মায়ের দুধের বিকল্প নেই

মো. ইকবাল হোসেন 
প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২১, ১০: ০০
আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২১, ১২: ৩৫

মায়ের বুকের দুধ শিশুর জীবনে শ্রেষ্ঠ সূচনা। শিশুর আয়ু, পুষ্টি, বৃদ্ধি ও বিকাশ—সব মঙ্গল নিহিত আছে এতে। বলা হয়ে থাকে, জন্মের পর শালদুধ শিশুর প্রথম টিকা। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই বাচ্চা যার, দুধ তার হতে হবে। আপনি যদি মানবশিশুকে জন্মের পর গরু-ছাগলের শালদুধ খাওয়ান, তাহলে সেটা কাজে আসবে না। মানবশিশুর হাড়, দাঁত, মস্তিষ্কসহ শরীরের প্রতিটি অংশের গঠনে যে উপাদান যতটুকু দরকার, মায়ের দুধে ঠিক ততটুকুই আছে। প্রতি ১০০ মিলিলিটার দুধে যা থাকে—  

উপাদানমায়ের দুধগরুর দুধ
শর্করা ৭.১ গ্রাম৪.৫ গ্রাম
প্রোটিন১.১ গ্রাম৩.৫ গ্রাম
চর্বি   ৪.১ গ্রাম৩.৯ গ্রাম
আয়রন    ০.২ মিলিগ্রাম০.১ মিলিগ্রাম
ফাইবার০.২ গ্রাম ০.১ গ্রাম
ক্যালসিয়াম৩৩ মিলিগ্রাম ১২৫ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম০.১৭ গ্রামসোডিয়াম ০.৭৭ গ্রাম
জিংক১.৮ মিলিগ্রামজিংক ৪ মিলিগ্রাম

মায়ের দুধে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে। এটি শিশুর জন্য খুব দরকারি। এতে উন্নতমানের কার্বোহাইড্রেট অলিগোস্যাকারাইড পাওয়া যায়, যা গরুর দুধে পাওয়া যায় না। গরুর দুধে আয়রন ও ফাইবারের পরিমাণ খুবই কম থাকে, যা মায়ের দুধে অনেক বেশি থাকে। অন্যদিকে গরুর দুধে প্রোটিনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এই প্রোটিন বাছুরের দ্রুত শারীরিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন। কিন্তু এই উচ্চ প্রোটিন মানব শিশুর জন্য প্রযোজ্য নয়। এ ছাড়া মায়ের বুকের দুধে চর্বি পরিপাককারী লাইপেজ এনজাইম থাকে। এটি অন্য কোনো দুধে থাকে না। মায়ের দুধ যেহেতু সরাসরি পান করা হয়, তাই প্রতিটি এনজাইমের কার্যকারিতা অক্ষুণ্ন থাকে।

অন্যদিকে গরুর দুধে কিছু প্রয়োজনীয় এনজাইম থাকলেও তা বারবার ফুটানোর কারণে অনেকটাই অকেজো হয়ে যেতে পারে। মানুষের শিশুর জন্য মানুষের দুধ আর গরু-ছাগলের বাচ্চার জন্য তাদের দুধই দরকার। একজনের দুধ অন্যজনের জন্য প্রযোজ্য নয়। জন্মের পর আধা ঘণ্টার মধ্যে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করা উচিত। শুরুতেই হয়তো শিশু বুকের দুধ পাবে না। তাই বলে খাওয়ানো বন্ধ রাখা যাবে না। শিশুকে পূর্ণ ছয় মাস; অর্থাৎ ১৮০ দিন বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এই ছয় মাস মায়ের দুধেই শিশুর শরীর ও মস্তিষ্ক গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত উপাদান পাবে।

মায়ের দুধে শিশুর উপকারিতা

  • প্রয়োজনীয় সব উপাদান মায়ের দুধে আছে বলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে।
  • সহজে হজম হয় এবং অ্যালার্জির সমস্যা হয় না।
  • মায়ের দুধের অ্যান্টিবডি শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।
  • বিকল্প দুধের তুলনায় মায়ের দুধে বুদ্ধির বিকাশ ৯ গুণ বেশি হয়।
  • মায়ের মমতা ও ভালোবাসা পেয়ে বড় হওয়া শিশু মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন হয়।

বুকের দুধ খাওয়ানোয় মায়ের উপকারিতা

  • মায়ের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
  • শিশু জন্মের পর মায়ের রক্তক্ষরণ কম হয়।
  • শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে তা প্রাকৃতিকভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণের কাজ করে।
  • বুকের দুধ খাওয়ানো মায়ের জরায়ু, স্তন ক্যানসারসহ অনেক রোগ থেকে রক্ষা করে।
  • শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে তা মায়ের ওজন কমাতে সাহায্য করে।

বিকল্প দুধ খাওয়ালে যা হতে পারে

  • দুধ, নিপল ও বোতলে জীবাণু থাকার আশঙ্কা থাকে বলে শিশু ঘন ঘন অসুখে ভুগতে পারে।
  • বিকল্প দুধে মায়ের দুধের মতো রোগপ্রতিরোধি শক্তি থাকে না।
  • এ ধরনের দুধ খেয়ে বেড়ে ওঠা শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
  • বিকল্প দুধে আয়রন কম থাকে বলে শিশু আয়রনের অভাবজনিত রক্তস্বল্পতায় ভোগে।
  • এ ধরনের দুধ খেলে শিশু প্রায়ই কোষ্ঠকাঠিন্যে কষ্ট পায়। 

বিকল্প দুধ মায়ের দুধের চেয়ে কিছুটা মিষ্টি স্বাদের। ফলে শিশু মায়ের দুধ খেতে চায় না এবং ধীরে ধীরে মায়ের দুধ খাওয়া কমিয়ে দেয়। ফলে বুকের দুধ ক্রমে শুকিয়ে যায়। তাই একান্ত বাধ্য না হলে শিশুকে মায়ের দুধের বিকল্প কোনো দুধ না খাওয়ানো সবচেয়ে ভালো।

মো. ইকবাল হোসেন: পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত