নিরাপদ পানি: যে ১০টি দেশের অবস্থা খুবই খারাপ 

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৩, ১৬: ১২
Thumbnail image

বিশ্বের অনেক দেশে বিশুদ্ধ পানির অভাব ভয়াবহ আকার নিয়েছে। বাড়ছে পানিবাহিত নানা রোগব্যাধি। অনেক দেশে এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে দৈনন্দিন জীবনে, বিশেষ করে শিশুদের ওপর। সেই সঙ্গে ফসলি জমিতে সেচ কিংবা গবাদিপশুর জন্য প্রয়োজনীয় পানির অভাব তো রয়েছেই। এমন অসংখ্য মানুষ রয়েছে, যাদের প্রতিদিন ৩০ মিনিটের বেশি হেঁটে গিয়ে পানি সংগ্রহ করতে হয়।

পরিসংখ্যান বলছে, সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশন-ব্যবস্থার অভাব সবচেয়ে বেশি আফ্রিকার দেশগুলোতে। নিরাপদ পানির অধিকারবঞ্চিত বিপুল জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই আবার চরম দরিদ্র। প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ বাস করে গ্রামে। আর সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে শিশুরা। নিরাপদ পানির ভয়াবহ সংকটে থাকা এমন ১০টি দেশের তালিকা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)।

নাইজার
বিশুদ্ধ পানির ভয়াবহ সংকটে থাকা দেশগুলোর মধ্যে শুরুর দিকেই পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজার। বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর মধ্যেও এটি একটি। নাইজারের বেশির ভাগ লোকই কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। কাজেই পর্যাপ্ত ও নিরাপদ পানির অভাবে চরম সংকটে দেশটি। ডব্লিউএইচও ও ইউনিসেফের হিসাবে নাইজারে ৫৪ শতাংশ নিরাপদ পানির অভাব রয়েছে। 

পাপুয়া নিউগিনি
পাপুয়া নিউগিনির গ্রামীণ জনসংখ্যার বেশির ভাগই দেশটির দ্বীপাঞ্চলে বাস করে। প্রায়ই দ্বীপবাসী বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশনের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করে। এ ছাড়া অনেকেরই প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে খুব কম ধারণা রয়েছে। পাপুয়া নিউগিনি এই অঞ্চলের সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যেও একটি। দেশটিতে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো ঘটনায় অবকাঠামো, বাড়িঘর এবং ফসলের ক্ষতি করে। এর ওপর পানির সংকট আরও ভোগান্তির কারণ। 

সুপেয় পানির অভাব সবচেয়ে বেশি আফ্রিকার দেশগুলোতেকঙ্গো
ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব দ্য কঙ্গো আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। পূর্ব ও মধ্য কাসাই অঞ্চলে সংঘাত এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ইবোলা ভাইরাসসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাবের মতো নানা সংকট দেশটিতে। কঙ্গোতে প্রায় ৬৪ শতাংশ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে। খাওয়ার পানি, রান্না এবং ধোয়ামোছার জন্য অনেকেই অনিরাপদ পানি ব্যবহারে বাধ্য হয়। অপরিষ্কার পানি ডায়রিয়া ও কলেরার মতো পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব তৈরি করে, যা শিশুদের দুর্বলতার পাশাপাশি কখনো কখনো মৃত্যুঝুঁকি তৈরি করে।

চাদ
ইউনিসেফের তথ্যমতে, চাদে প্রতি দুজন শিশুর মধ্যে মাত্র একজন বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারের সুযোগ পায়। আর স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশনের অভাবে দশজনে একজন। বিভিন্ন সংস্থা বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে কাজ করে যাচ্ছে দেশটিতে।

ইথিওপিয়া
ইথিওপিয়ায় আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনসংখ্যা রয়েছে। দেশটির ১২ কোটি মানুষের অর্ধেকই বিশুদ্ধ পানির অভাবে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে তীব্র খরার এবং বৃষ্টিপাতের তারতম্যের কারণে পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন পড়ে। বিশেষ করে গ্রামীণ জনপদের মানুষের জন্য। আর এ সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ। 

ইরিত্রিয়া
পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইরিত্রিয়া নিরাপদ পানি এবং স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। তবে পানির উন্মুক্ত উৎসগুলো প্রায়ই মানুষ এবং প্রাণীর বর্জ্য দ্বারা দূষিত হয়। বন উজাড় ও সনাতন চাষাবাদ পদ্ধতি দূষণের সমস্যাকে আরও খারাপ করে তোলে। যদিও সরকার ও বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় অনেকটা উন্নতি করছে ইরিত্রিয়া। এর পরও ৪৮ শতাংশ সুপেয় পানির অভাব রয়েছে দেশটিতে।

সোমালিয়া
নিরাপদ পানি এবং স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশনের অভাব, অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা, পানিবাহিত রোগে সোমালিয়ায় শিশু এবং মায়েদের শরীরের অবস্থা নাজুক। বিষয়গুলোকে আরও খারাপ করে তুলেছে সংঘাত, খরা ও দুর্ভিক্ষ। এসব সংকটে দেশটির প্রায় ৩০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সোমালিয়ায় ৪৪ শতাংশ বিশুদ্ধ পানির অভাব বিদ্যমান।

গৃহস্থালির প্রয়োজনে অনেক দূর থেকে পানি আনতে হয়উগান্ডা
উগান্ডায় পানি ও পয়োনিষ্কাশনের পরিষেবাগুলো দুই দশকের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং নগরায়ণের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেনি। দেশটিতে প্রায় ১৪ লাখ শরণার্থীও রয়েছে, যাদের বেশির ভাগই দক্ষিণ সুদানের। এই উদ্বাস্তুদের সহায়তায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আবদানও অপ্রতুল। শরণার্থী ও উগান্ডার স্থানীয় জনগণ উভয়ের জীবনযাত্রা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে।

অ্যাঙ্গোলা
অ্যাঙ্গোলার ২ কোটি ৮২ লাখ মানুষের প্রায় এক-চতুর্থাংশ নদী বা পুকুর থেকে অনিরাপদ পানি ব্যবহার করে। কিছু জায়গায় প্রচুর পানি থাকার পরও তা পানের উপযোগী নয়। গৃহস্থালির প্রয়োজনে অনেক দূর থেকে পানি আনতে হয়। আর এ কাজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করতে হয় নারীদের।

মোজাম্বিক 
বিশুদ্ধ পানি ও পর্যাপ্ত পয়োনিষ্কাশনের অভাবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় মোজাম্বিকের গ্রামীণ জনপদ ও উত্তরাঞ্চলে বাসিন্দারা। উপরন্তু, দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং নগরায়ণ পানি সরবরাহব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ে। এ ছাড়া পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।

সব মিলিয়ে আফ্রিকার দেশগুলোতে বিশুদ্ধ বা সুপেয় পানির অভাব ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। পৃথিবীতে যত মানুষ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, তার চেয়ে বেশির ভাগ প্রাণ হারায় বিশুদ্ধ পানির অভাবে। ডায়রিয়া, কলেরাসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে প্রতিদিন মৃত্যুবরণ করে হাজারো মানুষ। এদের অধিকাংশই শিশু।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত