মর্গে পাওয়া গেছে নাভালনির থেঁতলানো মরদেহ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১: ৪৮
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২: ০৮

সাইবেরিয়ার একটি হাসপাতালের মর্গে ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত রাশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনির থেঁতলানো মরদেহ পাওয়া গেছে। মৃত্যুর দুই দিন পর তাঁর মরদেহের খবর দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ।

গত শুক্রবার সাইবেরিয়ান প্রত্যন্ত অঞ্চল ইয়ামালো-নেনেতের কারাগারে বন্দী অবস্থায় মারা গেছেন নাভালনি। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ পেয়েই নাভালনির মা এবং আইনজীবী যান সেখানে। কিন্তু নাভালনির মরদেহের কাছে তাঁদের যেতে দেওয়া হয়নি। এরপরই অভিযোগ ওঠে, নাভালনিকে কীভাবে মারা হয়েছে তা যেন প্রকাশ্যে আসতে না পারে, তা ঠেকাতেই তাঁর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল কারা কর্তৃপক্ষ।

রাশিয়ায় পুতিনবিরোধী বলে পরিচিত নোভায়া গেজেটা নামক গণমাধ্যমকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্যারামেডিক বলেছেন যে, নাভালনির লাশ সালেখার্ড অঞ্চলের ক্লিনিক্যাল হাসপাতালে আনা হয়। লাশের মাথা ও বুকে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, ‘যাঁরা লাশটি নিয়ে এসেছিলেন তাঁরা বলেছেন যে এমন আঘাত খিঁচুনির কারণে হতে পারে। লোকটির খিঁচুনি শুরু হলে তাঁকে শান্ত রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। এ সময় শরীরে আঘাত লাগে। বুকেও ছিল আঘাতের দাগ। এরপর সম্ভবত হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তাঁর মৃত্যু ঘটে।’

রুশ কারা কর্মকর্তাদের মতে, গত শুক্রবার রুশ আর্কটিকের নৃশংস কারাগার হিসেবে কুখ্যাত আইকে ৩-তে কিছুক্ষণ হাঁটার পর অসুস্থ হয়ে মারা যান নাভালনি।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, এখনো ময়নাতদন্ত হয়নি। এ ছাড়া মস্কো থেকে দুটি অনির্ধারিত ফ্লাইট গত শনিবার সালেখার্ডে পৌঁছেছিল। সম্ভবত ময়নাতদন্ত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এসেছিল সেই ফ্লাইট। গণমাধ্যমকর্মীরা আরও জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে পৌঁছেছিল প্রথম বিমান। তদন্ত কমিটির গাড়িও তখন দেখা গেছে। দেড় ঘণ্টা পর পৌঁছেছে দ্বিতীয় বিমান।

রুশ পর্যবেক্ষকদের ধারণা, সরকারের পক্ষে ময়নাতদন্তের বিশেষজ্ঞ দলকে মস্কো থেকে পাঠানো হতে পারে। তারা মৃত্যু সম্পর্কে এমন একটি সনদপত্র দেবে যাতে ক্রেমলিন সন্তুষ্ট হয়। পর্যবেক্ষকেরা আরও বলেন, আইকে ৩ থেকে একজন মৃত বন্দীর লাশ পৌরসভার মর্গের পরিবর্তে হাসপাতালের মর্গে পাঠানো কিছুটা অস্বাভাবিক। আর এটাই ঘটেছে নাভালনির সঙ্গে।

অ্যালেক্সেই নাভালনির আকস্মিক মৃত্যুতে হতবাক উদারপন্থী রাশিয়ানরা। ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে যেখানে বিক্ষোভ নিষিদ্ধ সেখানেই এখন চলছে বিরল প্রতিবাদ। বিক্ষোভ হচ্ছে রাশিয়ার বাইরেও। যুক্তরাজ্যের ছায়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, নাভালনির মৃত্যুর কারণে পুতিনকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করা উচিত।

নাভালনির মৃত্যুতে পশ্চিমা বিশ্ব একযোগে পুতিন প্রশাসনকে দায়ী করলেও এখনো ক্রেমলিনের কাছ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। গতকাল মিউনিখে জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে অ্যালেক্সেই নাভালনির মৃত্যুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্পষ্টভাবে এই মৃত্যুর জন্য পুতিনকে দোষারোপ করেছেন। তবে পুতিন এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি।

রাজনৈতিক জীবনে নাভালনি পুতিনের কট্টরবিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বিশেষ করে রাশিয়ার দুর্নীতি ও শাসনব্যবস্থার কড়া সমালোচক ছিলেন তিনি। রাশিয়ায় তিনি কয়েক যুগ ধরেই বিদ্যমান সরকার ও শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলে আসছিলেন। দেশজুড়ে এ নিয়ে তিনি বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন চালিয়েছেন।

রাশিয়ার এই নেতাকে ২০২১ সালের শুরুর দিকেই গ্রেপ্তার করা হয় ২০১৪ সালে করা একটি অর্থ আত্মসাৎ মামলায়। দ্রুতই বিচারের মাধ্যমে তাঁকে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে আদালত অবমাননার অভিযোগে তাঁকে আরও ৯ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০২১ সালের আগস্টে চরমপন্থার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নাভালনিকে আরও ১৯ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত