হাসিনার পতন আশার সঞ্চার করলেও বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্রিটিশ আইনপ্রণেতারা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২: ২৪
আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২: ৩৭
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি। ছবি: এএফপি

বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে যুক্তরাজ্য বৈশ্বিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়ে উঠতে পারে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির কাছে পাঠানো এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ আইনপ্রণেতাদের একটি দল এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। তারা একই সঙ্গে এটাও জানিয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতন বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একটি সর্বদলীয় গোষ্ঠী দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির কাছে বাংলাদেশ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। এতে বেশ কিছু উদ্বেগজনক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছরের আগস্টের শুরুর দিকে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ‘চরমপন্থীদের’ শক্তি বাড়ার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

কমনওয়েলথ সম্পর্কিত অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এপিপিজি) জানিয়েছে, হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ২ হাজারের বেশি সহিংসতা নথিভুক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, বর্তমান শাসকগোষ্ঠী প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বিচারব্যবস্থাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।

এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে এর প্রভাব যুক্তরাজ্যের ওপর পড়তে পারে। ২০২১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মানুষের সংখ্যা ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৮৮১ যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ১ শতাংশ।

এদিকে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রভাব পড়েছে লেবার পার্টির এমপি ও ট্রেজারি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের ওপরও। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর খালা এবং নানা (শেখ মুজিবুর রহমান) ছিলেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি।

এপিপিজির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির এমপি এমপি অ্যান্ড্রু রোসিন্ডেল বলেন, ‘এই প্রতিবেদনটি গুরুত্বপূর্ণ কমনওয়েলথ অংশীদারদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এমন বিষয়গুলো নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর একটি পদক্ষেপ।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবেদনটি সরকার, দাতব্য সংস্থা এবং বাংলাদেশ ও কমনওয়েলথের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে শেয়ার করা হবে। আশা করা হচ্ছে, এই বিষয়গুলো ওয়েস্টমিনস্টার (ব্রিটিশ পার্লামেন্ট) এবং হোয়াইটহলে (ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন কার্যালয় যেখানে অবস্থিত) আলোচিত হবে।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘সহিংসতা ও অস্থিরতার পরও ২০২৪ সালের আগস্টের শুরুতে শেখ হাসিনার সরকারের পতন অনেকের কাছে আনন্দ ও আশার সঞ্চার করেছে।’ এতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমরা এমন প্রমাণ পেয়েছি, যা নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বিচারব্যবস্থাকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করার এবং মানবাধিকার ও আইনের শাসন বজায় রাখার জন্য জরুরি প্রয়োজন। এটি করতে ব্যর্থ হলে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন অন্তর্বর্তী সরকারে ইমেজ ভালোভাবে প্রতিফলিত হবে না।’

এপিপিজির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব, সংসদ সদস্য, সাবেক বিচারক, আইনজীবী এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এগুলো সংখ্যায় এত বেশি যে, এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।’

প্রতিবেদনে আগস্টের শেষ নাগাদ প্রায় ১ হাজার জনের মৃত্যু নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি ও উচ্চকক্ষের সদস্য লর্ডরা বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের পর শেখ হাসিনার পতন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের তিন মাস পরও বাংলাদেশে কিছু এলাকায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক।’ তাঁরা আরও বলেন, ‘গত কয়েক মাসে ধর্মীয় এবং জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলো লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠার ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। কঠোর ইসলামপন্থীরা ক্রমশ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ও দৃশ্যমান হয়ে উঠছে, এমন প্রমাণ উঠে আসছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত