অনলাইন ডেস্ক
প্রথমবারের মতো মানুষের শ্বাসনালিতে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা বা মাইক্রোপ্লাস্টিকের অবস্থান ও গতিবিধি শনাক্তে বিশেষ মডেল তৈরি করেছেন একদল গবেষক। ওপরের শ্বাসনালিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিবহন এবং জমা হওয়ার প্রক্রিয়া বিশ্লেষণে একটি কম্পিউটেশনাল ফ্লুইড ডায়নামিকস মডেল তৈরি করেছেন তাঁরা। দলটি দ্রুত ও ধীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যে বিভিন্ন আকার ও আকৃতির মাইক্রোপ্লাস্টিকের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাঁরা দেখেছেন, মাইক্রোপ্লাস্টিক কণাগুলো অনুনাসিক গহ্বর এবং অরোফ্যারিঙ্কস বা তালুর নরম অংশে জমা হওয়ার প্রবণতা দেখায়। এটি দীর্ঘ মেয়াদে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি এমনকি ক্যানসারেরও কারণ হতে পারে।
সম্প্রতি আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব ফিজিকস পাবলিকেশনের ফিজিকস অব ফ্লুইডস সাময়িকীতে এ-সংক্রান্ত একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা দেখিয়েছেন, মানুষের শ্বাসনালিতেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। এটি দীর্ঘ মেয়াদে শ্বাসতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
খাবারে এবং মানুষের রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়ার তথ্য বেশ কিছুদিন আগেই জানা গেছে। এ নিয়ে একাধিক গবেষণা হয়েছে। তবে শ্বাসনালিতে বা ফুসফুসের উপরিভাগের বায়ু চলাচলের অংশে মাইক্রোপ্লাস্টিক কীভাবে আটকে যায় এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে সেটি নিয়ে এর আগে কোনো গবেষণা হয়নি।
মাইক্রোপ্লাস্টিকে হলো প্লাস্টিকের অতিক্ষুদ্র কণা যা সূক্ষ্ম ধূলিকণার মতো বাতাসে মিশে থাকে। মূলত শিল্পকারখানা, বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য এবং শিল্পবর্জ্য ভেঙে মাইক্রোপ্লাস্টিক অবমুক্ত হয়, যা বাতাসে মিশে যায়। এটিই শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের ফুসফুসে প্রবেশ করছে, যার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব শ্বাসতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে—গবেষণায় এটিই দেখিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষণাপত্রটি ফিজিকস অর্গ, এআইপি নিউজ, মাইক্রোসফট নিউজ এবং সায়েন্স ডেইলির মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হয়েছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ড. সাইদুল ইসলামের নেতৃত্বে এই গবেষক দলের অন্য বিজ্ঞানীরা হলেন ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির মো. মিজানুর রহমান, কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির এমিলি সৌরেট এবং ইউয়ান তং গু, সিডনি ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির পুচানি লারপ্রুয়েরুডি, ইরানের উর্মিয়া ইউনিভার্সিটির আকবর আরসালানলু, ইসলামিক আজাদ ইউনিভার্সিটির হামিদরেজা মুর্তজাভি বেনি এবং দ্য ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার আরিফুল ইসলাম।
ড. সাইদুল ইসলাম বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনির মেকানিক্যাল অ্যান্ড মেকাট্রনিক্সের প্রভাষক। তাঁর নেতৃত্বেই গবেষণাটি পরিচালিত হয়। মানুষের শ্বাসনালিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিবহন এবং জমা হওয়ার ঘটনা বিশ্লেষণে একটি কম্পিউটেশনাল ফ্লুইড ডাইনামিক মডেল তৈরি করেছেন।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকৃতিতে যে পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে, সে হিসাবে মানুষ প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৬ দশমিক ২ বিট (কণা) মাইক্রোপ্লাস্টিক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করে। সে হিসাবে এক সপ্তাহে মানুষ যে পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক গ্রহণ করে, তা একটি ক্রেডিট কার্ড তৈরিতে প্রয়োজনীয় প্লাস্টিকের সমান।
এখন পর্যন্ত বেশ কিছু গবেষণায় বাতাসে মাইক্রোপ্লাস্টিকে বিচরণ ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিশ্লেষণ এসেছে। তবে মানুষের শ্বাসনালিতে এই প্লাস্টিক কণার স্থানান্তর প্রক্রিয়া এবং এর ক্ষতিকর দিক নিয়ে এর আগে কোনো গবেষণা হয়নি। মাইক্রোপ্লাস্টিক কতটা গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে এবং কীভাবে শ্বাসযন্ত্রে কী পরিমাণ ক্ষতি করে তা তা অনুসন্ধানই ছিল গবেষণাটির মূল বিষয়।
মানুষের শরীরে কীভাবে দূষিত কণা পরিবাহিত হয় এবং এর প্রভাব কী তা নিয়ে ড. সাইদুল ইসলাম গবেষণা শুরু করেন ২০১৪ সালে। এটি মূলত তাঁর পিএইচডি গবেষণার বিষয় ছিল। ২০২২ সালে মাইক্রোপ্লাস্টিক নিয়ে গবেষণা শুরু করেন বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে ই-মেইলে যোগাযোগ করা হলে ড. সাইদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লাখ লাখ টন মাইক্রোপ্লাস্টিক পানি, বাতাস ও মাটিতে মিশে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী মাইক্রোপ্লাস্টিক উৎপাদন বাড়ছে এবং বাতাসে এর ঘনত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে। প্রথমবারের মতো ২০২২ সালে গবেষণায় মানুষের শ্বাসনালির গভীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। এটি শ্বাসযন্ত্রের গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।’
গবেষক দলটি বিভিন্ন আকৃতির এবং আকারের (১.৬, ২.৫৬ এবং ৫.৫৬ মাইক্রোন বা মাইক্রোমিটার) মাইক্রোপ্লাস্টিক ধীর এবং দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে কীভাবে ফুসফুসে পরিবাহিত হয় তার গতিবিধি লক্ষ্য করেছেন।
উল্লেখ্য, ১ মাইক্রোমিটার হলো ১ মিটারের ১০ লাখ ভাগের ১ ভাগ।
মাইক্রোপ্লাস্টিক মানুষের শরীরে কীভাবে ক্ষতি করে—জানতে চাইলে ড. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘মাইক্রোপ্লাস্টিক আমাদের শরীরে নানাভাবে ক্ষতি করতে পারে। এটা নির্ভর করবে আমরা কীভাবে এটা আমাদের শরীরে গ্রহণ করছি। নিশ্বাসের মাধ্যমে যখন মাইক্রোপ্লাস্টিক আমাদের শরীরে প্রবেশ করে তখন এটি ফুসফুসের টিস্যুগুলোতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। মাইক্রোপ্লাস্টিকের ক্ষতিকর রাসায়নিক ফুসফুসের টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদে শরীরে থাকার কারণে এটি অ্যাজমা, সিওপিডি (নিয়মিত শ্বাসকষ্ট), ফুসফুসের ক্যানসারসহ শ্বাসতন্ত্রে নানা রোগ সৃষ্টি করতে পারে।’
গবেষক ড. সাইদুল ইসলামের বক্তব্য অনুযায়ী, শ্বাস নেওয়া, খাবার এবং পানি পানের মাধ্যমে মানুষের শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। এই কণাগুলো এমনকি ত্বকের শোষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেও মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে। মাইক্রোপ্লাস্টিক বিভিন্ন ধরনের সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। এগুলো ক্ষতিকারক রাসায়নিক নির্গত করতে পারে, প্যাথোজেনের (রোগ সৃষ্টিকারী) বাহক হিসেবে কাজ করতে পারে এবং টিস্যুতে প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ পীড়ন সৃষ্টি করতে পারে। এগুলো মানবদেহে প্রবেশ করে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য প্রভাব, যেমন—প্রজনন সমস্যা, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত, শ্বাসযন্ত্রের রোগ এবং শরীরে বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতির দিকে ধাবিত করতে পারে।
গবেষণার প্রক্রিয়া সম্পর্কে এই গবেষক জানান, বর্তমান মডেলে তাঁরা সিটি স্ক্যান থেকে রেখাচিত্র তৈরি করে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবাহ বিশ্লেষণ করেছেন। এখন একটি পরীক্ষামূলক মডেল তৈরি করতে চান যা দিয়ে পুরো শ্বাসতন্ত্রে মাইক্রোপ্লাস্টিকে প্রভাব বুঝতে কাজটা করতে পারবেন।
ড. সাইদুল ইসলাম জানান, কম্পিউটেশনাল ফ্লুইড ডায়নামিকস মডেল ব্যবহার করে তাঁরা দেখেছেন, বড় আকৃতির মাইক্রোপ্লাস্টিক কণাগুলো অধিকাংশ নাকের ভেতরে থাকা লোমে আটকে যায়। ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক কণাগুলো আকার এবং আকৃতির ওপর ভিত্তি করে ফুসফুসের নিচের অংশে প্রবেশ করে। মাইক্রোপ্লাস্টিক কণাগুলো ফুসফুসের ভেতরে বাতাসের গতি ও নানা শারীরবৃত্তিও কারণে ফুসফুসের আঠালো মিউকাস অংশে জমা হয়।
কিছু মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা প্রশ্বাসের মাধ্যমে বের হয়ে আসতে পারে। তবে ফুসফুসের আঠালো মিউকাস অংশে জমা হওয়া মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে এবং অবশেষে ক্যানসারসহ ফুসফুসের নানা ধরনের রোগ ঘটাতে পারে। অতিক্ষুদ্র মাইক্রোপ্লাস্টিক কণাগুলো ফুসফুসের আলভেওলি (বায়ু কুঠুরি) থেকে অন্যান্য স্তর অতিক্রম করে রক্তেও প্রবেশ করতে পারে।
শ্বাসনালিতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি এবং সম্ভাব্য স্বাস্থ্যগত প্রভাব সম্পর্কে বৃহত্তর সচেতনতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে গবেষক দল। ভবিষ্যতে এ গবেষক দল আরও বড় পরিসরে পুরো শ্বাসনালির মডেলে মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিবহন বিশ্লেষণ করার পরিকল্পনা করেছে। এই গবেষণায় বাতাসের আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রার মতো পরিবেশগত বিষয়গুলোও বিবেচনায় নেওয়া হবে।
ড. সাইদুল ইসলামের জন্ম সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ থানার নলতা ইউনিয়নের সেহারা গ্রামে। তিনি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তঘেঁষা খানজিয়া হাইস্কুলের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি, নলতা আহছানিয়া মিশন রেসিডেন্সিয়াল কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ডিসিপ্লিনের পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি স্নাতক ও ২০১২ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। ড. সাইদুল ২০১৪ সালে পিএইচডি করতে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমান।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রুবায়েত হোসেন।
প্রথমবারের মতো মানুষের শ্বাসনালিতে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা বা মাইক্রোপ্লাস্টিকের অবস্থান ও গতিবিধি শনাক্তে বিশেষ মডেল তৈরি করেছেন একদল গবেষক। ওপরের শ্বাসনালিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিবহন এবং জমা হওয়ার প্রক্রিয়া বিশ্লেষণে একটি কম্পিউটেশনাল ফ্লুইড ডায়নামিকস মডেল তৈরি করেছেন তাঁরা। দলটি দ্রুত ও ধীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যে বিভিন্ন আকার ও আকৃতির মাইক্রোপ্লাস্টিকের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাঁরা দেখেছেন, মাইক্রোপ্লাস্টিক কণাগুলো অনুনাসিক গহ্বর এবং অরোফ্যারিঙ্কস বা তালুর নরম অংশে জমা হওয়ার প্রবণতা দেখায়। এটি দীর্ঘ মেয়াদে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি এমনকি ক্যানসারেরও কারণ হতে পারে।
সম্প্রতি আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব ফিজিকস পাবলিকেশনের ফিজিকস অব ফ্লুইডস সাময়িকীতে এ-সংক্রান্ত একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা দেখিয়েছেন, মানুষের শ্বাসনালিতেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। এটি দীর্ঘ মেয়াদে শ্বাসতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
খাবারে এবং মানুষের রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়ার তথ্য বেশ কিছুদিন আগেই জানা গেছে। এ নিয়ে একাধিক গবেষণা হয়েছে। তবে শ্বাসনালিতে বা ফুসফুসের উপরিভাগের বায়ু চলাচলের অংশে মাইক্রোপ্লাস্টিক কীভাবে আটকে যায় এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে সেটি নিয়ে এর আগে কোনো গবেষণা হয়নি।
মাইক্রোপ্লাস্টিকে হলো প্লাস্টিকের অতিক্ষুদ্র কণা যা সূক্ষ্ম ধূলিকণার মতো বাতাসে মিশে থাকে। মূলত শিল্পকারখানা, বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য এবং শিল্পবর্জ্য ভেঙে মাইক্রোপ্লাস্টিক অবমুক্ত হয়, যা বাতাসে মিশে যায়। এটিই শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের ফুসফুসে প্রবেশ করছে, যার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব শ্বাসতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে—গবেষণায় এটিই দেখিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষণাপত্রটি ফিজিকস অর্গ, এআইপি নিউজ, মাইক্রোসফট নিউজ এবং সায়েন্স ডেইলির মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হয়েছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ড. সাইদুল ইসলামের নেতৃত্বে এই গবেষক দলের অন্য বিজ্ঞানীরা হলেন ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির মো. মিজানুর রহমান, কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির এমিলি সৌরেট এবং ইউয়ান তং গু, সিডনি ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির পুচানি লারপ্রুয়েরুডি, ইরানের উর্মিয়া ইউনিভার্সিটির আকবর আরসালানলু, ইসলামিক আজাদ ইউনিভার্সিটির হামিদরেজা মুর্তজাভি বেনি এবং দ্য ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার আরিফুল ইসলাম।
ড. সাইদুল ইসলাম বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনির মেকানিক্যাল অ্যান্ড মেকাট্রনিক্সের প্রভাষক। তাঁর নেতৃত্বেই গবেষণাটি পরিচালিত হয়। মানুষের শ্বাসনালিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিবহন এবং জমা হওয়ার ঘটনা বিশ্লেষণে একটি কম্পিউটেশনাল ফ্লুইড ডাইনামিক মডেল তৈরি করেছেন।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকৃতিতে যে পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে, সে হিসাবে মানুষ প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৬ দশমিক ২ বিট (কণা) মাইক্রোপ্লাস্টিক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করে। সে হিসাবে এক সপ্তাহে মানুষ যে পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক গ্রহণ করে, তা একটি ক্রেডিট কার্ড তৈরিতে প্রয়োজনীয় প্লাস্টিকের সমান।
এখন পর্যন্ত বেশ কিছু গবেষণায় বাতাসে মাইক্রোপ্লাস্টিকে বিচরণ ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিশ্লেষণ এসেছে। তবে মানুষের শ্বাসনালিতে এই প্লাস্টিক কণার স্থানান্তর প্রক্রিয়া এবং এর ক্ষতিকর দিক নিয়ে এর আগে কোনো গবেষণা হয়নি। মাইক্রোপ্লাস্টিক কতটা গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে এবং কীভাবে শ্বাসযন্ত্রে কী পরিমাণ ক্ষতি করে তা তা অনুসন্ধানই ছিল গবেষণাটির মূল বিষয়।
মানুষের শরীরে কীভাবে দূষিত কণা পরিবাহিত হয় এবং এর প্রভাব কী তা নিয়ে ড. সাইদুল ইসলাম গবেষণা শুরু করেন ২০১৪ সালে। এটি মূলত তাঁর পিএইচডি গবেষণার বিষয় ছিল। ২০২২ সালে মাইক্রোপ্লাস্টিক নিয়ে গবেষণা শুরু করেন বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে ই-মেইলে যোগাযোগ করা হলে ড. সাইদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লাখ লাখ টন মাইক্রোপ্লাস্টিক পানি, বাতাস ও মাটিতে মিশে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী মাইক্রোপ্লাস্টিক উৎপাদন বাড়ছে এবং বাতাসে এর ঘনত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে। প্রথমবারের মতো ২০২২ সালে গবেষণায় মানুষের শ্বাসনালির গভীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। এটি শ্বাসযন্ত্রের গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।’
গবেষক দলটি বিভিন্ন আকৃতির এবং আকারের (১.৬, ২.৫৬ এবং ৫.৫৬ মাইক্রোন বা মাইক্রোমিটার) মাইক্রোপ্লাস্টিক ধীর এবং দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে কীভাবে ফুসফুসে পরিবাহিত হয় তার গতিবিধি লক্ষ্য করেছেন।
উল্লেখ্য, ১ মাইক্রোমিটার হলো ১ মিটারের ১০ লাখ ভাগের ১ ভাগ।
মাইক্রোপ্লাস্টিক মানুষের শরীরে কীভাবে ক্ষতি করে—জানতে চাইলে ড. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘মাইক্রোপ্লাস্টিক আমাদের শরীরে নানাভাবে ক্ষতি করতে পারে। এটা নির্ভর করবে আমরা কীভাবে এটা আমাদের শরীরে গ্রহণ করছি। নিশ্বাসের মাধ্যমে যখন মাইক্রোপ্লাস্টিক আমাদের শরীরে প্রবেশ করে তখন এটি ফুসফুসের টিস্যুগুলোতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। মাইক্রোপ্লাস্টিকের ক্ষতিকর রাসায়নিক ফুসফুসের টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদে শরীরে থাকার কারণে এটি অ্যাজমা, সিওপিডি (নিয়মিত শ্বাসকষ্ট), ফুসফুসের ক্যানসারসহ শ্বাসতন্ত্রে নানা রোগ সৃষ্টি করতে পারে।’
গবেষক ড. সাইদুল ইসলামের বক্তব্য অনুযায়ী, শ্বাস নেওয়া, খাবার এবং পানি পানের মাধ্যমে মানুষের শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। এই কণাগুলো এমনকি ত্বকের শোষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেও মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে। মাইক্রোপ্লাস্টিক বিভিন্ন ধরনের সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। এগুলো ক্ষতিকারক রাসায়নিক নির্গত করতে পারে, প্যাথোজেনের (রোগ সৃষ্টিকারী) বাহক হিসেবে কাজ করতে পারে এবং টিস্যুতে প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ পীড়ন সৃষ্টি করতে পারে। এগুলো মানবদেহে প্রবেশ করে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য প্রভাব, যেমন—প্রজনন সমস্যা, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত, শ্বাসযন্ত্রের রোগ এবং শরীরে বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতির দিকে ধাবিত করতে পারে।
গবেষণার প্রক্রিয়া সম্পর্কে এই গবেষক জানান, বর্তমান মডেলে তাঁরা সিটি স্ক্যান থেকে রেখাচিত্র তৈরি করে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবাহ বিশ্লেষণ করেছেন। এখন একটি পরীক্ষামূলক মডেল তৈরি করতে চান যা দিয়ে পুরো শ্বাসতন্ত্রে মাইক্রোপ্লাস্টিকে প্রভাব বুঝতে কাজটা করতে পারবেন।
ড. সাইদুল ইসলাম জানান, কম্পিউটেশনাল ফ্লুইড ডায়নামিকস মডেল ব্যবহার করে তাঁরা দেখেছেন, বড় আকৃতির মাইক্রোপ্লাস্টিক কণাগুলো অধিকাংশ নাকের ভেতরে থাকা লোমে আটকে যায়। ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক কণাগুলো আকার এবং আকৃতির ওপর ভিত্তি করে ফুসফুসের নিচের অংশে প্রবেশ করে। মাইক্রোপ্লাস্টিক কণাগুলো ফুসফুসের ভেতরে বাতাসের গতি ও নানা শারীরবৃত্তিও কারণে ফুসফুসের আঠালো মিউকাস অংশে জমা হয়।
কিছু মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা প্রশ্বাসের মাধ্যমে বের হয়ে আসতে পারে। তবে ফুসফুসের আঠালো মিউকাস অংশে জমা হওয়া মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে এবং অবশেষে ক্যানসারসহ ফুসফুসের নানা ধরনের রোগ ঘটাতে পারে। অতিক্ষুদ্র মাইক্রোপ্লাস্টিক কণাগুলো ফুসফুসের আলভেওলি (বায়ু কুঠুরি) থেকে অন্যান্য স্তর অতিক্রম করে রক্তেও প্রবেশ করতে পারে।
শ্বাসনালিতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি এবং সম্ভাব্য স্বাস্থ্যগত প্রভাব সম্পর্কে বৃহত্তর সচেতনতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে গবেষক দল। ভবিষ্যতে এ গবেষক দল আরও বড় পরিসরে পুরো শ্বাসনালির মডেলে মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিবহন বিশ্লেষণ করার পরিকল্পনা করেছে। এই গবেষণায় বাতাসের আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রার মতো পরিবেশগত বিষয়গুলোও বিবেচনায় নেওয়া হবে।
ড. সাইদুল ইসলামের জন্ম সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ থানার নলতা ইউনিয়নের সেহারা গ্রামে। তিনি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তঘেঁষা খানজিয়া হাইস্কুলের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি, নলতা আহছানিয়া মিশন রেসিডেন্সিয়াল কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ডিসিপ্লিনের পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি স্নাতক ও ২০১২ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। ড. সাইদুল ২০১৪ সালে পিএইচডি করতে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমান।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রুবায়েত হোসেন।
রোগে-শোকে মানুষকে প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু ওষুধ খেতে হয়। নিত্যপণ্যের এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে যেখানে সাধারণ মানুষের তিনবেলা আহারের জোগান দেওয়াই কষ্টকর, সেখানে জীবন রক্ষার জন্য দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে ওধুষ কিনতে গিয়ে জীবন আরও ওষ্ঠাগত। দেশে এখন নিম্নআয়ের ৪০ শতাংশ মানুষের মোট আয়ের ২০ শতাংশ খরচ হচ্ছে ওষুধ কিনতেই।
১৩ ঘণ্টা আগেদেশে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা না থাকায় ও ডাক্তারের ওপর আস্থা না থাকায় বিদেশে চিকিৎসা নিতে প্রতিবছর দেশের মানুষ ৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করছে। স্বাস্থ্যেসেবার উন্নয়ন না হলে এর পরিমাণ দিন দিন আরও বাড়বে।
১৪ ঘণ্টা আগেআমাদের দেশে শীত উপভোগ্য মৌসুম। কিন্তু অনেকের ঠান্ডা, কাশি, জ্বর, গলাব্যথা, অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা যাদের আছে, তাদের এই মৌসুমে কষ্ট বেড়ে যায়।
১ দিন আগেত্বক অভ্যন্তরীণ অঙ্গের সংক্রমণ এবং যেকোনো ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দেয়। তাই এর যত্নে বিশেষ মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। শীতকালে ত্বক শুষ্ক ও টানটান হলে দুশ্চিন্তা করবেন না। চুলকানি হলেও চিন্তার কোনো কারণ নেই। শীতের শুষ্ক আবহাওয়া ত্বকের প্রতিরক্ষামূলক তেল কমিয়ে দেয়।
১ দিন আগে