রুশ ক্ষেপণাস্ত্রে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত— তদন্ত পর্যন্ত অপেক্ষার আহ্বান ক্রেমলিনের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ৩৪
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ৫৩
উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ৬৭ জন যাত্রী ও ক্রুদের মধ্যে অন্তত ৩৮ জন নিহত হন। ছবি: সংগৃহীত

কাজাখস্তানে আজারবাইজান এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের পেছনে রাশিয়ার সামরিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থার হাত রয়েছে—এমন তথ্য গতকাল বৃহস্পতিবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। আজারবাইজানের তদন্তের প্রাথমিক অনুসন্ধানসহ সংশ্লিষ্ট চারটি সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানায় বার্তা সংস্থাটি। অন্যদিকে, উড়োজাহাজ চলাচল বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে এ দুর্ঘটনায় রুশ ক্ষেপণাস্ত্রকে দায়ী করে আজারবাইজানের সরকারপন্থী গণমাধ্যম।

এসব অভিযোগের বিরুদ্ধে সতর্ক বার্তা উচ্চারণ করেছে রাশিয়া সরকার। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কাজাখস্তানে রাশিয়াগামী উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে অনুমাননির্ভর তথ্য প্রচারের বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে।

আজ শুক্রবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘যে কোনো উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা বিশেষায়িত উড়োজাহাজ চলাচল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তদন্ত করা উচিত। বর্তমানে একটি তদন্ত প্রক্রিয়াধীন। এই তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তদন্তের ফলাফল না আসা পর্যন্ত কোনো অনুমান করা ভুল হবে। আমরা এটা করব না এবং কারওই এমনটা করা উচিত নয়। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’

অন্যদিকে কাজাখস্তান সিনেটের স্পিকার মাউলেন আশিমবায়েভ রুশ সংবাদ সংস্থা তাসকে বলেন, ‘কী কারণে প্লেনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এখনই বলা সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরা দেখছেন। তাঁরা নিজেদের সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন। কাজাখস্তান, রাশিয়া বা আজারবাইজান অবশ্যই তথ্য গোপন করার প্রতি আগ্রহী নয়। এটি জনগণের কাছে প্রকাশ করা হবে।’

গত বুধবার আজারবাইজান এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ কাজাখস্তানের আকতাউ শহরের কাছে বিধ্বস্ত হয়। আজারবাইজানের বাকু থেকে রাশিয়ার গ্রোজনি যাচ্ছিল উড়োজাহাজটি। বিধ্বস্ত হওয়ার আগে উড়োজাহাজটি জরুরি অবতরণের অনুরোধ করেছিল বলে এক প্রতিবেদনে জানা যায়। উড়োজাহাজের ৬৭ জন যাত্রী ও ক্রুর মধ্যে অন্তত ৩৮ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৬ জন ছিলেন রাশিয়ার নাগরিক।

এ দুর্ঘটনায় রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দায়ী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আজারবাইজানের কয়েকটি টিভি চ্যানেলে খোলাখুলিভাবে কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা।

অ্যানিউজ চ্যানেল জানায়, উড়োজাহাজটি রাশিয়ার পান্তসির–এস প্রতিরক্ষাব্যবস্থা থেকে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে।

বিবিসি রেডিও ৪-কে ঝুঁকিবিষয়ক উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান সিবিলিনের জাস্টিন ক্রাম্প জানান, উড়োজাহাজের ভেতরে ও বাইরে ক্ষয়ক্ষতির ধরন দেখে ধারণা করা হচ্ছে গ্রোজনিতে সক্রিয় রুশ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়ে থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি শ্রাপেলের প্যাটার্ন দেখেন, তাহলে এটি অনেকটা আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণের মতো।’

এএফপিকে রুশ সামরিক ব্লগার ইউরি পডোল্যাকা বলেন, প্লেনের ধ্বংসাবশেষের ছবিতে দেখা গেছে এমন ছিদ্র, যা ‘অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইল সিস্টেম’ দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতির মতো। সম্ভবত প্লেনটি দুর্ঘটনাক্রমে একটি আকাশ প্রতিরক্ষা মিসাইল দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল।

সরকারপন্থী আরেক ওয়েবসাইট ক্যালিবার সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, উড়োজাহাজটিতে ইচ্ছাকৃতভাবে হামলা হয়েছে এমন দাবি কেউ করছে না। তবে বাকু রাশিয়ার কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়ার প্রত্যাশা করছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাকুর চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় বিবিসিকে জানায়, প্রতিটি বিষয় তদন্ত করা হচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে এড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা। তা ছাড়া, রাশিয়া যদি উড়োজাহাজটি ভূপাতিত করার কথা নিজেরা স্বীকার না করে, আজারবাইজান সরকারের পক্ষে সরাসরি রাশিয়াকে দোষারোপ করা খুব কঠিন হবে।

ধারণা করা হচ্ছে, আজারবাইজান ও কাজাখস্তানের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে এর পক্ষে প্রমাণ পেয়েছে। তবে রাশিয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করছে তারা। এদিকে কাজাখস্তানের প্রধান প্রসিকিউটর জানিয়েছেন, তদন্ত এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম তাৎক্ষণিক প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে পাখির সঙ্গে সংঘর্ষকে দায়ী করে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাখির সঙ্গে সংঘর্ষে এমন দুর্ঘটনা হয় না।

অ্যাভিয়েশন বিশ্লেষক রিচার্ড আবুলাফিয়া বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, সাধারণত এ ধরনের সংঘর্ষের ফলে উড়োজাহাজটি নিকটবর্তী উড়োজাহাজ বন্দরের দিকে চলে যায়। আপনি উড়োজাহাজের নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারেন, কিন্তু এভাবে বিশৃঙ্খলভাবে ওড়াতে পারেন না।’

যদি রাশিয়া এ দুর্ঘটনার দায় স্বীকার করে, তাহলে আকাশসীমায় অরক্ষিত সামরিক তৎপরতা চালানোর জন্য প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। পাশাপাশি উড়োজাহাজটিকে অবতরণের জন্য আকতাউয়ের দিকে নির্দেশ না দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অবতরণ করতে দেয়নি কেন—এ প্রশ্নের উত্তরও দিতে হবে মস্কোকে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত