Ajker Patrika

ইউনেসকো গ্লোবাল জিওপার্কের স্বীকৃতি পেল উত্তর কোরিয়ার পবিত্র পর্বত

অনলাইন ডেস্ক
মাউন্ট পায়েকতু পর্বত। ছবি: সিএনএন
মাউন্ট পায়েকতু পর্বত। ছবি: সিএনএন

বিশ্বের সবচেয়ে গোপন দেশটির সামরিক চৌকি এবং এবড়োখেবড়ো কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে কোরীয় উপদ্বীপের শেষ প্রান্তে জেগে উঠেছে একটি আগ্নেয়গিরি এবং একটি গভীরতম হ্রদ। উত্তর কোরিয়া এবং চীনের সীমান্তে অবস্থিত সক্রিয় আগ্নেয়গিরির মাউন্ট পায়েকতু হলো কোরীয় উপদ্বীপের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। শুধু তাই নয়, যে উপাখ্যানের মধ্য দিয়ে উত্তর কোরিয়া প্রতিষ্ঠার বর্ণনা করা হয়, তার কেন্দ্রস্থলে রয়েছে এই পর্বত।

ইতিহাস, পৌরাণিক কাহিনি ও রাষ্ট্রীয় প্রতীকে গুরুত্বপূর্ণ এই পর্বতটিকে সম্প্রতি ইউনেসকোর গ্লোবাল জিওপার্ক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এবারই প্রথম উত্তর কোরিয়ার প্রাকৃতিক কোনো স্থান এই সম্মানে ভূষিত হলো।

দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদ সংস্থা ইয়োনহাপের বরাতে মঙ্গলবার সিএনএন জানিয়েছে, ইউনেসকোর নির্বাহী বোর্ড গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ওই স্বীকৃতি দেয়। এ সময় তাঁরা পায়েকতু পর্বতের অসাধারণ প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য—বিশেষ করে আগ্নেয়গিরির ইতিহাস, হিমবাহঘটিত উপত্যকা ও ভূতাত্ত্বিক গঠনের প্রশংসা করেন।

প্রাচীন কাহিনি অনুসারে, পায়েকতু ছিল প্রথম কোরীয় রাজ্য প্রতিষ্ঠাতা ডানগুনের জন্মস্থান। উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সুং ১৯৪০-এর দশকে জাপানি দখলদারদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে এই পর্বতের আশপাশেই লুকিয়ে ছিলেন বলে দাবি করা হয়। এমনকি তাঁর পুত্র কিম জং ইল-এর জন্মও এই পর্বতের কাছে একটি কুটিরে হয়েছে বলে প্রচার করে উত্তর কোরিয়া। তবে ঐতিহাসিক প্রমাণ অনুযায়ী ধারণা করা হয়, তিনি সম্ভবত রাশিয়ায় জন্মেছিলেন।

এই পর্বত কিম পরিবারকে ঘিরে গড়ে ওঠা ‘পায়েকতু রক্তরেখা’র প্রতীক। রাষ্ট্রীয় প্রচারে এই রক্তরেখাকে মহৎ, বীরত্বপূর্ণ ও বিশুদ্ধ জাতির প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়। পায়েকতু শুধু একটি পর্বত নয়, এটি উত্তর কোরিয়ার মানুষের কাছে একটি জাতীয় তীর্থক্ষেত্র। এই পর্বতের ছবি জাতীয় প্রতীকে, রকেট, বিদ্যুৎকেন্দ্র এমনকি দেশের নামেও ব্যবহৃত হয়েছে।

২০১৭ সালে একজন পশ্চিমা সাংবাদিকের সফরে দেখা যায়—পাহাড়ি বাতাস আর হ্রদের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা তীর্থযাত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ আবেগে কাঁদছেন। কিম জং উন নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার আগে পায়েকতু সফর করেন—যেমন তাঁর চাচা জ্যাং সং থায়েকের মৃত্যুদণ্ড কিংবা ২০১৬ সালের পারমাণবিক পরীক্ষার আগেও তিনি এমনটি করেছিলেন। এমনকি ২০১৮ সালে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনকে সঙ্গে নিয়ে এই পর্বতের শীর্ষে উঠেছিলেন। দুই কোরিয়ার ঐক্যের এক বিরল মুহূর্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয় সেই সময়টিকে।

৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে পায়েকতু পর্বতের অগ্ন্যুৎপাতকে পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম শক্তিশালী আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইউনেসকো এটিকেই গুরুত্ব দিয়ে বিশ্বমানের ভূতাত্ত্বিক অঞ্চলের স্বীকৃতি দিয়েছে।

২০১৯ সালে উত্তর কোরিয়া এই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করলেও কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এটির পরিদর্শন বিলম্বিত হয়েছিল। তবে এই পর্বতের চীনের অংশ ‘চাংবাইশান’ তত দিনে স্বীকৃতি পেয়ে গিয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত