প্রতিদিনের খাবারে থাকা চাই আঁশ

অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী
প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮: ৩০

খাদ্যের আঁশ আমাদের পেট রাখে ভরাট আর পরিপাক রাখে সচল, সুস্থ। শুধু এটুকুই নয়; আরও আছে। আমাদের পরিপাক অন্ত্রে আছে উপকারী অনেক জীবাণু। খাবারের আঁশ তাদের রক্ষা করে আর সুস্থিত রাখে রক্তে গ্লুকোজ ও কোলেস্টেরল।

আঁশ দুই ধরনের। দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয়। দ্রবণীয় আঁশ শুষে নেয় জল আর পরিপাকের সময় জেল হয়ে যায়। এ ধরনের আঁশ সুস্থিত করে রক্তের গ্লুকোজ আর কোলেস্টেরল। অদ্রবণীয় আঁশ চলে যায় পরিপাক নল দিয়ে। এরা গলে না। তবে এ ধরনের আঁশ অন্ত্রকে করে সচল। এর ফলে মল নরম হয়। অন্ত্র হয় পরিষ্কার। এই দুই ধরনের আঁশের উৎস হলো উদ্ভিদ।

কতটুকু আঁশ চাই প্রতিদিন
আমাদের খাবারে যদি থাকে পর্যাপ্ত ফল, সবজি আর হোল গ্রেন, তাহলে আঁশ খাওয়া হচ্ছে এটা বোঝা যাবে। আমেরিকার এফডিএ বলে, প্রতিদিন চাই ২৮ গ্রাম আঁশ। আর নয়তো প্রতিদিন ১ হাজার ক্যালরিতে থাকবে ১৪ গ্রাম আঁশ।

আঁশ কম খেলে কী হয়

  • কোষ্ঠবদ্ধতা: খাবারে পর্যাপ্ত আঁশ না থাকলে কোষ্ঠবদ্ধতা হয়। খাবারে আঁশ যত কম থাকবে, কোষ্ঠকাঠিন্য তত বেশি হবে। তাই পর্যাপ্ত পানি, ফল ও সবজি যোগ করতে হবে খাবারে।
  • ওজন বাড়ে: খাবারে আঁশ না খেলে ক্ষুধা লাগে বেশি। এ জন্য ঘন ঘন কোনো না কোনো খাবার খেতে হয়। তাতে ওজন বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। খাবারে আঁশ থাকলে পেট থাকে ভরাট এবং খাবার হজম হয় দেরিতে। তাই আরও খাবার খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কমে যায়। ফলে অল্প খেলেই চলে। এতে ওজন বাড়ার আশঙ্কা থাকে না।
  • গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ে: খাবারে আঁশ না থাকলে খাবার হজম হয় দ্রুত। ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ার আশঙ্কা থাকে। খাবারে আঁশ থাকলে খাবার হজম হবে ধীরে ধীরে। এতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা থাকবে স্থির।
  • ক্লান্তিবোধ: সকালে ক্লান্তি লাগার মানে কম আঁশের খাবার আর পরিশোধিত চিনি খাওয়া হয়েছে বেশি। এতে রক্তে চিনির পরিমাণ ওঠানামা করে শরীরে ক্লান্তিবোধ হয়।
  • রক্তে বাড়ে কোলেস্টেরল: দ্রবণীয় আঁশ না খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ, দ্রবণীয় আঁশ কোলেস্টেরল কণাকে নিয়ে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে শরীর কোলেস্টেরল কণা বেশি শুষতে পারে না। ফলে শরীরে এর পরিমাণ কম থাকে।
  • পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহ: আঁশের অভাবে অন্ত্রের উপকারী জীবাণুরা ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তাই পরিপাকতন্ত্রে প্রদাহ হতে পারে। এই প্রদাহ ধীরে ধীরে ক্রনিক হয়ে যেতে পারে।

খাবারে আঁশ বাড়ানোর উপায়

  • বিভিন্ন রঙের সবজি খেতে হবে।
  • সকালে ওটস, লাল আটার রুটি, সবজি, বিভিন্ন ধরনের ফল আর সঙ্গে ডিম খেতে পারেন।
  • বিকেলের নাশতায় বাদাম, শুকনো ফল আর হোল মিল ক্র্যাকারস রাখতে পারেন।
  • দুপুরে লাল চাল বা লাল আটার রুটি খেতে পারেন।
  • ডাল, বিন, মটরশুঁটি প্রায় প্রতিদিন খেতে হবে।
  • প্রতিবার খাবারের সময় দুই ধরনের সবজি বা ফল খেতে পারেন।

লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত