হংকংয়ে বস ও এক ভারতীয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি নারীর যৌন নির্যাতনের মামলা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০: ০৭
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭: ৪৮
হংকং। ছবি: এএফপি

হংকংয়ের একটি আইনজীবী প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং ওই প্রতিষ্ঠানের ভারতীয় সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে যৌন ও জাতিগত হয়রানির অভিযোগ এনেছেন খান সাইমা বেগম নামে এক বাংলাদেশি নারী। আজ শুক্রবার সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে এই খবর জানা গেছে।

এ বিষয়ে আজ হংকংয়ের ‘ইক্যুয়াল অপর্চুনিটিজ কমিশন’ জানিয়েছে, তারা খান সাইমা বেগমের পক্ষে ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলাটি করেছে। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে—এই মামলা কর্মস্থলে অবৈধ যৌন ও জাতিগত হয়রানি সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করবে।

সাইমা বেগম অভিযোগ করেছেন, তিনি ২০২১ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ‘ডব্লিউটি ল অফিসেস’-এ পার্ট-টাইম ল ক্লার্ক হিসেবে কাজ করেছেন। সেখানে তাঁর সাবেক কর্মদাতা চুই পুই-হাং তাঁকে যৌন ও জাতিগতভাবে হয়রানি করেছেন।

সাইমার অভিযোগ, চুই তাঁকে হিন্দি ভাষায় এমন গালি দিয়ে সম্বোধন করতেন, যার মাধ্যমে নারীর যৌন অঙ্গকে নির্দেশ করা হয়। তা ছাড়া তাঁকে ‘পাকি’ বলেও অপমান করতেন। এই শব্দটি পাকিস্তান এবং দক্ষিণ এশিয়ার মানুষদের প্রতি একটি অবমাননাকর শব্দ।

সাইমা আরও অভিযোগ করেন, তিনি চুইকে এসব অপমানজনক শব্দ ব্যবহার বন্ধ করার অনুরোধ করলেও, তিনি তা শোনেননি। শুধু তাই নয়, চুইয়ের ভারতীয় সুপারভাইজার মানুরাজ তাঁকে এই অবমাননাকর শব্দগুলো শিখিয়েছিলেন।

মানুরাজ প্রায় সময়ই সাইমার সামনে তাঁর যৌন সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতেন। সাইমাকে তিনি যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ লিংকও পাঠিয়েছিলেন।

মনুরাজের বিরুদ্ধে সাইমার সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগটি হলো—কাজের বিষয়ে আলোচনা করতে একবার অফিস ছুটির পর তাঁর সঙ্গে একটি রেস্তোরাঁয় বসেছিলেন সাইমা। কিন্তু মানুরাজ তাঁকে সেখানে জোরপূর্বক জড়িয়ে ধরেন এবং মাস্ক পরা অবস্থাতেই তাঁর ঠোঁটে চুম্বন করেন।

সাইমা বলেন, এই অভিযোগগুলো দুই অভিযুক্তের কাছে তোলা হলেও তাঁরা বিরত হননি। ধারাবাহিক হয়রানির কারণে ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি চাকরি ছেড়ে দেন।

খান সাইমা বেগম আদালতে আবেদন করেছেন যেন, অভিযুক্তরা তাঁর কাছে লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২ লাখ ৩৬ হাজার ২০০ হংকং-ডলার দাবি করেছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩৬ লাখ টাকার বেশি।

ক্ষতিপূরণের জন্য নির্ধারিত অঙ্কের যৌক্তিকতাও তুলে ধরেছেন সাইমা। এর মধ্যে তিনি তাঁর তিন মাসের বেতন ১৬ হাজার ২০০ হংকং ডলার, মানসিক আঘাতের জন্য ২ লাখ হংকং-ডলার এবং শাস্তিমূলক ক্ষতিপূরণ হিসেবে আরও ২০ হাজার ডলার যোগ করেছেন।

হংকংয়ের লিঙ্গবৈষম্য অধ্যাদেশ অনুযায়ী, যৌন হয়রানি হলো—অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যৌন আচরণ। উদাহরণস্বরূপ—অপ্রত্যাশিত শারীরিক স্পর্শ, চুম্বন বা যৌন ইঙ্গিত। এ ধরনের আচরণ ভুক্তভোগীর জন্য অপমানজনক, বিব্রতকর বা ভয়ংকর হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে অধ্যাদেশে।

অন্যদিকে হংকংয়ের জাতি বৈষম্য অধ্যাদেশ অনুযায়ী, জাতিগত হয়রানি হলো—অন্যের জাতি বা বর্ণের ভিত্তিতে অপমানজনক বা অবমাননাকর আচরণ করা।

সাইমার পক্ষে মামলা করা কমিশন বলেছে, ‘এই মামলা হংকংয়ের কর্মস্থলে যৌন ও জাতিগত হয়রানির আইনি পরিণতি সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবে।’

আরও বলা হয়েছে, ‘মামলাটি চাকরিদাতা ও কর্মীদের স্মরণ করিয়ে দেবে যে, কর্মস্থলে যৌন বা জাতিগত হয়রানি অবৈধ এবং এর গুরুতর আইনি পরিণতি রয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসরায়েলের ‘হৃৎপিণ্ড’ তেল আবিবে হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

সাগরে নিম্নচাপ, কত দিন বৃষ্টি হতে পারে জানাল আবহাওয়া দপ্তর

শেখ মুজিব ও জিয়াউর রহমান যার যার স্থানে শ্রেষ্ঠ: গয়েশ্বর

র‌্যাব বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি: নূর খান লিটন

হাসিনার আমলে রাশিয়ার সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি, জড়াল টিউলিপের নামও

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত