আদর-যত্নের শৈশব প্রাপ্তবয়সে হৃৎপিণ্ডের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে: গবেষণা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০: ১৮
Thumbnail image

শৈশবে প্রতিকূল পারিবারিক অভিজ্ঞতার কারণে প্রাপ্তবয়সে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়তে পারে বলে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে। স্থিতিশীল ও যত্নশীল পারিবারিক সম্পর্কের মাঝে বেড়ে ওঠার সঙ্গে হৃৎপিণ্ডের উন্নত স্বাস্থ্যের সম্পর্ক রয়েছে।

২৩ জানুয়ারি আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাময়িকী ‘সার্কুলেশন: কার্ডিওভাসকুলার কোয়ালিটি অ্যান্ড আউটকামস’-এ প্রকাশিত নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণা অনুসারে, প্রাপ্তবয়সে নিম্ন আয় হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের ওপর শৈশবের প্রতিকূল অভিজ্ঞতার সঙ্গে বাড়তি প্রভাব হিসেবে যুক্ত হতে পারে।

নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি গ্রসম্যান স্কুল অব মেডিসিনের ইনস্টিটিউট ফর এক্সিলেন্স ইন হেলথ ইক্যুইটির ফ্যাকাল্টি এবং শিশুরোগবিদ্যা ও জনসংখ্যা স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রবিন অরটিজ গবেষণা প্রতিবেদনটির প্রধান লেখক। তিনি বলেন, ‘বলা হয়, শৈশবের স্বাস্থ্যই পরবর্তী জীবনের স্বাস্থ্যের ভিত্তি গড়ে তোলে। গবেষণায় আমরা পেয়েছি, শিশুরা বড়দের সঙ্গে কীভাবে মেশে, সেটিও তাদের জীবনে প্রভাব ফেলে।’

তিনি বলেন, ‘প্রাপ্তবয়স্করা যখন শিশুদের সঙ্গে এমন সম্পর্ক তৈরি করেন, যেখানে নিরাপদ, স্থিতিশীল ও যত্নশীল সম্পর্ককে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তখন শিশুর মধ্যে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরি হয়; যা তার পরবর্তী জীবনেও সুফল বয়ে আনে। স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক পেশাজীবীদের উচিত, যেকোনো বয়সীর হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার সময় তার পরিবারের অবস্থাও মাথায় রাখা।’

এ গবেষণাতেই প্রথমবারের মতো বাল্যকালে পারিবারিক পরিবেশ এবং প্রাপ্তবয়সে উপনীত হওয়া পর্যন্ত জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়টি চিহ্নিত করা হয়েছে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ২০ বছর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেছেন গবেষকেরা।

এ গবেষণার জন্য ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গদের হৃদ্‌রোগ ও ঝুঁকির বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। এ ক্ষেত্রে গবেষকেরা শৈশবের প্রতিকূল অভিজ্ঞতা ও লালন-পালনকারীর (মা বা ধাত্রী) সঙ্গে সম্পর্কের সঙ্গে প্রাপ্তবয়সের প্রাথমিক ভাগ ও শেষভাগে হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ণয়ের ওপর জোর দিয়েছেন। এ সম্পর্ক প্রাপ্তবয়সে উপার্জন সক্ষমতার সঙ্গে পরিবর্তিত হয় কি না, তা-ও খতিয়ে দেখেছেন তাঁরা।

হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যগত উন্নতির জন্য আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের ‘লাইফস এসেনশিয়াল ৮’ শীর্ষক রূপরেখায় আটটি আচরণ নির্ধারণ করা হয়েছে। সূচকগুলো হলো, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ, রক্তচাপ ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ, ভারসাম্যপূর্ণ স্বাস্থ্যকর খাবার, ওজন ও কায়িক শ্রম, ধূমপান পরিহার এবং যথেষ্ট ঘুম।

এ গবেষণাতেও বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। গবেষণায় তিনটি পর্যায়ে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়: গবেষণার শুরুতে, পরবর্তী ৭ বছর এবং ২০ বছর।

শৈশবের প্রতিকূল অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য ১৫ বছর বয়সীদের ঝুঁকিপূর্ণ পারিবারিক পরিবেশবিষয়ক প্রশ্ন করা হয়। শৈশবের অভিজ্ঞতা বলতে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন এবং বড়দের আদর-যত্নবিষয়ক তথ্য।

২০ বছরের পর্যবেক্ষণে গবেষকেরা লক্ষ করেন, ঝুঁকিপূর্ণ পারিবারিক পরিবেশের এক ইউনিট বৃদ্ধিতে হৃৎপিণ্ডের সুস্বাস্থ্য অর্জনের সম্ভাবনা ৪ শতাংশ কমে যায়। কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার হলে হৃৎপিণ্ডের সুস্বাস্থ্য অর্জনের সম্ভাবনা প্রায় ১৩ শতাংশ কমে যায়।

লালন-পালনকারীর সঙ্গে শিশুর ইতিবাচক ও উষ্ণ সম্পর্কের ফলে হৃৎপিণ্ডের সুস্বাস্থ্য অর্জনের সম্ভাবনা ১২ শতাংশ বেড়ে যায়।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যাদের বার্ষিক আয় ৩৫ হাজার ডলারের বেশি, তাদের ক্ষেত্রে শৈশবের অভিজ্ঞতা ও পূর্ণবয়স্ক হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের মধ্যকার সম্পর্ক অপরিবর্তিত থাকে। বার্ষিক আয় ৩৫ হাজার ডলারের চেয়ে কম হলে তা শৈশবের প্রতিকূলতার প্রভাব আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

গবেষকেরা আশা করছিলেন, লালন-পালনকারীর সঙ্গে সম্পর্কের উষ্ণতা বেশি থাকলে প্রাপ্তবয়সে হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের ওপর শৈশবে নির্যাতনের প্রভাব লাঘব হবে।

অরটিজ বলেন, ‘কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, লালন-পালনকারীর সঙ্গে সম্পর্কে উষ্ণতা বেশি থাকা সত্ত্বেও শৈশবে নির্যাতনের শিকার হওয়া মানুষ হৃৎপিণ্ডের সুস্বাস্থ্য অর্জন করতে পারে না।’

হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের ওপর প্রাপ্তবয়সে উপার্জনের প্রভাব দেখেও হতভম্ব হয়েছেন গবেষকেরা।

অরটিজ বলেন, ‘প্রাপ্তবয়সে নিম্ন আয়ের মানুষেরা জীবনের প্রথম ভাগে ও পরবর্তী ভাগে পারিবারিক সম্পর্ক ছাড়াও অন্যান্য প্রতিকূলতার মুখোমুখি হন। তাঁরা আর্থসামাজিক দুরবস্থা বা অন্যান্য প্রতিকূলতার মধ্যে পড়েন। শৈশবে স্বাস্থ্যকর ও স্থিতিশীল সম্পর্ক এবং আজীবন অর্থনৈতিক ন্যায্যতা থাকলে তা হৃৎপিণ্ডের সুস্বাস্থ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত