ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
আজ ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব হার্ট দিবস। বিশ্বজুড়ে হৃদ্রোগ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অন্যান্য দেশর মতো আমাদের দেশেও দিবসটি পালিত হয়। প্রথম বিশ্ব হার্ট দিবস পালন করা হয় ২০০০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এবং ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের শেষ রবিবার বিশ্ব হার্ট দিবস হিসেবে পালন করা হতো। পরবর্তীকালে ২০১১ সাল থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর দিনটি বিশ্ব হার্ট দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়।
বর্তমানে হৃদ্রোগ বিশ্বের এক নম্বর ঘাতক ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত। কোনো রকম পূর্বাভাস ছাড়াই হৃদ্রোগ যেকোনো সময় কেড়ে নেয় জীবন। বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি ৮৬ লাখ মানুষ কার্ডিওভাসকুলার রোগে মারা যায়। বিশ্বজুড়ে ৫২ কোটি রোগী আছে এই রোগের। প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী অসংক্রামক রোগে ৩ কোটির বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে চর্বির আধিক্য, সিগারেট ও তামাকজাতীয় দ্রব্য, স্থূলতা, কায়িক পরিশ্রমহীনতা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসসহ বিভিন্ন কারণে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ে। এ রোগে আক্রান্তদের বেশির ভাগই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত।
একবার হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হলে প্রায় শতকরা ৪০ ভাগ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। কিন্তু হৃদ্রোগে আক্রান্ত রোগীকে সময়মতো হাসপাতালে নিতে পারলে আধুনিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে সুস্থ করা সম্ভব। তবে পূর্বে হৃদ্রোগ শনাক্ত করা না গেলে অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা দেওয়ার আগে রোগীর মৃত্যু ঘটে। তাই প্রতিরোধটাই সবচেয়ে জরুরি।
এই পরিস্থিতিতে রোগের ভয়াবহতা কমাতে উন্নত চিকিৎসার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে অপেক্ষাকৃত তরুণ ও যুবকেরা হৃদ্রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।
ঝুঁকিতে আছেন বুঝবেন যেভাবে
কোনো সমস্যা বোধ করছেন না, বুকে ব্যথা করে না কখনো, অনেক পরিশ্রমও করতে পারেন। ফলে কোনো দিন হার্ট অ্যাটাক হবে না— এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। তবে ঝুঁকি কতটুকু আছে, তা জেনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে অকালমৃত্যু বা কঠিন পরিণতি এড়ানো যায়। নিজের ঝুঁকি জানতে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে আপনি আপনার ঝুঁকির মাত্রা জানতে পারেন। বেশির ভাগ উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়ে থাকে, তবে আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক বেশি।
⦁ আপনি কি ধূমপান করেন?
⦁ আপনার পরিবারে কি হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস বা অল্প বয়সে হঠাৎ মৃত্যুর ইতিহাস আছে?
⦁ আপনার কি উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে চর্বির মাত্রা বেশি?
⦁ আপনি কি কায়িক শ্রমবিহীন জীবনযাপন করেন?
⦁ আপনি কি স্থূল বা আপনার কি ওজন বেশি?
⦁ আপনার মানসিক চাপ কি প্রচণ্ড?
মনে রাখবেন, প্রশ্নগুলোর বেশির ভাগের উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়ে থাকে, তবে আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক বেশি।
হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক লক্ষণ
⦁ বেশির ভাগ সময় হার্ট অ্যাটাকে বুকের মধ্যে চাপ বোধ হয়, যা কয়েক মিনিটের বেশি সময় ধরে থাকে। ব্যথাটা মাঝেমধ্যে চলে যায় আবার ফিরে আসে। একটা অস্বস্তিকর চাপ ও ঝাঁকুনি অনুভূত হয়।
⦁ অনেক সময় বাহু, পিঠ, ঘাড়, চোয়াল অথবা পাকস্থলীতেও অস্বস্তি অনুভূত হয়।
⦁ অনেক সময় বুকে অস্বস্তির সঙ্গে সঙ্গে শ্বাস ছোট হয়ে আসে।
⦁ অন্য লক্ষণগুলোর মধ্যে ঘাম দিয়ে শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব বা হালকা মাথাব্যথা, পিঠে বা চোয়ালে ব্যথা হতে পারে।
হৃদ্রোগের কারণ
হৃদ্রোগের জন্য অনেক কারণ দায়ী। যেমন বয়স, লিঙ্গ, ধূমপান, অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ, পারিবারিক ইতিহাস, স্থূলতা, স্বল্প শারীরিক পরিশ্রম, খাবারদাবারে অসচেতনতা, উচ্চরক্তচাপ, উচ্চ লিপিড, ডায়াবেটিস ইত্যাদি। জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন, নিয়মিত হাঁটা বা শারীরিক পরিশ্রম, খাবারদাবারে একটু সচেতন হলে এবং উচ্চরক্তচাপ, উচ্চ লিপিড, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধের মাধ্যমে হৃদ্রোগের ঝুঁকি অনেকটা হ্রাস করা যেতে পারে।
কোন বয়সে হতে পারে
হৃদ্রোগ সব বয়সেই হতে পারে। তবে সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিরাই এ রোগের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকেন। সাধারণভাবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সিরাম কোলেস্টেরলের মাত্রাও বাড়ে। ৬৫ বছরের বেশি বয়সী হৃদ্রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৮২ শতাংশই হৃদ্রোগে মারা যান। আবার ৫৫ বছর বয়সের পরে স্ট্রোক করার আশঙ্কা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। বয়সের সঙ্গে ধমনির স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়, ফলে করোনারি ধমনি রোগ হয়।
কাদের হতে পারে
প্রজননে সক্ষম নারীর তুলনায় পুরুষদের হৃদ্রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। প্রজনন সময়ের পরে নারী ও পুরুষের হৃদ্রোগ হওয়ার আশঙ্কা সমান। যদি কোনো নারীর ডায়াবেটিস থাকে, তার হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পুরুষের চেয়ে বেশি। মধ্যবয়সী মানুষের ক্ষেত্রে করোনারি হৃদ্রোগে আক্রান্তের আশঙ্কা নারীদের তুলনায় পুরুষদের প্রায় ৫ গুণ বেশি। হৃদ্রোগে লিঙ্গবৈষম্যের কারণ মূলত হরমোনগত পার্থক্য।
হৃদ্রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ
বুক, পিঠ, পেট, গলা, বাম বাহুতে ব্যথা, ঘাড় বা চোয়ালে ব্যথা এবং অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে। শ্বাসকষ্ট, পাকস্থলীর ওপরের দিকে অসহনীয় ব্যথা অনুভূত হবে। মাথা হালকা লাগতে পারে।
হৃদ্রোগ প্রতিরোধে করণীয়
হৃদ্রোগ নানা রকমের হতে পারে, যেমন—জন্মগত হৃদ্রোগ, বাতজ্বরজনিত হৃদ্রোগ, উচ্চরক্তচাপজনিত হৃদ্রোগ, হৃৎপিণ্ডে স্বল্প রক্ত চলাচলজনিত হৃদ্রোগ, হৃৎপিণ্ডে মাংসের দুর্বলতাজনিত হৃদ্রোগ ইত্যাদি। হৃদ্রোগ প্রতিরোধে সতর্ক হলে অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়।
জন্মগত হৃদ্রোগ প্রতিরোধে করণীয়
গর্ভধারণের কমপক্ষে তিন মাস আগে মাকে এমএমআর ইনজেকশন দিতে হবে, গর্ভবতী মায়ের উচ্চরক্তচাপ বা ডায়াবেটিস থাকলে অবশ্যই চিকিৎসা করাতে হবে। ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে সেটা অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে। গর্ভবতী অবস্থায় যেকোনো রকম ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
অন্যান্য হৃদ্রোগ প্রতিরোধে করণীয়
স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের মাধ্যমেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব কমানো যায়। হৃৎপিণ্ডে রক্ত চলাচলজনিত কারণে হার্ট অ্যাটাকের মতো মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যা প্রতিরোধে খাবার এবং জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।
⦁ প্রতিদিন কমপক্ষে একটি নির্দিষ্ট সময় হাঁটা বা ব্যায়াম অথবা শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।
⦁ প্রচুর পরিমাণে ফলমূল, শাকসবজি, তরকারি, টকজাতীয় ফল খেতে হবে।
⦁ লবণ ও চিনি কম খেতে হবে। বেশি ক্যালরি-সমৃদ্ধ খাবার বাদ দিতে হবে।
⦁ মদ্যপান, জর্দা, তামাক, ধূমপান ইত্যাদি বন্ধ করতে হবে। ধূমপান ছাড়ার পরবর্তী ১০ বছর সময় পর্যন্ত হৃদ্রোগের ঝুঁকি থেকে যায়।
⦁ ফাস্টফুড, টিনজাত ও শুকনো খাবার খাওয়া কমাতে হবে।
⦁ অতিরিক্ত পরিমাণে চা, কফি ও কোমল পানীয় বর্জন করতে হবে। ধূমপান, অ্যালকোহল বা যেকোনো ধরনের মাদক বর্জন করতে হবে।
⦁ জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির কোনো কোনোটি হৃদ্রোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। চিকিৎসকের কাছ থেকে বিষয়টি বুঝে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেতে হবে।
⦁ শরীরে চর্বি জমতে দেওয়া যাবে না। এটা হৃদ্রোগের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
⦁ ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে প্রাণিজ চর্বি খাওয়া যাবে না। সয়াবিন, সূর্যমুখী, সরিষার তেল ইত্যাদি খাবারে ব্যবহার করতে হবে পরিমিত পরিমাণে।
⦁ সামুদ্রিক মাছ খেতে হবে। বাদাম হৃদ্রোগের জন্য উপকারী। বাদামের ভেষজ প্রোটিন, ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফ্লাভোনয়েডস, সেলিনিয়াম ও ভিটামিন-ই হৃদ্রোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
⦁ দাম্পত্য জীবনে সুখী থাকার চেষ্টা করতে হবে।
⦁ মানসিক চাপ অর্থাৎ অনিদ্রা, টেনশন, ভয়, ক্রোধ, হতাশা, রাগ, প্রতিশোধ প্রবণতা, হিংসা ইত্যাদি বর্জন করতে হবে।
⦁ উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কমপক্ষে সপ্তাহে এক দিন রক্তচাপ পরীক্ষা এবং মাসে একবার করে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে হবে।
হোমিও রেমিডি
অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরা প্রাথমিকভাবে যেসব ওষুধ নির্বাচন করে থাকেন—ক্র্যাটিগাস, অরম মেটালি কাম, এডডোনিস ভন্যালিস, অর্জুন, আর্নিকা মন্টেনা, গ্লোনয়িন, ভ্যানাডিয়ম, ল্যাকেসিস, ডিজিটালিস, বেলাডোনা, স্পাজিলিয়া, এনথেলমিয়া, ন্যাজাট্রাইপুডিয়ামস, নাক্স ভূমিকাসহ আরও অনেক ওষুধ লক্ষণের ওপর দিতে হবে। তাই ওষুধ নিজে নিজে ব্যবহার না করে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
আজ ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব হার্ট দিবস। বিশ্বজুড়ে হৃদ্রোগ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অন্যান্য দেশর মতো আমাদের দেশেও দিবসটি পালিত হয়। প্রথম বিশ্ব হার্ট দিবস পালন করা হয় ২০০০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এবং ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের শেষ রবিবার বিশ্ব হার্ট দিবস হিসেবে পালন করা হতো। পরবর্তীকালে ২০১১ সাল থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর দিনটি বিশ্ব হার্ট দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়।
বর্তমানে হৃদ্রোগ বিশ্বের এক নম্বর ঘাতক ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত। কোনো রকম পূর্বাভাস ছাড়াই হৃদ্রোগ যেকোনো সময় কেড়ে নেয় জীবন। বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি ৮৬ লাখ মানুষ কার্ডিওভাসকুলার রোগে মারা যায়। বিশ্বজুড়ে ৫২ কোটি রোগী আছে এই রোগের। প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী অসংক্রামক রোগে ৩ কোটির বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে চর্বির আধিক্য, সিগারেট ও তামাকজাতীয় দ্রব্য, স্থূলতা, কায়িক পরিশ্রমহীনতা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসসহ বিভিন্ন কারণে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ে। এ রোগে আক্রান্তদের বেশির ভাগই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত।
একবার হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হলে প্রায় শতকরা ৪০ ভাগ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। কিন্তু হৃদ্রোগে আক্রান্ত রোগীকে সময়মতো হাসপাতালে নিতে পারলে আধুনিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে সুস্থ করা সম্ভব। তবে পূর্বে হৃদ্রোগ শনাক্ত করা না গেলে অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা দেওয়ার আগে রোগীর মৃত্যু ঘটে। তাই প্রতিরোধটাই সবচেয়ে জরুরি।
এই পরিস্থিতিতে রোগের ভয়াবহতা কমাতে উন্নত চিকিৎসার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে অপেক্ষাকৃত তরুণ ও যুবকেরা হৃদ্রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।
ঝুঁকিতে আছেন বুঝবেন যেভাবে
কোনো সমস্যা বোধ করছেন না, বুকে ব্যথা করে না কখনো, অনেক পরিশ্রমও করতে পারেন। ফলে কোনো দিন হার্ট অ্যাটাক হবে না— এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। তবে ঝুঁকি কতটুকু আছে, তা জেনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে অকালমৃত্যু বা কঠিন পরিণতি এড়ানো যায়। নিজের ঝুঁকি জানতে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে আপনি আপনার ঝুঁকির মাত্রা জানতে পারেন। বেশির ভাগ উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়ে থাকে, তবে আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক বেশি।
⦁ আপনি কি ধূমপান করেন?
⦁ আপনার পরিবারে কি হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস বা অল্প বয়সে হঠাৎ মৃত্যুর ইতিহাস আছে?
⦁ আপনার কি উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে চর্বির মাত্রা বেশি?
⦁ আপনি কি কায়িক শ্রমবিহীন জীবনযাপন করেন?
⦁ আপনি কি স্থূল বা আপনার কি ওজন বেশি?
⦁ আপনার মানসিক চাপ কি প্রচণ্ড?
মনে রাখবেন, প্রশ্নগুলোর বেশির ভাগের উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়ে থাকে, তবে আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক বেশি।
হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক লক্ষণ
⦁ বেশির ভাগ সময় হার্ট অ্যাটাকে বুকের মধ্যে চাপ বোধ হয়, যা কয়েক মিনিটের বেশি সময় ধরে থাকে। ব্যথাটা মাঝেমধ্যে চলে যায় আবার ফিরে আসে। একটা অস্বস্তিকর চাপ ও ঝাঁকুনি অনুভূত হয়।
⦁ অনেক সময় বাহু, পিঠ, ঘাড়, চোয়াল অথবা পাকস্থলীতেও অস্বস্তি অনুভূত হয়।
⦁ অনেক সময় বুকে অস্বস্তির সঙ্গে সঙ্গে শ্বাস ছোট হয়ে আসে।
⦁ অন্য লক্ষণগুলোর মধ্যে ঘাম দিয়ে শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব বা হালকা মাথাব্যথা, পিঠে বা চোয়ালে ব্যথা হতে পারে।
হৃদ্রোগের কারণ
হৃদ্রোগের জন্য অনেক কারণ দায়ী। যেমন বয়স, লিঙ্গ, ধূমপান, অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ, পারিবারিক ইতিহাস, স্থূলতা, স্বল্প শারীরিক পরিশ্রম, খাবারদাবারে অসচেতনতা, উচ্চরক্তচাপ, উচ্চ লিপিড, ডায়াবেটিস ইত্যাদি। জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন, নিয়মিত হাঁটা বা শারীরিক পরিশ্রম, খাবারদাবারে একটু সচেতন হলে এবং উচ্চরক্তচাপ, উচ্চ লিপিড, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধের মাধ্যমে হৃদ্রোগের ঝুঁকি অনেকটা হ্রাস করা যেতে পারে।
কোন বয়সে হতে পারে
হৃদ্রোগ সব বয়সেই হতে পারে। তবে সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিরাই এ রোগের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকেন। সাধারণভাবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সিরাম কোলেস্টেরলের মাত্রাও বাড়ে। ৬৫ বছরের বেশি বয়সী হৃদ্রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৮২ শতাংশই হৃদ্রোগে মারা যান। আবার ৫৫ বছর বয়সের পরে স্ট্রোক করার আশঙ্কা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। বয়সের সঙ্গে ধমনির স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়, ফলে করোনারি ধমনি রোগ হয়।
কাদের হতে পারে
প্রজননে সক্ষম নারীর তুলনায় পুরুষদের হৃদ্রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। প্রজনন সময়ের পরে নারী ও পুরুষের হৃদ্রোগ হওয়ার আশঙ্কা সমান। যদি কোনো নারীর ডায়াবেটিস থাকে, তার হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পুরুষের চেয়ে বেশি। মধ্যবয়সী মানুষের ক্ষেত্রে করোনারি হৃদ্রোগে আক্রান্তের আশঙ্কা নারীদের তুলনায় পুরুষদের প্রায় ৫ গুণ বেশি। হৃদ্রোগে লিঙ্গবৈষম্যের কারণ মূলত হরমোনগত পার্থক্য।
হৃদ্রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ
বুক, পিঠ, পেট, গলা, বাম বাহুতে ব্যথা, ঘাড় বা চোয়ালে ব্যথা এবং অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে। শ্বাসকষ্ট, পাকস্থলীর ওপরের দিকে অসহনীয় ব্যথা অনুভূত হবে। মাথা হালকা লাগতে পারে।
হৃদ্রোগ প্রতিরোধে করণীয়
হৃদ্রোগ নানা রকমের হতে পারে, যেমন—জন্মগত হৃদ্রোগ, বাতজ্বরজনিত হৃদ্রোগ, উচ্চরক্তচাপজনিত হৃদ্রোগ, হৃৎপিণ্ডে স্বল্প রক্ত চলাচলজনিত হৃদ্রোগ, হৃৎপিণ্ডে মাংসের দুর্বলতাজনিত হৃদ্রোগ ইত্যাদি। হৃদ্রোগ প্রতিরোধে সতর্ক হলে অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়।
জন্মগত হৃদ্রোগ প্রতিরোধে করণীয়
গর্ভধারণের কমপক্ষে তিন মাস আগে মাকে এমএমআর ইনজেকশন দিতে হবে, গর্ভবতী মায়ের উচ্চরক্তচাপ বা ডায়াবেটিস থাকলে অবশ্যই চিকিৎসা করাতে হবে। ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে সেটা অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে। গর্ভবতী অবস্থায় যেকোনো রকম ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
অন্যান্য হৃদ্রোগ প্রতিরোধে করণীয়
স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের মাধ্যমেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব কমানো যায়। হৃৎপিণ্ডে রক্ত চলাচলজনিত কারণে হার্ট অ্যাটাকের মতো মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যা প্রতিরোধে খাবার এবং জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।
⦁ প্রতিদিন কমপক্ষে একটি নির্দিষ্ট সময় হাঁটা বা ব্যায়াম অথবা শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।
⦁ প্রচুর পরিমাণে ফলমূল, শাকসবজি, তরকারি, টকজাতীয় ফল খেতে হবে।
⦁ লবণ ও চিনি কম খেতে হবে। বেশি ক্যালরি-সমৃদ্ধ খাবার বাদ দিতে হবে।
⦁ মদ্যপান, জর্দা, তামাক, ধূমপান ইত্যাদি বন্ধ করতে হবে। ধূমপান ছাড়ার পরবর্তী ১০ বছর সময় পর্যন্ত হৃদ্রোগের ঝুঁকি থেকে যায়।
⦁ ফাস্টফুড, টিনজাত ও শুকনো খাবার খাওয়া কমাতে হবে।
⦁ অতিরিক্ত পরিমাণে চা, কফি ও কোমল পানীয় বর্জন করতে হবে। ধূমপান, অ্যালকোহল বা যেকোনো ধরনের মাদক বর্জন করতে হবে।
⦁ জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির কোনো কোনোটি হৃদ্রোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। চিকিৎসকের কাছ থেকে বিষয়টি বুঝে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেতে হবে।
⦁ শরীরে চর্বি জমতে দেওয়া যাবে না। এটা হৃদ্রোগের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
⦁ ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে প্রাণিজ চর্বি খাওয়া যাবে না। সয়াবিন, সূর্যমুখী, সরিষার তেল ইত্যাদি খাবারে ব্যবহার করতে হবে পরিমিত পরিমাণে।
⦁ সামুদ্রিক মাছ খেতে হবে। বাদাম হৃদ্রোগের জন্য উপকারী। বাদামের ভেষজ প্রোটিন, ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফ্লাভোনয়েডস, সেলিনিয়াম ও ভিটামিন-ই হৃদ্রোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
⦁ দাম্পত্য জীবনে সুখী থাকার চেষ্টা করতে হবে।
⦁ মানসিক চাপ অর্থাৎ অনিদ্রা, টেনশন, ভয়, ক্রোধ, হতাশা, রাগ, প্রতিশোধ প্রবণতা, হিংসা ইত্যাদি বর্জন করতে হবে।
⦁ উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কমপক্ষে সপ্তাহে এক দিন রক্তচাপ পরীক্ষা এবং মাসে একবার করে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে হবে।
হোমিও রেমিডি
অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরা প্রাথমিকভাবে যেসব ওষুধ নির্বাচন করে থাকেন—ক্র্যাটিগাস, অরম মেটালি কাম, এডডোনিস ভন্যালিস, অর্জুন, আর্নিকা মন্টেনা, গ্লোনয়িন, ভ্যানাডিয়ম, ল্যাকেসিস, ডিজিটালিস, বেলাডোনা, স্পাজিলিয়া, এনথেলমিয়া, ন্যাজাট্রাইপুডিয়ামস, নাক্স ভূমিকাসহ আরও অনেক ওষুধ লক্ষণের ওপর দিতে হবে। তাই ওষুধ নিজে নিজে ব্যবহার না করে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে ওই রোগী খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে সচেতন ছিলেন না। তাঁর নিয়মিত খাদ্যতালিকায় প্রধানত ছিল প্রক্রিয়াজাত খাবার। সবজি বা ফলে তেমন খেতেন না। কখনো কখনো সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণ করতেন না। তিনি গ্যাস্ট্রিক বাইপাস সার্জারির পর নির্ধারিত ভিটামিন এবং খনিজের সাপ্লিমেন্টও গ্রহণ করা বন্ধ করে দিয়ে
১ দিন আগেদেশের প্রায় ৫০ লাখ শিশু বিভিন্ন পর্যায়ের কিডনি রোগে ভুগছে। এসব রোগীর মধ্যে আড়াই লাখ দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে ভুগছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগের আগত শিশু রোগীদের প্রায় ৫ শতাংশ কিডনির সমস্যা নিয়ে আসে। শিশুর কিডনি বিকল রোগে পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা ব
৩ দিন আগেরক্তচাপ কমাতে দৈনিক একটি বিশেষ ‘সুপারফুড’–এর ডোজ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। প্রতিদিন ২৫০ মিলি বিটরুট জুস রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে বলে দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা।
৩ দিন আগেনারী, গর্ভপাত, স্বাস্থ্য, পরিসংখ্যান, কন্যাশিশু, ভ্রূণ, পরিসংখ্যা ব্যুরো
৪ দিন আগে