হামিদ মীর, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, পাকিস্তান
এখন থেকে ২৫ বছর আগের কথা। তালেবানকে সহায়তা করার দায়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো সরকারের অব্যাহত সমালোচনা করছিলাম আমি। আমার সমালোচনায় খানিকটা বিচলিত হয়ে পড়েছিল তাঁর সরকার। এ অবস্থায় তালেবানকে ‘পাইপ-লাইন পুলিশ’ হিসেবে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি।
বেনজির ভুট্টো তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসেরুল্লাহ খান বাবরকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তালেবান সম্পর্কে আমাকে তাঁর সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এই মেজর জেনারেল আমাকে ধীরে ধীরে নানা বিষয় জানান। আহমদ শাহ মাসুদ, বোরহানুদ্দিন রাব্বানি এবং গুলবুদ্দিন হেকমাতিয়ার মতো আরও কিছু বিখ্যাত আফগান বিদ্রোহীকে ১৯৭৫ সালে অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন। বেনজির ভুট্টোর পিতা ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর আমলে সীমান্ত প্রদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ফ্রন্টিয়ার কর্পে মহাপরিদর্শক (আইজি)-এর দায়িত্বে ছিলেন।
তালেবানের সাবেক প্রধান প্রয়াত মোল্লা ওমরের সঙ্গেও আমার সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেছিলেন নাসেরুল্লাহ খান বাবর। তাঁর সঙ্গে আলাপ করে, এ অঞ্চলে তেল নিয়ে যে বড় ধরনের ‘খেলা’ চলছে তা নিয়ে তিনি খুব একটা সচেতন বলে মনে হলো না। আফগানিস্তানে শরিয়াহ আইন প্রতিষ্ঠাই তাঁর চিন্তাকে আচ্ছন্ন করে আছে বলে মনে হলো। তা ছাড়া, পাকিস্তান যেন তালেবানের সঙ্গে বিমাতার বদলে ভ্রাতৃসুলভ আচরণ করে সেটাই ছিল তাঁর দাবি।
আফগানিস্তানে তখন এক ব্যাপক টালমাটাল সময়। বোরহানুদ্দিন রাব্বানি সরকারকে হটিয়ে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেছে তালেবান। ক্ষমতাচ্যুতরা উত্তরাঞ্চলে গিয়ে তালেবানের বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছেন প্রতিরোধ, যা উত্তরাঞ্চলীয় জোট হিসেবে পরিচিত। এ জোটের অন্যতম নেতা বোরহানুদ্দিন রাব্বানি, আহমদ শাহ মাসুদের ওপর নাসেরুল্লাহ খান বাবরের প্রভাব ছিল।
তিনি এ প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে তালেবানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে তাঁদের রাজি করিয়েছিলেন। তা ছাড়া বিখ্যাত উজবেক ওয়ারলর্ড আবদুর রশিদ দুস্তমও তালেবানের সঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছিলেন।
বাবরের উদ্দেশ্য ছিল সব নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কাবুলে একটি বোর্ডভিত্তিক সরকার গঠন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রর চাপ সত্ত্বেও তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে গড়িমসি করছিলেন বেনজির ভুট্টা। কারণ, পরিকল্পিত তুর্কমিনিস্তান-আফগানিস্তান-পাকিস্তান-ভারত পাইপলাইন (টিএপিআই) নির্মাণের কাজ যুক্তরাষ্ট্রের ইউনোকলের বদলে আর্জেন্টিনার তেল কোম্পানি ব্রাইডাসকে দিতে আগ্রহী ছিল তাঁর সরকার। ইউনোকলকে কাজ দিতে তাঁর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ছিল বলে স্বয়ং বেনজির ভুট্টা আমাকে বলেছিলেন। এই যখন অবস্থা, ঠিক তখনই ১৯৯৬ সালে আচমকা পতন হয় বেনজির সরকারের। ভেস্তে যায় আফগান শান্তি আলোচনা। আর পাইপলাইন প্রজেক্ট চলে যায় ইউনোকলের কাছে।
এ ঘটনার কয়েক মাস পর আমি প্রথমবারের মতো আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার নেই। এরপর কান্দাহারে লাদেনের দ্বিতীয়বার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি ১৯৯৮ সালে। এখনো স্পষ্ট স্মরণ করতে পারি, দাড়ি না থাকায় সেবার তালেবান আমাকে গ্রেপ্তার করেছিল। আর উদ্ধার করেছিল আল-কায়েদা যোদ্ধারা। লাদেনের তৃতীয় সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম নাইন–ইলেভেনে যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনার দুই মাস পর কাবুলে।
ইদানীং অনেককে বলতে শোনা যাচ্ছে, বর্তমান তালেবান ২০০১ সালের তালেবানের চেয়ে আলাদা। তবে আমার বিশ্বাস, তালেবান নিজেদের পুরোনো আদর্শের প্রতি এখনো অনুগত। তবে দুই দশকে তারা নতুন কিছু কৌশল রপ্ত করেছে বলে মনে হচ্ছে। বাহিনীটির নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশনা ব্যবস্থা মূলত তাদের সেই পুরোনো আদর্শকে কেন্দ্র করেই চলছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গত ১০ বছরে কাতারে তালেবানের যে রাজনৈতিক অফিস গড়ে উঠেছে, সেখানকার কর্মকর্তারা স্বাধীনভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। ‘রাহবরি শূরা’ বা সর্বোচ্চ পরামর্শসভা এবং আফগানিস্তানে মাঠে প্রতিরোধ সংগ্রামে নিয়োজিত নেতারাই তাঁদের সিদ্ধান্ত ঠিক করে দেন। তবে সর্বোচ্চ নেতা মোল্লা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদাই হচ্ছেন তালেবানের ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামরিক শাখার হর্তাকর্তা। তিন সহকারীর সঙ্গে আলোচনা করেই তিনি সব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, মোল্লা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা দেশটিতে গণতন্ত্র কতটুকু সমর্থন করবেন। ভারত সরকার যে কাবুলে নতুন সংসদ ভবন বানিয়ে দিয়েছে, তার কতটুকু ব্যবহার হবে? তাঁরা ধর্মীয় আলোকে নারী স্বাধীনতা, বিভিন্ন পক্ষের অংশগ্রহণে সরকার গঠনের কথা বলেছেন ঠিকই, কিন্তু পশ্চিমা গণতন্ত্র নিয়ে তাঁদের মধ্যে যথেষ্ট আপত্তি আছে বলে আমার ধারণা। এক তালেবান নেতা আমাকে বলেছিলেন, সৌদি আরবে তো কোনো গণতন্ত্র নেই। তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক আছে। তাহলে আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে তাদের সমস্যা কোথায়। তাই মুখে তারা যত কিছু বলুক, তারা মূল আদর্শে কোনো ছাড় দেবে বলে আমার মনে হয় না।
তালেবানের এক প্রজন্ম সোভিয়েত রাশিয়াকে পরাজিত করেছে। আরেক প্রজন্ম যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করেছে ঠিকই। কিন্তু দেশ চালানো আসলেই অনেক কঠিন। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পেলে তালেবানের পক্ষে দেশ চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। তালেবান ইতিমধ্যে আশ্বাস দিয়েছে, তাদের ভূমি কোনো বিদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে ব্যবহার করতে দেবে না।
কিন্তু এটা তো কথার কথা।
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফগানিস্তানের ১৫টি প্রদেশে আল-কায়েদার কার্যক্রম রয়েছে। এসব আল-কায়েদা যোদ্ধার মধ্যে আফগান ও আরবের বাইরে অনেক পাকিস্তানি, ভারতীয়, বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের নাগরিক রয়েছে। ফলে এই দেশগুলো শঙ্কায় থাকবে। তাই তালেবানকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে হলে অন্তত বিশ্বের ১০টি দেশকে আশ্বস্ত করতে পারতে হবে। এরা হলো পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, চীন, ইরান, রাশিয়া (চেচনিয়া) ও যুক্তরাষ্ট্রকে সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে আশ্বস্ত করতে না পারলে, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়বে। কয়েক বছরে তালেবান ইরান ও রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে। আইএসআইএস, আল-কায়েদা বা কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীকে এসব দেশের বিরুদ্ধে কাজ করতে আফগানিস্তানকে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না বলে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করেছে তালেবান।
এদিকে তালেবানের প্রধান মুখপাত্র জবিয়ুল্লাহ মুজাহিদ প্রথম সংবাদ সম্মেলনে অনেক ভালো ভালো কথা বলেছেন বটে, কিন্তু ১৯ আগস্ট দেশটির স্বাধীনতা দিবসে পতাকা নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে। দেশটির পুরোনো জাতীয় পতাকা নিয়ে শোভাযাত্রাকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছে তালেবান। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেও কিছু সাংবাদিকের বাড়িতে তল্লাশি চালানো এবং কিছু নারী সাংবাদিককে কাবুলে কাজে বাধা দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ইসলামের নামে এসব হচ্ছে। কিন্তু এসবের মধ্যে তো কোনো ইসলাম নেই। এসব তো কেবল রাজনীতি।
এভাবে তালেবানের পক্ষে দেশ চালানো সম্ভব হবে না। তারা দুই দশকে বিদেশি কূটনীতিক এবং গণমাধ্যম মোকাবিলার কৌশল শিখেছে। এখন তাদের দরকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শেখা। নইলে তারা জনভিত্তি তৈরি করতে পারবে না। বুলেট দিয়ে জনমত সৃষ্টি করা যায় না। এ জন্য ব্যালট আবশ্যক। অর্থাৎ তালেবানকে নির্বাচনী ব্যবস্থায় ফিরতে হবে।
২৫ বছর আগে তালেবানকে একটি ‘পাইপলাইন পুলিশ’ হিসেবে আমার কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজকে তালেবান একটি বহুজাতিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তাই ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল স্যার নিক কার্টারের উদ্ধৃতি দিয়ে আমি শেষ করতে চাই। তিনি বলেছেন, ‘নতুন তালেবানকে একটু সুযোগ দেওয়া হোক। তারা তাদের পার্থক্য প্রমাণ করতে পারে কি না, দেখা যাক।’
তবে প্রশ্ন হচ্ছে, তারা এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে তো? না পারলে আফগান সমস্যা আশপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে। যা থেকে রক্ষা পাবে না পাকিস্তান, ভারত কিংবা বাংলাদেশ।
এখন থেকে ২৫ বছর আগের কথা। তালেবানকে সহায়তা করার দায়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো সরকারের অব্যাহত সমালোচনা করছিলাম আমি। আমার সমালোচনায় খানিকটা বিচলিত হয়ে পড়েছিল তাঁর সরকার। এ অবস্থায় তালেবানকে ‘পাইপ-লাইন পুলিশ’ হিসেবে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি।
বেনজির ভুট্টো তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসেরুল্লাহ খান বাবরকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তালেবান সম্পর্কে আমাকে তাঁর সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এই মেজর জেনারেল আমাকে ধীরে ধীরে নানা বিষয় জানান। আহমদ শাহ মাসুদ, বোরহানুদ্দিন রাব্বানি এবং গুলবুদ্দিন হেকমাতিয়ার মতো আরও কিছু বিখ্যাত আফগান বিদ্রোহীকে ১৯৭৫ সালে অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন। বেনজির ভুট্টোর পিতা ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর আমলে সীমান্ত প্রদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ফ্রন্টিয়ার কর্পে মহাপরিদর্শক (আইজি)-এর দায়িত্বে ছিলেন।
তালেবানের সাবেক প্রধান প্রয়াত মোল্লা ওমরের সঙ্গেও আমার সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেছিলেন নাসেরুল্লাহ খান বাবর। তাঁর সঙ্গে আলাপ করে, এ অঞ্চলে তেল নিয়ে যে বড় ধরনের ‘খেলা’ চলছে তা নিয়ে তিনি খুব একটা সচেতন বলে মনে হলো না। আফগানিস্তানে শরিয়াহ আইন প্রতিষ্ঠাই তাঁর চিন্তাকে আচ্ছন্ন করে আছে বলে মনে হলো। তা ছাড়া, পাকিস্তান যেন তালেবানের সঙ্গে বিমাতার বদলে ভ্রাতৃসুলভ আচরণ করে সেটাই ছিল তাঁর দাবি।
আফগানিস্তানে তখন এক ব্যাপক টালমাটাল সময়। বোরহানুদ্দিন রাব্বানি সরকারকে হটিয়ে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেছে তালেবান। ক্ষমতাচ্যুতরা উত্তরাঞ্চলে গিয়ে তালেবানের বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছেন প্রতিরোধ, যা উত্তরাঞ্চলীয় জোট হিসেবে পরিচিত। এ জোটের অন্যতম নেতা বোরহানুদ্দিন রাব্বানি, আহমদ শাহ মাসুদের ওপর নাসেরুল্লাহ খান বাবরের প্রভাব ছিল।
তিনি এ প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে তালেবানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে তাঁদের রাজি করিয়েছিলেন। তা ছাড়া বিখ্যাত উজবেক ওয়ারলর্ড আবদুর রশিদ দুস্তমও তালেবানের সঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছিলেন।
বাবরের উদ্দেশ্য ছিল সব নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কাবুলে একটি বোর্ডভিত্তিক সরকার গঠন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রর চাপ সত্ত্বেও তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে গড়িমসি করছিলেন বেনজির ভুট্টা। কারণ, পরিকল্পিত তুর্কমিনিস্তান-আফগানিস্তান-পাকিস্তান-ভারত পাইপলাইন (টিএপিআই) নির্মাণের কাজ যুক্তরাষ্ট্রের ইউনোকলের বদলে আর্জেন্টিনার তেল কোম্পানি ব্রাইডাসকে দিতে আগ্রহী ছিল তাঁর সরকার। ইউনোকলকে কাজ দিতে তাঁর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ছিল বলে স্বয়ং বেনজির ভুট্টা আমাকে বলেছিলেন। এই যখন অবস্থা, ঠিক তখনই ১৯৯৬ সালে আচমকা পতন হয় বেনজির সরকারের। ভেস্তে যায় আফগান শান্তি আলোচনা। আর পাইপলাইন প্রজেক্ট চলে যায় ইউনোকলের কাছে।
এ ঘটনার কয়েক মাস পর আমি প্রথমবারের মতো আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার নেই। এরপর কান্দাহারে লাদেনের দ্বিতীয়বার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি ১৯৯৮ সালে। এখনো স্পষ্ট স্মরণ করতে পারি, দাড়ি না থাকায় সেবার তালেবান আমাকে গ্রেপ্তার করেছিল। আর উদ্ধার করেছিল আল-কায়েদা যোদ্ধারা। লাদেনের তৃতীয় সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম নাইন–ইলেভেনে যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনার দুই মাস পর কাবুলে।
ইদানীং অনেককে বলতে শোনা যাচ্ছে, বর্তমান তালেবান ২০০১ সালের তালেবানের চেয়ে আলাদা। তবে আমার বিশ্বাস, তালেবান নিজেদের পুরোনো আদর্শের প্রতি এখনো অনুগত। তবে দুই দশকে তারা নতুন কিছু কৌশল রপ্ত করেছে বলে মনে হচ্ছে। বাহিনীটির নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশনা ব্যবস্থা মূলত তাদের সেই পুরোনো আদর্শকে কেন্দ্র করেই চলছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গত ১০ বছরে কাতারে তালেবানের যে রাজনৈতিক অফিস গড়ে উঠেছে, সেখানকার কর্মকর্তারা স্বাধীনভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। ‘রাহবরি শূরা’ বা সর্বোচ্চ পরামর্শসভা এবং আফগানিস্তানে মাঠে প্রতিরোধ সংগ্রামে নিয়োজিত নেতারাই তাঁদের সিদ্ধান্ত ঠিক করে দেন। তবে সর্বোচ্চ নেতা মোল্লা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদাই হচ্ছেন তালেবানের ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামরিক শাখার হর্তাকর্তা। তিন সহকারীর সঙ্গে আলোচনা করেই তিনি সব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, মোল্লা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা দেশটিতে গণতন্ত্র কতটুকু সমর্থন করবেন। ভারত সরকার যে কাবুলে নতুন সংসদ ভবন বানিয়ে দিয়েছে, তার কতটুকু ব্যবহার হবে? তাঁরা ধর্মীয় আলোকে নারী স্বাধীনতা, বিভিন্ন পক্ষের অংশগ্রহণে সরকার গঠনের কথা বলেছেন ঠিকই, কিন্তু পশ্চিমা গণতন্ত্র নিয়ে তাঁদের মধ্যে যথেষ্ট আপত্তি আছে বলে আমার ধারণা। এক তালেবান নেতা আমাকে বলেছিলেন, সৌদি আরবে তো কোনো গণতন্ত্র নেই। তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক আছে। তাহলে আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে তাদের সমস্যা কোথায়। তাই মুখে তারা যত কিছু বলুক, তারা মূল আদর্শে কোনো ছাড় দেবে বলে আমার মনে হয় না।
তালেবানের এক প্রজন্ম সোভিয়েত রাশিয়াকে পরাজিত করেছে। আরেক প্রজন্ম যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করেছে ঠিকই। কিন্তু দেশ চালানো আসলেই অনেক কঠিন। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পেলে তালেবানের পক্ষে দেশ চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। তালেবান ইতিমধ্যে আশ্বাস দিয়েছে, তাদের ভূমি কোনো বিদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে ব্যবহার করতে দেবে না।
কিন্তু এটা তো কথার কথা।
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফগানিস্তানের ১৫টি প্রদেশে আল-কায়েদার কার্যক্রম রয়েছে। এসব আল-কায়েদা যোদ্ধার মধ্যে আফগান ও আরবের বাইরে অনেক পাকিস্তানি, ভারতীয়, বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের নাগরিক রয়েছে। ফলে এই দেশগুলো শঙ্কায় থাকবে। তাই তালেবানকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে হলে অন্তত বিশ্বের ১০টি দেশকে আশ্বস্ত করতে পারতে হবে। এরা হলো পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, চীন, ইরান, রাশিয়া (চেচনিয়া) ও যুক্তরাষ্ট্রকে সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে আশ্বস্ত করতে না পারলে, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়বে। কয়েক বছরে তালেবান ইরান ও রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে। আইএসআইএস, আল-কায়েদা বা কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীকে এসব দেশের বিরুদ্ধে কাজ করতে আফগানিস্তানকে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না বলে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করেছে তালেবান।
এদিকে তালেবানের প্রধান মুখপাত্র জবিয়ুল্লাহ মুজাহিদ প্রথম সংবাদ সম্মেলনে অনেক ভালো ভালো কথা বলেছেন বটে, কিন্তু ১৯ আগস্ট দেশটির স্বাধীনতা দিবসে পতাকা নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে। দেশটির পুরোনো জাতীয় পতাকা নিয়ে শোভাযাত্রাকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছে তালেবান। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেও কিছু সাংবাদিকের বাড়িতে তল্লাশি চালানো এবং কিছু নারী সাংবাদিককে কাবুলে কাজে বাধা দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ইসলামের নামে এসব হচ্ছে। কিন্তু এসবের মধ্যে তো কোনো ইসলাম নেই। এসব তো কেবল রাজনীতি।
এভাবে তালেবানের পক্ষে দেশ চালানো সম্ভব হবে না। তারা দুই দশকে বিদেশি কূটনীতিক এবং গণমাধ্যম মোকাবিলার কৌশল শিখেছে। এখন তাদের দরকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শেখা। নইলে তারা জনভিত্তি তৈরি করতে পারবে না। বুলেট দিয়ে জনমত সৃষ্টি করা যায় না। এ জন্য ব্যালট আবশ্যক। অর্থাৎ তালেবানকে নির্বাচনী ব্যবস্থায় ফিরতে হবে।
২৫ বছর আগে তালেবানকে একটি ‘পাইপলাইন পুলিশ’ হিসেবে আমার কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজকে তালেবান একটি বহুজাতিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তাই ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল স্যার নিক কার্টারের উদ্ধৃতি দিয়ে আমি শেষ করতে চাই। তিনি বলেছেন, ‘নতুন তালেবানকে একটু সুযোগ দেওয়া হোক। তারা তাদের পার্থক্য প্রমাণ করতে পারে কি না, দেখা যাক।’
তবে প্রশ্ন হচ্ছে, তারা এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে তো? না পারলে আফগান সমস্যা আশপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে। যা থেকে রক্ষা পাবে না পাকিস্তান, ভারত কিংবা বাংলাদেশ।
একজনের বাড়ি ইউক্রেন, একজন যুক্তরাষ্ট্রের, জার্মানিরও আছেন একজন, অন্য দুজন সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তানের। বাইকের হ্যান্ডেল ধরে শুধু রাস্তাই নয়, নিজেদের জীবনকেও নতুন করে আবিষ্কার করেছেন এই পাঁচ নারী।
২১ মিনিট আগেদীর্ঘ ১৬ বছর ধরে খোঁজাখুঁজির পর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ এক ঘটনার মুখোমুখি হলেন ডিডি বোসওয়েল নামে এক মার্কিন নারী। সম্প্রতি তিনি প্রথমবারের মতো নিজের বাবার সঙ্গে দেখা হওয়ার একটি আবেগঘন মুহূর্তের ভিডিও শেয়ার করেছেন।
২ ঘণ্টা আগেপ্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরেই ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রশাসনের শীর্ষ মুখগুলোকে বেছে নিতে শুরু করেন। সর্বশেষ কৃষিমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী ব্রুক রোলিন্সকে। অর্থাৎ ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে প্রবেশের আগে ১৫ সদস্য নিয়ে ট্রাম্প তাঁর মন্ত্রিসভা জন্য চূড়ান্ত করে ফেলেছেন।
৩ ঘণ্টা আগেসাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে তাঁর সমর্থকেরা পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে বড় জমায়াতের প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে এই মিছিল ঠেকাতে মরিয়া এখন দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার। এ জন্য ইসলামাবাদে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি শহরের বেশ কয়েকটি এলাকায় মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা স্থগিত করা হয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগে