কুরস্কে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে রুশ-উ. কোরিয়ার সেনারা: জেলেনস্কি

অনলাইন ডেস্ক    
প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২: ০৫
Thumbnail image
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গতকাল শনিবার দাবি করেছেন, রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের কুরস্কে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে রুশ ও উত্তর কোরিয়ার বাহিনী বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। তিনি বলেছেন, কুরস্ক অঞ্চলের সংঘর্ষে উত্তর কোরিয়ার পদাতিক বাহিনী ও রুশ প্যারাট্রুপার বাহিনীর একটি করে ব্যাটালিয়ন হারিয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ইউক্রেনীয় ও পশ্চিমা মূল্যায়ন অনুযায়ী, প্রায় ১১ হাজার উত্তর কোরিয়ার সেনা কুরস্ক অঞ্চলে মোতায়েন আছে। সেখানে ইউক্রেনীয় বাহিনী আগস্ট মাসে প্রবেশের পর বেশ কিছু এলাকা দখল করে। পরে অবশ্য রাশিয়া জানায়, তারা বেশির ভাগ এলাকাই উদ্ধার করেছে।

গতকাল শনিবার রাতে দেওয়া এক ভিডিও ভাষণে জেলেনস্কি শীর্ষ ইউক্রেনীয় কমান্ডার ওলেকজান্দর সিরস্কির এক প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে বলেছেন, ইউক্রেনের সীমান্তের কাছে রুশ গ্রাম মাখনোভকার কাছে ব্যাপক যুদ্ধ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘গতকাল (শুক্রবার) এবং আজ (শনিবার) কুরস্ক অঞ্চলের মাখনোভকা গ্রামের কাছে সংঘর্ষে উত্তর কোরিয়ার পদাতিক বাহিনী ও রুশ প্যারাট্রুপার বাহিনী একটি করে ব্যাটালিয়ন হারিয়েছে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

প্রেসিডেন্ট সুনির্দিষ্ট কোনো বিবরণ দেননি। একটি ব্যাটালিয়নের আকার বিভিন্ন হতে পারে তবে সাধারণত এটি কয়েক শ সৈন্য নিয়ে গঠিত। রয়টার্স প্রেসিডেন্টের বক্তব্য স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।

জেলেনস্কি গত সপ্তাহে কুরস্ক অঞ্চলে উত্তর কোরিয়ার বাহিনীর বড় ধরনের ক্ষতির কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তাদের বাহিনী রুশ সেনাদের সহযোগিতায় পর্যাপ্ত সুরক্ষা পাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরা বন্দী হওয়া এড়াতে চরমপন্থা অবলম্বন করছেন এবং কিছু ক্ষেত্রে তাঁদের নিজস্ব বাহিনীর সদস্যরাই তাঁদের সহকর্মীদের হত্যা করছেন।

সর্বশেষ ভাষণে জেলেনস্কি আরও বলেছেন, পুরো এক হাজার কিলোমিটার রণক্ষেত্রে তীব্র যুদ্ধ চলছে। সবচেয়ে জটিল পরিস্থিতি পোকরোভস্ক শহরের কাছে। রুশ বাহিনী আক্রমণের মাধ্যমে (অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে) বিপুলসংখ্যক জনবল হারানোর বিষয়টি অব্যাহত রেখেছে।

ইউক্রেনের সেনাপ্রধান ওলেকজান্দর সিরস্কি দাবি করেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনের রণক্ষেত্রে ২০২৪ সালে সোয়া ৪ লাখের বেশি সেনা হারিয়েছে। অর্থাৎ, এই সংখ্যক সেনা হয় প্রাণ হারিয়েছেন, নয়তো আহত হয়ে রণক্ষেত্রে ছেড়েছেন। তবে রাশিয়ার তরফ থেকে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য বা প্রতিবাদ জানানো হয়নি।

ওলেকজান্দর সিরস্কি গত সোমবার জানান, ২০২৪ সালে রুশ বাহিনীর আহত ও নিহতের সংখ্যা আনুমানিক ৪ লাখ ২৭ হাজার। কয়েক দিন পর ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২৪ সালে রাশিয়ার সেনা হতাহতের সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার ৭৯০ জন। এই সংখ্যা ২০২২ ও ২০২৩ সালের সম্মিলিত ক্ষয়ক্ষতির চেয়েও বেশি।

ইউক্রেনের সরকারি তথ্য বিবেচনায় নিলে, রাশিয়া গত বছর প্রতিদিন ১ হাজার ১৮০ জন করে সেনা হারিয়েছে। তবে বছরের শেষ দিকে, বিশেষ করে মার্কিন নির্বাচনে প্রভাব ফেলার প্রচেষ্টায় রুশ বাহিনীর আক্রমণ বৃদ্ধির ফলে দৈনিক ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে রাশিয়ার সেনা হতাহতের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৪৫ হাজার ৭২০ এবং ৪৮ হাজার ৬৭০ জন করে। এ বিষয়টি ইঙ্গিত করে জেনারেল সিরস্কি বছরের শেষ দিনে তাঁর সেনাদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে বলেন, ‘এ বছর (২০২৪ সাল) রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সবচেয়ে বড় মূল্য দিয়েছে। কারণ, আমাদের সেনাবাহিনী এবং প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনী শত্রুর আরও বেশি সরঞ্জাম ও জনশক্তি ধ্বংস করেছে।’

রাশিয়া গত অক্টোবরের দৈনিক ১৪ বর্গকিলোমিটার ভূখণ্ড দখল করলেও নভেম্বরে বেড়ে ২৮ বর্গকিলোমিটারে পৌঁছায়। তবে ডিসেম্বর মাসে তা কমে দৈনিক ১৮ বর্গকিলোমিটার হয়। কিন্তু এই সময়েও রাশিয়ার সেনা হতাহতের পরিমাণ কমেনি। গত সোমবার সিরস্কি বলেন, ‘গত সপ্তাহে, প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৭০০ রুশ সৈন্য নিহত ও আহত হয়েছে।’

এ ছাড়া, ইউক্রেন দাবি করেছে, তারা ৩ হাজার ৬৮৯টি রুশ ট্যাংক, কয়েক হাজার সাঁজোয়া যান এবং ১৩ হাজারের বেশি আর্টিলারি বা গোলন্দাজ ইউনিট ধ্বংস করেছে। ইউক্রেনের নৌবাহিনী জানায়, তারা পাঁচটি রুশ যুদ্ধজাহাজ এবং ৪৫৮টি ছোট নৌযান ডুবিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত