খাবার এবং ওষুধ থেকে অ্যালার্জি হতে পারে

ডা. তুষার সিকদার
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৩, ০৭: ৫৯

যেকোনো বহিঃশত্রু বা অ্যালার্জেনের বিরুদ্ধে শরীর যে প্রতিক্রিয়া দেখায়, তা-ই অ্যালার্জি। এটি হচ্ছে আমাদের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার একটি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। পরিবেশের কোনো অ্যালার্জেনের কারণে শরীর অতি সংবেদনশীল হলে কিংবা অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া দেখালে দেখা দেয় অ্যালার্জি। একে বলে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন বা হাইপারসেনসিটিভিটি রিঅ্যাকশন।

প্রধান লক্ষণ
হাঁচি, কাশি, চুলকানি, চামড়া ফুলে যাওয়া, লাল হওয়া, জ্বালাপোড়া ইত্যাদি। আর বেশি গুরুতর হলে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট, পেটব্যথা, কমে যায় রক্তচাপ। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যদি এর কোনো কারণ নির্ণয় করা না যায়, তাহলে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। 

অ্যালার্জিক রাইনাইটিস
কারও কারও বৃষ্টিতে ভিজলে, ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে, ধুলাবালুতে গেলে, একটু ঠান্ডা লাগলে বা  কোনো ঠান্ডা পানীয় পান করলে প্রচণ্ড সর্দি-কাশি শুরু হয়ে যায়। একই কাজে অন্যদের কিছু হয় না। অর্থাৎ বৃষ্টির পানি, ধুলাবালু, পুকুরের পানি বা ঠান্ডা জলীয় বস্তু কারও কারও জন্য অ্যালার্জেন আর কারও জন্য স্বাভাবিক। সর্দি-কাশি শুরু হয়ে গেলে তাকে বলা হয় অ্যালার্জিক রাইনাইটিস। এটি হলে সাধারণত শ্বাসযন্ত্রের মিউকাস মেমব্রেন বা মুখের ভেতরের ঝিল্লি আবরণ আক্রান্ত হয়। হিস্টামিনের প্রভাবে সেখান থেকে তৈরি হয় প্রচুর মিউকাস। শ্বাসযন্ত্রে লিউকোট্রিন নামের একপ্রকার পদার্থ তৈরি হয়, যা কাশি তৈরিতে শ্বাসযন্ত্রকে উদ্দীপ্ত করে। ফলে নাক দিয়ে পানি পড়ে, বারবার হাঁচি-কাশি হয়, গলা খুসখুস করে, সঙ্গে হালকা জ্বরও থাকতে পারে।

অনেক কিছুতেই অ্যালার্জি হতে পারে। যেমন—

  • খাবারে অ্যালার্জি
    গরুর মাংস, ইলিশ মাছ, বেগুন, চিংড়ি, সামুদ্রিক মাছ খেলে কারও কারও শরীরে চুলকানি শুরু হয়ে যায়, বমি ভাব হয়। এটাও একধরনের অ্যালার্জি। তাদের শরীর সেসব খাবারের উপযোগী নয়। অন্যদের জন্য খাবারগুলো স্বাভাবিক হলেও তাদের জন্য অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করে।
  • ওষুধে অ্যালার্জি
    কিছু মানুষের কোনো বিশেষ ওষুধে (বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক) অ্যালার্জি থাকে। ওই ওষুধ গ্রহণ করার পর শরীর চুলকাতে চুলকাতে লাল হয়ে যায়। আরও গুরুতর হলে মুখে ঘা বা শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। এমন হলে বুঝে নিতে হবে, ওই ওষুধের প্রতি তার অতিসংবেদনশীলতা রয়েছে। যদি কারও এমন হয়ে থাকে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সেটা বন্ধ করে দিতে হবে এবং লিখে রাখতে হবে। পরবর্তী সময়ে ওই গ্রুপের ওষুধ তাকে আর দেওয়া যাবে না। 
  • অ্যাটোপিক একজিমা
    অ্যাটোপিক একজিমা একপ্রকার অ্যালার্জি। এতে ত্বক খসখসে ও শুষ্ক হয়ে পড়ে, সঙ্গে প্রচণ্ড চুলকানিও থাকে। সমস্যা গুরুতর হলে ত্বক ফেটে যায়, এমনকি রক্তপাতও হতে পারে। সাধারণত সাবান, ডিটারজেন্ট ইত্যাদি পদার্থের প্রতিও সংবেদনশীলতা থাকে।
  •  অ্যানাফাইলেকটিক রিঅ্যাকশন
    কারও কারও বিশেষ কোনো কীটপতঙ্গের স্পর্শ বা কামড়ে অথবা কোনো ওষুধ বা খাবার খাওয়ার পর হঠাৎ শরীরে লাল লাল চাকা দেখা যায়, চুলকানি হয়, সারা শরীর ব্যথা করে, সঙ্গে শ্বাসকষ্টও হতে পারে। রক্তচাপ কমে রোগী অচেতনও হয়ে পড়তে পারে। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে। এই অবস্থাগুলোকে বলে অ্যানাফাইলেকটিক রিঅ্যাকশন। এটা অ্যালার্জির সবচেয়ে খারাপ অবস্থা। এ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে, প্রয়োজনে আইসিইউ লাগতে পারে।
  • অ্যালার্জির চিকিৎসা
    অ্যালার্জির স্থায়ী কোনো চিকিৎসা নেই। মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত রোগ-প্রতিরোধক্ষমতার সঙ্গে এটার সম্পর্ক। একেকজনের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা একেকভাবে কোনো বস্তুর প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখায়। তাই যাদের যেসব বস্তু বা খাবারে অ্যালার্জি রয়েছে, তা পরিহার করে চলাই ভালো। আর অ্যালার্জিক উপসর্গগুলো দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।

ডা. তুষার সিকদার, সহযোগী অধ্যাপক চর্ম, অ্যালার্জি ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ সদস্য: ন্যাশনাল সোসাইটি ফর সেক্সুয়াল মেডিসিন 
সেন্ট্রাল হসপিটাল লিমিটেড 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

ভারতের পাল্টা আক্রমণে দিশেহারা অস্ট্রেলিয়া

ঢাকা কলেজে সংঘর্ষকালে বোমা বিস্ফোরণের ছিটকে পড়েন সেনাসদস্য—ভাইরাল ভিডিওটির প্রকৃত ঘটনা

ঐশ্বরিয়ার বিচ্ছেদের খবরে মুখ খুললেন অমিতাভ

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত