Ajker Patrika

এরদোয়ানের হুঁশিয়ারি অগ্রাহ্য করে তুরস্কের রাজপথে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ

অনলাইন ডেস্ক
ইস্তাম্বুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থী ও অন্যান্যদের বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি
ইস্তাম্বুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থী ও অন্যান্যদের বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি

তুরস্কের প্রাচীন ও ঐতিহাসিক শহর ইস্তাম্বুলের গ্রেপ্তারকৃত মেয়র একরেম ইমামোগলুর সমর্থনে হাজারো প্রতিবাদকারী রাস্তায় নেমে এসেছেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন কেউ রাস্তায় বিক্ষোভ করলে ‘সন্ত্রাস দমন’ করা হবে। তবে বিক্ষোভকারীরা সেই হুঁশিয়ারি থোড়াই কেয়ার করেছেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একরেম ইমামোগলু এরদোয়ানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী এবং তিনি ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণার কথা ভাবছিলেন। সব ঠিক থাকলে কয়েক দিনের মধ্যে ঘোষণাও দিতেন। কিন্তু তার আগেই তাঁকে বুধবার গ্রেপ্তার করা হয়।

ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পরপরই ফুঁসে উঠে এরদোয়ান বিরোধীরা। রাস্তায় নেমে আসতে শুরু করেন তারা। গতকাল শুক্রবার টানা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভকারীরা তুরস্কের বাণিজ্যিক কেন্দ্র ইস্তাম্বুলের রাস্তায় নেমে আসেন। বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) নেতা ওজগুর ওজেল জানিয়েছেন, ইস্তাম্বুলে তিন লাখেরও বেশি মানুষ বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে।

ইস্তাম্বুলের সিটি হলের সামনে বিশাল জনসমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় সিএইচপি নেতা ওজেল বলেন, ‘আমরা তিন লাখ মানুষ।’ তিনি জানান, রাস্তাঘাট ও সেতু বন্ধ করে দেওয়ার কারণে বিক্ষোভকারীরা পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়েছে।

এর আগে, গত বুধবার সকালে মেয়র ইমামোগলুকে দুর্নীতি ও ‘সন্ত্রাসী’ গোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সঙ্গে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি, সাংবাদিক এবং ব্যবসায়ীকেও আটক করা হয়। গ্রেপ্তারের পর সরকার রাজনৈতিক সমাবেশের ওপর চার দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

এই ঘটনার একদিন আগে ইস্তাম্বুলের একটি বিশ্ববিদ্যালয় ইমামোগলুর ডিগ্রি বাতিল ঘোষণা করে। তুরস্কের সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক, ফলে এই সিদ্ধান্ত কার্যত ইমামোগলুর প্রার্থী হওয়ার পথ রুদ্ধ করে দেয়। ইমামোগলু জানিয়েছেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন।

শুক্রবার এরদোয়ান ঘোষণা করেন, সরকার রাস্তায় কোনো ধরনের বিক্ষোভ সহ্য করবে না এবং বিরোধী দল সিএইচপিকে দুর্নীতি ও ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘ইস্তাম্বুলে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের সুযোগ নিয়ে আমাদের রাস্তায় অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই, লুটপাটের স্বার্থ রক্ষার নামে কয়েকজন সুযোগসন্ধানী তুরস্কে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারবে না।’

সরকারের সমালোচকেরা মনে করছেন, ইমামোগলুর গ্রেপ্তার মূলত এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীকে আগামী নির্বাচনের আগেই সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনার অংশ। সরকারি কর্মকর্তারা অবশ্য বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে নেওয়া আইনি পদক্ষেপকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অস্বীকার করেছেন এবং দাবি করেছেন, তুরস্কের আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করছে।

ইস্তাম্বুল থেকে আল-জাজিরার প্রতিবেদক আকসেল জাইমোভিচ জানান, ইস্তাম্বুলের পৌর ভবনের সামনে বিক্ষোভে ‘অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী’ অংশ নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘তারা বলছে, ইমামোগলুর গ্রেপ্তার এবং ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই তারা বিক্ষোভ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিক্ষোভকারীরা বলছেন, এটি শুধু কোনো একক রাজনৈতিক দলকে সমর্থনের আন্দোলন নয়, বরং তুরস্কের সমাজে দীর্ঘদিনের ‘প্রাতিষ্ঠানিক অবিচারের’ বিরুদ্ধে একটি বার্তা পাঠানোর জন্য তারা আন্দোলনে নেমেছে। অনেকে বলছেন, তাদের ভোটাধিকার ও প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।’

ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর বুধবার ইস্তাম্বুলে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং দ্রুত তুরস্কের ৮১টি প্রদেশের মধ্যে ৩২ টিতে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর দল সিএইচপি আগামীকাল রোববার ইমামোগলুকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করতে চেয়েছিল। দলটি তাঁর গ্রেপ্তারকে ‘অভ্যুত্থান’ বলে আখ্যা দিয়েছে।

এদিকে, বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে অন্তত ৮৮ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে তুর্কি গণমাধ্যম জানিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়েরলিকায়া জানান, এ পর্যন্ত ১৬ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ছাড়া, অনলাইনে ‘ঘৃণা উসকে দেওয়ার’ অভিযোগে আরও ৫৪ জনকে আটক করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

ইমামোগলু ২০১৯ সালের মার্চে তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন। এরদোয়ান ও তাঁর দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) এক ঐতিহাসিক পরাজয় ছিল এই নির্বাচন। একেপি দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ইস্তাম্বুলের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘দুর্নীতিবাজ’ সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নির্দেশ

হাসিনাবিরোধী গণবিক্ষোভের কথা আগেই জানত ভারত, পরামর্শ দেওয়া ছাড়া কিছু করার ছিল না: জয়শঙ্কর

হাসনাতের বক্তব্য অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ব: নেত্র নিউজকে সেনাসদর

সেনানিবাসে বৈঠক নিয়ে হাসনাতের সঙ্গে দ্বিমত করে সারজিসের পোস্ট

এসিপির ইফতারে হাতাহাতি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট জেলা আহ্বায়ক গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত