Ajker Patrika

ইউক্রেনের ভেতর দিয়ে যাওয়া রুশ গ্যাস পাইপলাইনের নিয়ন্ত্রণ চান ট্রাম্প

অনলাইন ডেস্ক
ইউক্রেনের ভেতর দিয়ে যাওয়া রুশ গ্যাস পাইপলাইনের নিয়ন্ত্রণ কিয়েভের কাছ থেকে নিয়ে নিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের ভেতর দিয়ে যাওয়া রুশ গ্যাস পাইপলাইনের নিয়ন্ত্রণ কিয়েভের কাছ থেকে নিয়ে নিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনের ভেতরে দিয়ে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের জন্য যাওয়া রাশিয়ার পাইপলাইনের নিয়ন্ত্রণ কিয়েভের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়ার দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্সে। এই পদক্ষেপকে ঔপনিবেশিক কায়দায় চাপ সৃষ্টি করে দাবি আদায়ের চেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে কিয়েভের তরফ থেকে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে খনিজ চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য মার্কিন ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা শুক্রবার বৈঠকে মিলিত হন। ডোনাল্ড ট্রাম্প চান কিয়েভ যেন তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করে। এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, আগের বাইডেন প্রশাসন যে অস্ত্র সরবরাহ করেছিল, তার ‘শোধ’ হিসেবে এটি চাওয়া হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আলোচনা ক্রমশ তিক্ত হয়ে উঠছে। ফেব্রুয়ারির মূল প্রস্তাবের তুলনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ প্রস্তাবটি আরও ‘ম্যাক্সিমালিস্ট’ বা সর্বোচ্চ সুবিধা আদায়ে চরম পদক্ষেপ নেওয়ার মতো। আগের প্রস্তাবে ওয়াশিংটনকে ৫০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বিরল ধাতু, সেই সঙ্গে তেল ও গ্যাস দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আলোচনার ঘনিষ্ঠ এক সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে, সবচেয়ে সাম্প্রতিক নথিতে একটি দাবি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, মার্কিন সরকারের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশন যেন ‘প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইনের নিয়ন্ত্রণ নেয়।’

এই পাইপলাইনটি রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সুদঝা থেকে ইউক্রেনের উজহোরোদ শহর পর্যন্ত বিস্তৃত। উজহোরোদ শহরটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও স্লোভাকিয়ার সীমান্তের কাছে অবস্থিত, যার দূরত্ব প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার। সোভিয়েত আমলে নির্মিত এই পাইপলাইন একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় অবকাঠামো এবং প্রধান জ্বালানি রুট।

গত ১ জানুয়ারি ইউক্রেন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি কোম্পানি গ্যাজপ্রমের সঙ্গে তাদের পাঁচ বছরের চুক্তি শেষ হওয়ার পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর আগে, পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধের প্রথম তিন বছরসহ উভয় দেশ ট্রানজিট ফি বাবদ শত শত মিলিয়ন ইউরো আয় করেছে।

কিয়েভের থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর ইকোনমিক স্ট্র্যাটেজির সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ভলোদিমির লান্ডা বলেছেন, আমেরিকানরা ‘যা পারে তাই’ নিতে চাইছে। তাদের এই ‘ঔপনিবেশিক-ধরনের’ চাপানো দাবি কিয়েভের মেনে নেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলে তিনি মনে করেন।

গত শরতে ভলোদিমির জেলেনস্কি ইউক্রেনের স্বল্প-উন্নত খনিজ খাতে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রবেশের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি এমন একটি চুক্তির কথা ভেবেছিলেন যেখানে আগত ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করবে, যার বিনিময়ে যৌথ বিনিয়োগ থেকে ভবিষ্যতে অর্জিত মুনাফা ভাগাভাগি করা হবে।

তবে ট্রাম্প নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি বা সামরিক সহায়তা দিতে অস্বীকার করেছেন, কিন্তু তিনি খনিজ সম্পদগুলো চান। গত সপ্তাহে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, জেলেনস্কি ‘চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার’ চেষ্টা করছেন। তিনি আরও বলেছিলেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট যদি চুক্তি স্বাক্ষরে ব্যর্থ হন তবে তাঁর ‘বড় ধরনের সমস্যা’ হবে।

বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় জেলেনস্কি বলেন, তিনি তাঁর দেশকে আধুনিকীকরণের জন্য একটি চুক্তি করতে প্রস্তুত, তবে ইউক্রেন কেবল তখনই রাজি হতে পারে যদি উভয় পক্ষের মধ্যে ‘সমতা’ থাকে এবং রাজস্ব আধাআধি ভাগ করা হয়। জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি কেবল ইউক্রেনের যা কিছু আছে তা রক্ষা করছি। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেন উভয়ের জন্যই উপকারী হওয়া উচিত। এটাই সঠিক কাজ।’ মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট তথা অর্থ মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে ‘কারিগরি’ আলোচনা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত