কে এই লিজ ট্রাস

তামান্না-ই-জাহান
আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১: ১৭
Thumbnail image

মাত্র সাত বছর বয়সে স্কুলের এক সাজানো নির্বাচন আয়োজনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার হয়েছিলেন ছোট্ট লিজ ট্রাস। সেই মেয়েই আজ প্রায় ৪০ বছর পর সত্যি সত্যি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসতে যাচ্ছেন। লিজ ট্রাস বলেন, লৌহমানবী খ্যাত ব্রিটেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার এখনো তাঁর ‘আইডল’। 

বেড়ে ওঠা
পুরো নাম মেরি এলিজাবেথ ট্রাস, তবে পরিচিতি লিজ ট্রাস নামে। জন্ম ১৯৭৫ সালে, ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে। বাবা ছিলেন গণিতের অধ্যাপক। আর মা একজন নার্স, যিনি ‘বাম’ রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। 

ট্রাসের বয়স যখন মাত্র চার বছর, তখন তাঁর পরিবার গ্লাসগোর পশ্চিমে পেসলিতে বসবাস শুরু করে। পরে পরিবারটি লিডসে চলে যায়। সেখানকার একটি স্কুলে শিক্ষাজীবনের শুরু ট্রাসের। স্কুল শেষে ট্রাস অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে সুযোগ পান। সেখানে তিনি দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেন। গ্র্যাজুয়েশন শেষে তিনি হিসাবরক্ষক হিসেবে কিছুদিন কাজ করেছেন। ২০০০ সালে এক সহকর্মীকে বিয়ে করেন ট্রাস। তাঁদের দুটি সন্তান রয়েছে। 

রাজনৈতিক জীবন
শিক্ষাজীবন চলাকালেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। প্রথমে লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের হয়ে কাজ করতেন। অক্সফোর্ডে পড়ার সময়ই কনজারভেটিভ পার্টিতে যোগ দেন ট্রাস। 

২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ট্রাস ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ারের হেমসওর্থ আসনে টোরি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তবে হেরে যান। এরপর ২০০৫ সালে ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ারের ক্যালডার ভ্যালি আসন থেকেও পরাজিত হন তিনি। ২০০৬ সালে লন্ডনের গ্রিনউইচ থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন ট্রাস।  

কনজারভেটিভ দলের সাবেক প্রধান ডেভিড ক্যামেরনের ট্রাসের ওপর আস্থা ছিল। তিনিই ট্রাসকে ২০১০ সালের নির্বাচনে অগ্রাধিকার পাওয়া প্রার্থীদের তালিকায় স্থান দেন। সেবারের নির্বাচনে সাউথ ওয়েস্ট নরফোক আসন থেকে জয় পান তিনি। এমপি হওয়ার মাত্র দুই বছর পর ২০১২ সালে ট্রাস শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে সরাসরি সরকার পরিচালনায় আসেন। ২০১৪ সালে পরিবেশমন্ত্রী হন তিনি। 

ব্রেক্সিট ইস্যুতে সরব
২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে নতুন মোড় দেখা দেয়। দেশটির ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা-না ‍থাকা নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় গণভোট, যা ব্রেক্সিট নামে পরিচিত। ট্রাস শুরুতে ব্রেক্সিটের বিপক্ষে ছিলেন। তিনি ইইউর সঙ্গে থেকে যাওয়ার পক্ষে প্রচার চালিয়েছিলেন। তবে শেষমেশ অধিকাংশের মতো ট্রাসও ব্রেক্সিটের পক্ষে চলে আসেন। 

লৌহমানবী খ্যাত ব্রিটেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার লিজ ট্রাসের ‘আইডল’আরও দায়িত্ব
সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র মন্ত্রিসভায় বিচারমন্ত্রী ছিলেন ট্রাস। এরপর তিনি ট্রেজারি মন্ত্রী হন। ২০১৯ সালে বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ট্রাস। কাজের পরিসর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যায়। ২০২১ সালে যুক্তরাজ্য সরকারের অন্যতম শীর্ষ পদ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ট্রাস। 

ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার সমালোচক 
গত ফেব্রুয়ারিতে রুশ বাহিনী ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করলে প্রথম থেকেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন ট্রাস। যুক্তরাজ্য থেকে যাঁরা রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ইউক্রেন যেতে চেয়েছিলেন, ট্রাস তাঁদের সমর্থন করেন। 

ভোটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাককে পরাজিত করেনপ্রধানমন্ত্রীর দৌড়
একাধিক কেলেঙ্কারি ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের একযোগে পদত্যাগের পরিপ্রেক্ষিতে গত জুলাইয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। যুক্তরাজ্যে কোনো প্রধানমন্ত্রী তাঁর মেয়াদকালের মধ্যে পদত্যাগ ঘোষণা করলে সাধারণ নির্বাচন ডাকা হয় না। ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা নতুন নেতা বেছে নেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে কনজারভেটিভ দলের নতুন প্রধান নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ভোটার ছিলেন কনজারভেটিভ দলের প্রায় ২ লাখ টোরি সদস্য। ভোটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ট্রাস সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাককে পরাজিত করেন। সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে লিজ ট্রাসের জয় ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে মার্গারেট থ্যাচার ও থেরেসা মে’র পর তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন ৪৭ বছর বয়সী লিজ ট্রাস।

আজ মঙ্গলবার বালমোরাল ক্যাসেলে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে নিযুক্ত হওয়ার পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অভিষিক্ত হবেন ট্রাস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত