কে জন্ম নেওয়া সাল্ক ভাইরাস নিয়ে গবেষণা শুরু করেন ১৯৩০-এর দশকে। তখন তিনি নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে মেডিকেলের শিক্ষার্থী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্লুর প্রতিষেধকের উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন। ১৯৪৭ সালে ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গের একটি গবেষণা পরীক্ষাগারের প্রধান হন। ১৯৪৮ সালে পোলিও ভাইরাস নিয়ে গবেষণা এবং প্রতিষেধক তৈরির চেষ্টার জন্য বৃত্তি পান। ১৯৫০ সালের দিকে পোলিও ভ্যাকসিনের প্রাথমিক একটি সংস্করণ তৈরিতে সফল হোন।

সাল্কের আগে অবশ্য আরও অনেকেই চেষ্টা করেন ভাইরাসটির প্রতিষেধক তৈরিতে। মোটামুটি কাছাকাছি পৌঁছেও ১৯৩০-এর দশকে আমেরিকান মরিস ব্রডির প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। সাল্ক প্রথম মানুষের ওপর পরীক্ষা চালান ভাইরাসটির। এটি তিনি চালান একসময় পোলিও আক্রান্ত হয়েছিল এমন মানুষদের এবং নিজের ও তাঁর পরিবারের ওপর। ১৯৫৩ সালে নিজের সাফল্যের বিষয়টি মানুষের সামনে প্রকাশ করার পর্যায়ে পৌঁছে যেন। আর এটি করেন সিবিএস ন্যাশনাল রেডিও নেটওয়ার্কে। দুই দিন পর অবশ্য আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের একটি জার্নালেও এ বিষয়ে একটি লেখা প্রকাশিত হয়।

১৯৫৪ সালে এই টিকার পরীক্ষাগার প্রয়োগ শুরু হয়। এ সময় আমেরিকার স্কুল শিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়। ১৯৫৫ সালে এই টিকা কার্যকর এবং নিরাপদ বলে ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণা দেন ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের ড. টমাস ফ্রান্সিস, ১৯৫৫ সালের ১২ এপ্রিল। টিকার পরীক্ষা-নিরীক্ষার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন তিনি।

পোলিও টিকাকে কার্যকর এবং নিরাপদ বলে ঘোষণা করার পর পত্রিকায় খবরতারপর গোটা দেশে প্রচার ও প্রয়োগ শুরু হয়। এ সময়ই পশ্চিম ও মধ্য-পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে বড় একটা সমস্যা তৈরি হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলের একটি গবেষণাগারের তৈরি ত্রুটিপূর্ণ প্রতিষেধক দেওয়া হয় ২ লাখের বেশি মানুষকে। এ ঘটনায় কয়েক হাজার মানুষ পোলিও আক্রান্ত হয়। ২০০ শিক্ষার্থীর পক্ষাঘাত দেখা দেয় এবং ১০ জন মারা যায়।

এ ঘটনা টিকাটি তৈরিতে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি করে। তবে এই টিকা সহজপ্রাপ্য হওয়ার প্রথম বছরে, ১৯৫৭ সালে নতুন পোলিও আক্রান্তের সংখ্যা নেমে আসে ৬ হাজারের নিচে। ১৯৬২ সালে পোলিশ-আমেরিকান গবেষক আলবার্ট সাবিন মুখ দিয়ে খাওয়া যায় এমন একটি পোলিও টিকা আবিষ্কার করেন। এতে প্রতিষেধকটি আরও বেশি সহজলভ্য হয়। এদিকে তাঁর পোলিও টিকার জন্য রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যাওয়া জোনাস সাল্ক অন্যান্য সম্মাননার সঙ্গে লাভ করেন প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম। সেটা ১৯৭৭ সালের ঘটনা। ১৯৯৫ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার লা জালায় মারা যান তিনি।

সূত্র: হিস্ট্রি ডট কম, উইকিপিডিয়া

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

ঢাবি ছাত্রীকে যৌন হেনস্তাকারীর পক্ষে নামা ‘তৌহিদী জনতার’ আড়ালে এরা কারা

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

‘মবের হাত থেকে বাঁচাতে’ পলকের বাড়ি হয়ে গেল অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত