চিকিৎসাক্ষেত্রে বর্ণবাদ, মাংকি পক্স নামকরণেও তার ছাপ  

ডয়চে ভেলে
প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২৪, ১০: ২৪

জীবনের নানা ক্ষেত্রে মানুষ বর্ণ ও জাতিভেদের শিকার হয়। কিন্তু চিকিৎসার ক্ষেত্রে এমন বৈষম্য ইচ্ছাকৃত না হলেও তার পরিণতি মারাত্মক হতে পারে। বার্লিনের দুই বিশেষজ্ঞ বিষয়টিকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

আজকের যুগেও চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে শ্বেতাঙ্গ মানুষদের মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়। ফলে চিকিৎসার ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়ে। ইমারজেন্সির সময়ে দেখা যায়, কোনো রোগীর ঠোঁট নীল হয়ে গেছে। অথবা লাল ছোপ বা ফুসকুড়ি প্রদাহের লক্ষণ হতে পারে। যেমন বার্লিনের শারিটে হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ড. এফসোনা শেনকোরু মনে করেন, কৃষ্ণাঙ্গ রোগীদের রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বেশি ত্রুটি দেখা গেছে।

কিন্তু কালো ত্বকের মানুষের ক্ষেত্রে এমন লক্ষণ শনাক্ত করা কঠিন হতে পারে। কারণ, সে ক্ষেত্রে ঠোঁটের রং ও ত্বকের অবস্থা বোঝা সহজ নয়। ড. শেনকোরু নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আমি কোনো ইমার্জেন্সি রুমে থাকলে শুধু শেখানো বিষয় বা লক্ষণ দেখে রোগ নির্ণয় করি। শেখানো বিষয়ের পরিণতিতেই আমি ভুল করতে পারি, কঠিন রোগের ক্ষেত্রেও হয়তো গুরুত্ব না বুঝতে পারি। এর অর্থ, আমি হয়তো চিকিৎসার ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নেব না।’

ড. শেনকোরু সেই অবস্থা বদলাতে চান। তিনি চর্মরোগবিদ্যার ক্ষেত্রে ত্বকের রঙের বিশেষজ্ঞ। তাঁর মতে, ‘আমার সময়কার টেক্সট বইয়ের দিকে তাকালে উজ্জ্বল বর্ণের প্রাধান্য চোখে পড়বে।’

তিনি বার্লিনের শারিটে হাসপাতালে কাজ করেন। জালিদ সেহুলিও সেখানে কর্মরত। তিনি চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বহুকাল সোচ্চার রয়েছেন। জালিদ মনে করেন, ‘সংবাদমাধ্যম, এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা প্রিন্ট মিডিয়ার দিকে নজর দিলে লক্ষ্য করবেন যে, তারা খুব ঘনঘন বাঁধাধরা উপকরণ ব্যবহার করে। যে কোনো সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রেও সেটা দেখা যায়।’

যেমন মাংকি পক্সের মতো রোগ প্রায়ই কালো ত্বকের ওপর দেখানো হয়। এমনকি ২০২২ সালে সেই ভাইরাস গোটা বিশ্ব, বিশেষ করে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক শ্বেতাঙ্গ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লেও সেই মনোভাবে কোনো পরিবর্তন হয়নি।

ডেনমার্কে এক ল্যাবে বানরের মধ্যে সেই ভাইরাস প্রথম আবিষ্কৃত হওয়ায় সেটির নাম মাংকি পক্স রাখা হয়েছিল। করোনা ভাইরাসের মতো সেটিও পশু থেকে অন্য পশু বা মানুষের শরীরে সংক্রমিত হতে পারে। তবে বানর নয়, ইঁদুর জাতীয় প্রাণীই সেই সংক্রমণ ঘটায় বলে জানা গেছে। আফ্রিকার পশ্চিম ও মধ্যভাগে সেই ভাইরাসের উৎপত্তি হলেও সেটি গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।

ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক শ্বেতাঙ্গ মানুষও আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু মিডিয়ায় মূলত কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের ছবি দেখা গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মাংকি পক্স নামকরণের মধ্যে বর্ণবাদী এবং কলঙ্কজনক প্রবণতার পরিচয় রয়েছে।

বিশেষ করে শ্বেতাঙ্গ মানুষের মনে বানর, পক্স ও আফ্রিকাকে সমান চোখে দেখার বাঁধাধরা এক ধারণা কাজ করে। শ্বেতাঙ্গ মানুষের চোখে সেই রোগ ‘অন্যদের’ আক্রান্ত করে বলে যে ধারণা চালু আছে, গবেষণার ক্ষেত্রে সেটাকে ‘আদারিং’ বলা হয়। ডব্লিউএইচও এখন সেই রোগকে ‘এম পক্স’ হিসেবে বর্ণনা করার পরামর্শ দিচ্ছে। জালিদ সেহুলি বলেন, ‘ভিজিবিলিটির ক্ষমতা কম নয়, কারণ আমরা অনেক কিছু ছবি ও চাক্ষুষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে  অবচেতনেই শিখি।’

জালিদ হাসপাতালে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তিনি বলেন, রোগীরা জার্মান না বুঝলে প্রায়ই ভুল বোঝাবুঝি ও বৈষম্য দেখা যায়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দোভাষীও সব সময়ে পাওয়া যায় না। ফলে অতি কম তথ্যের ভিত্তিতে ভুল চিকিৎসা হয়। যেন কী ঘটছে, রোগীরা তা না বুঝলেও কিছুই এসে যায় না।

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে এফসোনা শেনকোরু ব্যক্তিগত উদ্যোগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘পিপল অব কালার’ বা ভিন্ন বর্ণের মানুষের জন্য তথ্য দেন। হাসপাতালেও তিনি এখন ‘স্কিন অব কালার ডার্মাটোলজি’ বিষয়ে পরামর্শ দেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত