Ajker Patrika

রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট নিরসনে শান্তি আলোচনার উদ্যোগ চীন-তুরস্কের

আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৪, ১২: ১২
রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট নিরসনে শান্তি আলোচনার উদ্যোগ চীন-তুরস্কের

রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট নিরসনে এর আগেও একাধিক শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু কোনোটাই সফলতার মুখ দেখেনি। এবার আবারও পৃথকভাবে শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে চীন, সুইজারল্যান্ড ও তুরস্ক। বার্তা সংস্থা এএফপি ও হংকংভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের পৃথক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

গতকাল শুক্রবার ইস্তাম্বুলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। এই সাক্ষাতের পর এরদোয়ান জানান, তাঁর দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেনকে নিয়ে একটি শান্তি আলোচনা চালাতে প্রস্তুত। তুরস্কের এই অবস্থান অবশ্য নতুন নয়। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে। 

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে এরদোয়ান বলেন, ‘আমরা একটি শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করতে প্রস্তুত, যেখানে রাশিয়াও উপস্থিত থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইউক্রেনের সঙ্গে আমাদের সংহতি অব্যাহত রাখব। তবে আমরা আলোচনার ভিত্তিতে একটি ন্যায়সংগত শান্তির সঙ্গে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে কাজ চালিয়ে যাব।’ 

এদিকে, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে প্রতিবেদনে একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধ নিরসনে সুইজারল্যান্ডের মধ্যস্থতায় একটি শান্তি আলোচনায় রাশিয়াকে আমন্ত্রণ জানানোর ব্যাপারে ভাবছে বেইজিং-বার্ন। বিষয়টি নিয়ে চীন ও সুইজারল্যান্ড পর্দার অন্তরালে কাজ করে যাচ্ছে। 

গত মাসে সুইজারল্যান্ড আগামী গ্রীষ্মের আগেই একটি শান্তি আলোচনা আয়োজনের ঘোষণা দেয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সূত্রটি জানিয়েছে, তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো নির্দিষ্ট দিন-তারিখ জানানো হয়নি। এমনকি আলোচনায় কোন কোন দেশ অংশগ্রহণ করতে পারে, সে বিষয়টিও নির্ধারণ করা হয়নি। 

চীনের ইউরো-এশিয়া অঞ্চলের জন্য নিয়োজিত বিশেষ দূত লি হুই ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের বলেছেন, ‘এই শীর্ষ সম্মেলনটি এমন কোনো সম্মেলন হওয়া উচিত নয়, যেখানে এমন একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হবে, যা জোর করে রুশদের গিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।’ 

সূত্রটি সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে সূত্রটি আরও জানিয়েছে, চীন ও সুইজারল্যান্ড উভয়ই একটি ‘বাস্তববাদী’ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেছে। উভয় দেশই মনে করে, এই আলোচনা কেবল একটি আনুষ্ঠানিক আলোচনা হওয়া উচিত নয়। উভয় দেশই চায় এখান থেকে কিছু ফল বের হয়ে আসুক। 

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট নিরসনের বিষয়টি নিয়ে আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে বলেন, ‘যত দ্রুত আলোচনা শুরু হবে, শান্তিও তত দ্রুতই ফিরে আসবে।’ এ সময় তিনি সতর্ক করে বলে, শান্তি আলোচনার অনুপস্থিতি এই সংকটকে আরও বড় সংকটে পরিণত করতে পারে। 

তবে ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি কোনো আলোচনায় বসতে অস্বীকার করেছে। দেশটি রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসার জন্য একগাদা শর্ত আরোপ করেছে। কিয়েভের দাবি, কেবল শর্ত মানলেই তারা রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসবে। 

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনা কেবল ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোর নির্ধারণ করা শর্তের ভিত্তিতেই হতে পারে। এ সময় তিনি সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সম্ভাব্য শান্তি আলোচনার বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে তিনি এই সম্মেলনে রাশিয়ার অংশগ্রহণের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন। 

সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার অংশগ্রহণের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে জেলনস্কি বলেছেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি না, কীভাবে আমরা এমন একদল লোককে আমন্ত্রণ জানাতে পারি—যারা সবকিছুকে আটকে রাখে, ধ্বংস করে ও হত্যা করে। আমরা ইতিবাচক ফলাফল পেতে চাই।’ 

এর আগে চীন ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট নিরসনে ১২ দফা শান্তি প্রস্তাব উত্থাপন করে। তবে ইউক্রেন সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত