বাড়ন্ত শিশুর হাড়ের রোগ রিকেটস

ডা. ইমনুল ইসলাম ইমন
Thumbnail image

শিশুদের অপুষ্টিজনিত অসুখের মধ্যে অন্যতম রিকেটস রোগ। কিন্তু এ রোগ সম্পর্কে খুব কম মানুষ জানে। এটি মূলত শিশুদের বাড়ন্ত হাড়ের গঠনগত ত্রুটিজনিত রোগ। সাধারণত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’র অভাবে এ রোগ হয়। ফলে শিশুর হাড় বেঁকে যায়, হাড়ে ব্যথা হয়, পায়ের বিকৃতি দেখা যায়। এমনকি হার নরম হয়ে ভেঙে যেতে পারে। মূলত শিশুটির শারীরিক বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়। এটি কখনো কখনো বংশগত কারণেও হয়ে থাকে।

রোগের কারণ
সূর্যালোকের অভাব, খাবারে ভিটামিন ‘ডি’-এর ঘাটতি, খাদ্যজনিত ভিটামিন ডি শোষণ কমে যাওয়া এই রোগ হওয়ার কারণ। আবার লিভার ও কিডনি রোগসহ বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও এ রোগ হতে পারে।

কীভাবে হয়
রক্তে কোনো কারণে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে গেলে ভিটামিন ডি খাদ্যনালি থেকে রক্তে ক্যালসিয়ামের শোষণ বৃদ্ধি করে এবং হাড়ে থাকা ক্যালসিয়াম শোষণ করে রক্তে নিয়ে আসে। ফলে হাড়ে ক্যালসিয়ামের ঘাটতিতে হাড় নরম হয়ে যায়। এ সময় শিশুর শারীরিক বৃদ্ধিতে ওই নরম হাড় ভার বহন করতে না পেরে ধীরে ধীরে বেঁকে যেতে থাকে। এভাবে রিকেটস রোগের জন্ম হয়। 

লক্ষণ
জন্মের প্রথম বছরের শেষে বা দ্বিতীয় বছরের শুরুতে শিশুর রিকেটস রোগের লক্ষণগুলো দেখা যায়। একই রোগে আক্রান্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো হলে শিশুদের দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে যে লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে:

  • খুলির হাড়গুলো নরম হয়ে যাওয়া।
  • মাথার খুলির আকৃতি চার কোনা বাক্সের মতো হওয়া।
  • দুধদাঁত উঠতে দেরি হওয়া, দাঁত ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়া।
  • বুকের পাঁজরের হাড়গুলো বুকের সামনে বৃদ্ধি পাওয়া।
  • বুকের খাঁচা আবার পরিবর্তিত হওয়া, কবুতরের বুকের মতো হয়ে যাওয়া।
  • কবজি ও গোড়ালির হাড় বেড়ে যাওয়া।
  • হাঁটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত পা সামনের দিকে বেঁকে যাওয়া।
  • হাঁটুর কাছ থেকে দুই পা দুই দিকে বেঁকে যাওয়া।
  • দুই পা একই সঙ্গে একই দিকে বেঁকে যাওয়া।
  • শরীরের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম হলে মাংসপেশি শুকিয়ে গিয়ে দুর্বল হয়ে যাওয়া।
  • টিটানিতে আক্রান্ত হওয়া।

রোগ শনাক্তে পরীক্ষা
রোগের লক্ষণগুলো চিহ্নিত করে হাড়ের এক্স-রে এবং রক্ত পরীক্ষা করে রোগটি শনাক্ত করা যায়।

জটিলতা
শ্বাসনালির প্রদাহ, ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া, আয়রনের ঘাটতিতে রক্তস্বল্পতা, শারীরিক উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়া, টিটানি রোগে আক্রান্ত হওয়া, হাড় নরম হয়ে গিয়ে ভেঙে যাওয়া প্রভৃতি জটিলতা দেখা দিতে পারে। 

চিকিৎসা

  •  শিশুকে প্রতিদিন ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। বিভিন্ন রকম সবজি, যেমন ঢ্যাঁড়স, কুমড়া ও বিভিন্ন রকম শাক এবং কাঁটাওয়ালা ছোট মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দুধ অথবা দুধজাতীয় খাবার দৈনিক ৬০০ মিলিলিটার খাওয়াতে পারলে ক্যালসিয়ামের দৈনিক চাহিদা পুরোপুরি মেটানো যাবে। পাশাপাশি ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ানো যেতে পারে। এ ছাড়া ভিটামিন ‘ডি’-এর ব্যবহার ও রিকেটস রোগের চিকিৎসায় প্রচলিত রয়েছে।
  • শিশুকে নিয়মিত সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টার মধ্যে ৩০ মিনিট সময় রোদে রাখলে রিকেটস রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। পুষ্টি চিকিৎসার সঙ্গে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম ব্যবহারের ফলে ৭৫ শতাংশ শিশুই সুস্থ হয়ে যায়। তবে ছয় বছরের বেশি হলে এবং পা বেঁকে যাওয়ার পরিমাণ ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি হলে ব্রেস চিকিৎসা, আবার কখনো কখনো শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে।
  • গর্ভবতী ও প্রসূতিকে ভিটামিন ‘ডি’-এর ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুদের দুধ ও খাবারে ভিটামিন ডি সংযুক্ত করতে হবে। স্বল্প ওজনের অপরিণত শিশুর জন্মের পর দুই সপ্তাহ থেকে ভিটামিন ডি দিতে হবে।

ডা. ইমনুল ইসলাম ইমন, অধ্যাপক, শিশু বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত