প্রেমে আগ্রহ চীনা তরুণ-তরুণীদের, বিয়েতে অনীহা 

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০: ৫৩
Thumbnail image

বিগত কয়েক বছর ধরেই চীনের জনসংখ্যা ক্রমাগত কমেছে। দেশটির সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েও বিষয়টির মোকাবিলা করতে পারছে না। কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কাসহ নানা কারণে চীনা সমাজে বিয়ের প্রতি তরুণ-তরুণীদের আগ্রহ ক্রমেই কমছে। বিপরীতে আগ্রহ বাড়ছে প্রেমে।

চীনের জনসংখ্যা সমস্যা এতটাই প্রকট যে, একসময়কার বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটি বর্তমানে শীর্ষ জনসংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে নেমে গেছে। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (এনবিএস) আজ জানিয়েছে, ২০২২ সালের শেষে চীনের জনসংখ্যা ১৪১ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৮ লাখ ৫০ হাজার কম। এনবিএসের তথ্যমতে, গত বছর চীনে ৯৫ লাখ ৬০ হাজার শিশুর জন্ম হয়েছে। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ ১০ হাজার জনের।

শেষবার চীনে রেকর্ড জনসংখ্যা কমেছিল ১৯৬০ সালে। ওই সময় দেশটি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছিল, যা গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড নামে পরিচিত বিপর্যয়কর মাও সেতুং কৃষিনীতির কারণে সৃষ্ট হয়েছিল। এরপর অবশ্য বিপুলসংখ্যক জনসংখ্যার কারণে ১৯৮০ সালে চীন তার কঠোর নীতি ‘এক সন্তান নীতি’ আরোপ করেছিল।

পরে অবশ্য ২০১৬ সালে এই নীতি থেকে সরে আসে চীন। ২০২১ সালে দম্পতিদের তিনটি সন্তান নেওয়ার অনুমতি দেয় চীন সরকার। কিন্তু চীনের এই পদক্ষেপ কাজে আসেনি করোনার কারণে। করোনার কারণে সবার জীবন অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। তখন বেশির ভাগ মানুষই সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে শিশু জন্মহার কমছে আশঙ্কাজনকভাবে। ২০২১ সালে চীনে ১ কোটি ৬০ লাখ শিশুর জন্ম হয়েছিল। এই সংখ্যাটাও ২০২০ সালের চেয়ে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ কম। চীনের এই পরিস্থিতি বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বিশ্বব্যবস্থায় বড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বছর দেশটিতে জন্মহার ছিল মাত্র ১ দশমিক ১৬।

তবে কোভিডের ধাক্কা, চীনের অর্থনৈতিক সংকট, আধুনিক সমাজব্যবস্থা, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে চীনা তরুণ-তরুণদের মধ্যে বিয়ে করার প্রবণতা অনেকটাই কমেছে। ২০১৩ সালে যেখানে দেশটি ১ কোটি ৩৫ লাখ বিয়ে নিবন্ধন করা হয়েছিল, ২০২২ সালে এসে সেই সংখ্যা নেমে আসে মাত্র ৬৮ লাখে।

চীনা তরুণ-তরুণীরা মনে করেন, তাঁদের আধুনিক জীবনপ্রণালির সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি খাপ খায় না। এ বিষয়ে সাংহাইয়ের ২৬ বছর বয়সী তরুণ ও ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান ইউ ঝাং আল-জাজিরাকে বলেন, ‘চীনে এখন বিয়ে করা মানে হলো একপ্রকার মরে যাওয়া।’

ঝাং দুই বছর ধরে তাঁর প্রেমিকার সঙ্গে ডেটিং করছেন। তাঁরা একাধিকবার বিয়ের বিষয়টি নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। কিন্তু কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেননি, বরং উপসংহার টেনেছেন এভাবে—‘বিয়ের চিন্তা আমাদের সুখী করার চেয়ে মানসিকভাবে অসুখী করে তোলে।’

অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের চায়নিজ অ্যান্ড এশিয়া স্টাডিজের সিনিয়র লেকচারার প্যান ওয়াংয়ের মতে, ‘চীনা সমাজে ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়টি প্রাধান্য পাওয়ার সঙ্গে বিয়েবিষয়ক চিন্তাভাবনায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে।’ তাঁর মতে, বিয়ে বর্তমান চীনা সমাজে অনেকগুলো জীবনধারার একটি।

তবে বিয়েবিষয়ক চিন্তাভাবনা বিশেষ করে বিয়ের আগ্রহ কমার সঙ্গে সঙ্গে দেশটিতে প্রেম-ডেটিংয়ের আগ্রহ বেড়েছে ব্যাপক। ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের গবেষক মু ঝেং এ বিষয়ে বলেন, চীনে ডেটিং আগের চেয়ে অনেক বেশি বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে এবং তরুণ-তরুণীরা বিয়ের জন্য সঙ্গী খুঁজে বের করার চেয়ে অন্যান্য কারণেই ডেট করে বেশি।

মু ঝেংয়ের মতে, ডেটিং অফলাইন বা অনলাইনে শুরু হতে পারে কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিভিন্ন ডেটিং অ্যাপস বা ম্যাচমেকিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেও হতে পারে। বিষয়টি আজকাল খুবই সহজ হয়ে উঠেছে। ফলে তরুণ-তরুণীদের এতে আগ্রহ বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘চীনে বর্তমানে ডেটিং একটি স্বপ্রণোদিত এবং স্বাভাবিক কার্যক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

চীনের গুয়াংজু প্রদেশের তরুণী জেসিকা ফু। তিনি আল-জাজিরাকে জানান, তাঁর বাবা-মা ও আত্মীয়রা তাঁকে বিয়ে করার জন্য সঙ্গী খুঁজে পেতে চাপ দিচ্ছিলেন। তবে তিনি সেই চাপ দূরে সরিয়ে প্রেম ও ডেটিংয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আমাকে বুঝিয়েছি যে, বিয়ের জন্য তাড়াহুড়ো করার কোনো প্রয়োজন নেই। তার পরিবর্তে ডেটিং করা এবং অন্য কারও সঙ্গে উপভোগ করা অনেক বেশি আনন্দের।’

জেসিকা ফু বলেন, বিয়ের চাপ সরানোর জন্য এটি একটি দারুণ উপায়। বিষয়টি উপভোগ করার জন্য আমি ডেটিংয়ে মনোনিবেশ করেছি। তবে এখন আবার তিনি ডেটিং থেকে কিছু সময়ের জন্য বিরতি নিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত